Sundarban Haunted Aleya: দূরে যেন একটা আলো! সুন্দরবনে ‘তেনাদের’ আলোর ফাঁদে পড়লেই অকালে যাবে প্রাণ

রাখী পোদ্দার, কলকাতা : এই পৃথিবী আপাত দৃষ্টিতে দেখতে যতটা সুন্দর, ঠিক ততটাই রহস্য লুকিয়ে আছে এই ধরাধামের আনাচেকানাচে। তেমনই এক রহস্য নিজ বুকে নিয়ে বহু বছর ধরে বেঁচে রয়েছে সুন্দরবন ( Sundarban) জঙ্গল। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্তর্গত সুন্দরবন নামটির সঙ্গে সকলেই পরিচিত। এই সুন্দরবনই হল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এমনিতেই এই সুন্দরবন হল অত্যন্ত রহস্যময় এক জায়গা। পশ্চিমবঙ্গের ভুতুড়ে স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হল এই অরণ্য। লোকমুখে প্রচলিত, এই অরণ্যেই নাকি মাঝে মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় এক রহস্যময় আলো। এই আলো এতটাই মায়াবী যে, যেকোনও মানুষ এই আলো দেখলে হয়ে যেতে পারে বশীভূত। এমনকী এর ফলে ঘটতে পারে আপনার মৃত্যুও। আর এই রহস্যময় আলোই পরিচিত আলেয়া নামে। সুন্দরবনের আলেয়া ( Sundarban Aleya)।
স্থানীয়দের মতে, সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে মাঝে মধ্যেই দেখতে পাওয়া যায় এই রহস্যময় আলেয়া। যা নিজের শিকার হিসেবে বেঁচে নেয় সেখানকারই স্থানীয় জেলেদের। কোনও পর্যটকদের এখনও পর্যন্ত শিকার হতে হয়নি এর। কারণ কোনও পর্যটকই রাতের অন্ধকারে যায় না এই গভীর অরণ্যে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই আলো এতটাই মায়াবী যে একে দেখলে যেকোনও সাধারণ মানুষের বুদ্ধি কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়। আর মানুষ যখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো এই আলোকে অনুসরণ করে এগিয়ে গেলেই নাকি আলেয়ার ( Aleya) প্রকোপে মৃত্যু হবে আপনারও। যারাই এই আলেয়াকে অনুসরণ করে একবার গিয়েছে গভীর অরণ্যে তাঁর মৃত্যু অনিবার্য। জলে ডুবে মৃত্যু হয় তাঁদের।

স্থানীয়রা এক্ষেত্রে বিশ্বাস করেন এক পুরোনো কাহিনীতে। তাঁদের বিশ্বাস, বহু বছর আগে সুন্দরবনে শ্রুতঞ্জয় নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁর একমাত্র পুত্র আলঞ্জয়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ একজন মানুষ। নিজের কর্মগুণে সকলের প্রিয় পাত্র ছিলেন। ভালোবেসে সকলে তাঁকে ডাকত আলেয়া বলে। আলঞ্জয়ের রাজ্যাভিষেকের সময় হলে রাজপরিবারের নিয়ম মেনে তাকে যেতে হয় শিকারে। আর শিকারের শর্ত হিসাবে ছিল সুন্দরবনের বিখ্যাত রয়্যাল বেঙ্গল বাঘ শিকার করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা। নিয়ম মতন অঞ্জয় তাঁর পিতা এবং দলবলকে সঙ্গে নিয়ে শিকারের উদ্দ্যেশে রওনা দেয়। একদিন জ্যোৎস্নার আলোয় আলঞ্জয় এক বাঘিনীকে তার শাবকের সাথে জল পান করতে দেখলে তাদের আক্রমণ করে মেরে ফেলে আলঞ্জয়। পরের দিন ফেরার সময় অপর এক বাঘিনী ও তার শাবককে একত্রে জল পান করতে দেখলে আলঞ্জয় তাদের শিকার করতে অগ্রসর হলে এইবার বাঘিনীর কবলে পড়ে আলঞ্জয় তাঁর প্রান হারায়।

স্থানীয়দের বিশ্বাস, ঐ ঘটনার পর থেকেই আলঞ্জয়ের অতৃপ্ত আত্মাই সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং নিজের শিকার খোঁজে। আর তাই সুন্দরবনে দেখতে পাওয়া এই উক্ত আলো আলঞ্জয়ের নামানুসারে আলেয়া ( Aleya) নামেই পরিচিত হয়। যদিও অনেকে মনে করেন আলেয়া মোটেও খারাপ কিছু নয়। বরং আলঞ্জয়ের পবিত্র আত্মা আলো বেশে সাবধান করে সবাইকে। যে সামনে নিশ্চয়ই কোনও বিপদ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। আর যারা সেই সাবধান বানী না মেনে এগিয়ে গেছে সামনের দিকে তাঁদেরকেই দিতে হয়েছে তাঁদের জীবন। যদিও এই বিষয় সম্পূর্ণ ভাবে মানতে নারাজ বিজ্ঞানী মহল। তাঁদের মতে আলেয়া কোনও ভৌতিক আলো নয়। আলেয়া জন্ম হয় বিভিন্ন গ্যাসের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে। মূলত সুন্দরবনের ( Sundarban) মতো নীচু জলাভূমিতে মিথেন গ্যাসের ফলে সৃষ্টি হয় এই আলোর। যদিও এর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিক কিছু নেই বলেই দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। তবে তা মেনে নিতে রাজি নন এখানকার স্থানীয়রা।