“রক্তপানের” মাধ্যমেই ভ্রাতৃত্বের শপথ, এমনই রীতি তাঁদের
পশ্চিম ইউরোপের মানুষদের মধ্যে আজও একটি বিশ্বাস মনের কোণে বেঁচে রয়েছে। তা হল, বিবাহ বন্ধনের চেয়ে অনেক বেশি দৃঢ় ভাতৃত্বের বন্ধন। তবে এই ভ্রাতৃত্ব যে সব সময় জন্মসূত্রে হতে হবে এরকম কোনো কথা নেই। পৃথক বাবা-মা-এর দুই সন্তানও একে অপরকে ভাই বলে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারে। আর সত্যি বলতে, ইতিহাস ও লোককথায় এমন ভাতৃত্বের অনেক কাহিনীই আছে। আর এই থেকেই জন্ম নিয়েছিল পৃথিবীর এক প্রাচীন প্রথা। এমন কিছু আচার-রীতি যা দুই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বেঁধে দেয়। এই প্রথার নাম ‘ব্লাড ব্রাদারহুড’ (Blood Brother)। তবে ঠিক কবে বা কীভাবেই এই প্রথার সূত্রপাত এই নিয়ে বেশ তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। তবে বলা যেতে পারে, বিবাহ প্রথার চেয়ে এর বয়স কিছু কম নয়। সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান দিয়ে এসেছে মানুষ।
ঐতিহাসিকবিদদের মতে, পশ্চিম ইউরপের খ্রিস্টীয় সমাজে ব্লাড ব্রাদার রীতি এসেছে যাযাবর ভাইকিং উপজাতির থেকে। এই প্রথা অনুসারে, দুই পুরুষ তাঁদের হাতের তালুতে ছুরি দিয়ে ক্ষত করেন। তারপর রক্ত বেরোতে থাকা অবস্থায় দুজন হাত মেলান। কখনও বা কিছুক্ষণের জন্য দুজনের হাত সাদা রুমাল দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। মনে করা হয়, এভাবেই একজনের রক্ত অন্যজনের শরীরে মিশে যায়। আর এই ভাবেই শুরু হয় রক্তের সম্পর্ক। পশ্চিম ইউরোপের মতোই নানা অঞ্ছলে এই রক্তের সম্পর্ক তৈরির জন্য রয়েছে নানাবিঁধ প্রকল্প বা প্রক্রিয়া। যেমন, মঙ্গোলিয়া ও চৈনিকদের রীতি ছিল “রক্তপান” করার। একটি পাত্রে দুজনের রক্ত রেখে তার সঙ্গে মাদক মিশিয়ে পান করার মধ্যে দিয়েই গড়ে উঠতো রক্তের সম্পর্ক। মঙ্গোলিয়া ও চৈনিকদের মতো একই রীতি অবলম্বন করতো আফ্রিকানরাও। তবে তাঁরা মূলত আত্মীয়তা তৈরির জন্য এই রীতি পালন করতো।
আরও পড়ুন…..Monster Building : সিনেমা নয় বাস্তবেই ‘দৈত্য’, যেখানে একসাথে থাকে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ
উল্লেখ্য, উপজাতি সম্প্রদায়ের থেকে যে এই ব্লাড ব্রাদার প্রথার উৎপত্তি, তা মানতে নাকচ করেন বহু ঐতিহাসিকবিদ। আর তার প্রমাণ হিসেবে তাঁরা তুলে ধরেন বাইজানটাইন সাম্রাজ্যে বহুল প্রচলিত ব্লাড ব্রাদারহুড প্রথাকে। এক্ষেত্রেও দুই পুরুষের হাতের ক্ষতস্থান একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হত। বাইজানটাইন গির্জার বক্তব্য, বিবাহের চেয়েও পবিত্র বন্ধন এই ব্লাড ব্রাদার। অনেকের আবার এই প্রথার সঙ্গে সমকামিতার সম্ভবনার কথাও তুলে ধরেন। বিশেষ করে উঠে আসে হোমার কথিত স্পার্টা দ্বীপের কথা। যেখানে বিবাহ এক প্রকার নিষিদ্ধই ছিল। অথচ ব্লাড ব্রাদার সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বাধা ছিল না। স্পার্টা থেকে এই প্রথা ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রিসের সেনাবাহিনীতেও। মধ্যযুগ পর্যন্ত গ্রিসের সেনাবাহিনীর সমস্ত সদস্যরা একেঅপরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের শপথ নিতেন। আর এই রীতির মধ্যে ছিল নগ্নতাও। ফলে ব্লাড ব্রাদার সম্পর্ক সার্বিক সমকামীতার স্বীকৃতি না পেলেও, এর মধ্যে দিয়ে যে সমকামী সম্পর্ক একপ্রকার জায়গা তৈরি করে নিয়েছিল।