যখন তীব্র সমালোচনার জেরে বাজার থেকে বই তুলে নিতে হয়েছিল স্বয়ং কবিগুরুকেও!
অনেকেই বই ছাপায় জনপ্রিয়তার আশায়। কখনো কখনো সেই বই মানুষের ভাল লাগে আবার কখনো লাগে না। এমনও হয় যখন বিশেষ কোনো কারণে কিছু বই মানুষের বিরাগভাজন হয়। মানুষের অসন্তোষ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যখন বইটিকে বাজার থেকে তুলে নিতে হয়। বাংলাতেও এমন ঘটনা বহুবার হয়েছে। কিন্তু এটা জানলে অনেকেই অবাক হবেন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকেও সমালোচনার জেরে নিজের সম্পাদিত একটি বই বাজার থেকে ফেরত নিতে হয়েছিল। এমনকি তাঁকে সজনপোষন এবং পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও সইতে হয়েছিল।
১৯৩৮ সালে কবিগুরু একটি কবিতার বই সম্পাদনার কথা ভাবলেন। ‘বাংলা কাব্য পরিচয়’ নামে একটি কাব্য সংকলন তাঁর সম্পাদনায় সেই মত প্রকাশিতও হল। কিন্তু সমস্যা দেখা গেল কবিগুরুর কবিতা চয়ন নিয়ে। অনেকেরই এমনটা মনে হল কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সেই সময়ের রবীন্দ্র পরবর্তী নবীন ও প্রতিভাবান কবিদের কবিতা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছেন গুরুদেব। এমনকি তখনকার বিখ্যাত কবির আধুনিক কবিতা না ছেপে তার ছেলেবেলায় লেখা কবিতা ছাপা হয়েছে এমন অভিযোগও ওঠে। তাছাড়াও কবিতা সাজানোয় সময়ক্রমের খেয়াল রাখা হয়নি এমনটাও মনে করেছিলেন অনেকে।
তবে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন কবি বুদ্ধদেব বসু। বিশ্বকবির এ নিয়ে বক্তব্য ছিল ,’আমি বাংলা কবিতাকে ইতিহাসের গন্ডিতে আটকে রাখতে চাই নি।’ তবে তাতে সমালোচনা বন্ধ হয়নি। বাতাসে এই সংকলন নিয়ে বিতর্ক এতটাই ছড়ায় যে বইটি আর বাজারে ছাড়া হয়নি। প্রকাশনাও বন্ধ হয়ে যায়। তবে সমালোচনার পেছনে পর্যাপ্ত কারণ ছিল। মূলত তিনি বেশিরভাগ কাজটি কর্মচারীদের ওপর ছেড়ে দেন। উত্তরন্তু সেই সময়ের বিখ্যাত কবি বিষ্ণু দে, অতুলপ্রসাদ সেনের কবিতা ছাপা হয়নি। জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতা ছাপা হয় তাও কাটছাট করে। রসের কবিতা না ছাপিয়ে প্রাচীন কবিতাই বেশি ছাপা হয়। তৎকালীন বেশিরভাগ মানুষই সংকলন গ্রন্থটিকে নিকৃষ্ট বলেছিলেন। পরবর্তীকালে শঙ্খ ঘোষ এই সংকলনকে ‘রবীন্দ্রনাথের সাময়িক রুচিহীনতার প্রমাণ’ বলেও উল্লেখ করেন।