Garhbeta Gangani: রাত নামতেই অশরীর ডাক! রহস্যময়ী রূপ বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের

রাখী পোদ্দার, কলকাতা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্ৰ্যান্ড ক্যানিয়নের নাম তো আমাদের কারও অজানা নয়। তবে আপনি কী জানেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতোই একটি গ্ৰ্যান্ড ক্যানিয়ন রয়েছে আমাদের বাংলার বুকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ( West Midnapore) গড়বেতারের কাছে অবস্থিত এই গনগনি। ৭০ ফুট গভীর এই গিরিখাতকে অনায়াসেই তুলনা করা চলে গ্ৰ্যান্ড ক্যানিয়নের সঙ্গে। নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে শিলাবতী নদী। অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারীনি এই গনগনি ( Garhbeta Gangani)। প্রকৃতি যেন এখানে শিল্পী। যে নিজ হাতে পরম যত্নে গড়ে তুলেছে এই গনগনি। বহু পর্যটকই কাজের ফাঁকে এখানে চলে আসেন ঘুরতে। পর্যটকদের যাতায়াত বাড়ায় গনগনিকে পর্যটন কেন্দ্রের রুপ দিতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য পর্যটন দপ্তর। তবে অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা এই গনগনি ( Garhbeta Gangani) যেন রাতের অন্ধকারে হয়ে ওঠে মোহময়ী। তার সেই সৌন্দর্য যেন নিশির আঁধার গায়ে মেখে হয়ে ওঠে রহস্যময়ী। দিনের আলোয় যেই গনগনি থেকে পর্যটকরা তাঁদের নজরই সরাতে হয়ে ওঠে অক্ষম। সেই গনগনিতেই রাতের অন্ধকারে পা বাড়াতে গা শিউরে ওঠে সেখানকার মানুষদের।
নিসর্গের নিরিখে এই এলাকাকে বলা হয় ‘বাংলার গ্ৰ্যান্ড ক্যানিয়ন’( Bengal’s Grand Canyon)। প্রায় সারা বছরই রুক্ষ শুষ্ক হয়ে থাকে এই গনগনি। তবে বর্ষাকালে ফুলে ফেঁপে ওঠে এর চারপাশ। তখন ধরা পড়ে এর ভয়াল রুদ্র রূপ। বর্ষায় ফুলে ফেঁপে ওঠা নদীর জলধারা এসে পড়ে তীরে। এরফলে বর্ষায় প্রবল ভূমিক্ষয় হয় এখানে। আর সেই ভূমিক্ষয় থেকেই এখানে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন টিলা, খাত প্রভৃতি। এর মধ্যেই আবার দেখা মেলে বিভিন্ন রঙের খেলা। কোথাও সাদা কোথাও আবার লালচে রঙের খেলা দেখা যায় এখানে। কোনও কোনও অংশ দেখে মনে হয় যেন মন্দির আবার কোনও কোনও অংশ নিয়েছে মনুষ্য আকৃতি। এমন অপরূপ স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এক্কেবারে আদর্শ একটি স্থান। এছাড়াও ভূগোলের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন গবেষকরা এখানে আসেন গবেষণার কাজে।

তবে এই গনগনির সৃষ্টি নিয়ে লোকমুখে প্রচলিত আছে ইতিহাসের এক কাহিনী। এখানকার লোকমুখে প্রচলিত পান্ডু পুত্র ভীম আর বকাসুর রাক্ষসের কাহিনী। তাঁদের মতে, অজ্ঞাতবাসে থাকার সময় পান্ডবরা এই অঞ্চলে ছিলেন কিছুদিন। সেই সময় এখানে দাপট ছিল নাকি বকাসুর নামক এক রাক্ষসের। প্রতিদিন একজন গ্ৰামবাসীকে তাঁর কাছে ভক্ষণের জন্য পাঠাতে হত। আর যদি এর অন্যথায হত তাহলে বকাসুরের রাগের প্রকোপে পরতে হত এদের। অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন পান্ডবরা গনগনিতে যার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁদের পরিবার থেকে উৎসর্গ করার সময় এলে মাতা কুন্তীর আদেশে ভীম সেই পরিবারের সদস্য হিসেবে সেখানে যান।

এরপর শুরু হয় সেখানে প্রবল যুদ্ধ। যদিও সেই যুদ্ধে ভীমের হাতে পরাস্ত হতে হয় বকাসুরকে। মনে করা হয় ভীম আর বকাসুরের সেই প্রবল যুদ্ধের ফলেই নাকি তৈরি হয়েছে এই গনগনি ( Garhbeta Gangani)। তবে পর্যটকদের কাছে এত পছন্দের একটি জায়গা হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই স্থানে রাতের অন্ধকারে না যাওয়াই ভালো। কারণ রাতের অন্ধকার গায়ে মেখে এখানে নেমে আসে অতৃপ্ত আত্মারা। এমনকী এই সুন্দর এলাকায় রাতের বেলা মানুষজন পা ভয় পায় পা বাড়াতেও। রাত নামতেই স্থানীয় বাসিন্দারাও এড়িয়ে চলেন এই স্থান।