কেন ৫ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে পালিত হয় শিক্ষক দিবস ? ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য

ওয়েব ডেস্ক:  আগামী ৫ সেপ্টেম্বর, প্রতিবছরের মতন এইবছরও পালিত হতে চলেছে জাতীয় শিক্ষক দিবস। ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৬২ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে শিক্ষক দিবস। ছাত্রজীবনে শিক্ষকের অবদান কে স্মরণ করে প্রতি বছর ৫ আগস্ট দেশ জুড়ে নিজেদের শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে পড়ুয়ারা।

রাধাকৃষ্ণাণের জন্মদিনের তারিখ নিয়ে যদিও মতভেদ রয়েছে। প্রকৃত দিনটি সম্ভবত ১৮৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু জন্ম শংসাপত্রের জন্ম তারিখটিই সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছে। সেটি হল ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। অধুনা তামিলনাড়ুর তিরুভাল্লু জেলার টিউটটানি শহরে জন্মগ্রহণ করেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ। সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণাণের বাবা স্থানীয় এক জমিদারের অধীনে স্বল্প বেতনের এক কর্মচারী ছিলেন। আটজনের সংসারে দিন আনা দিন খাওয়ার মতো অবস্থা ছিল তাঁদের। তবে পরিবারের আর্থিক অবস্থা কখনোই রাধাকৃষ্ণাণের পড়াশোনায় মূল বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

National Education Policy 2020,Teacher's Day in India,Dr. Sarvepalli Radhakrishnan,Teacher's Day National honours. রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি ২০২০,ভারতে শিক্ষক দিবস,ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন,শিক্ষার খবর,২০২১ শিক্ষক দিবস,বাংলা খবর

ছোটবেলাই থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী হওয়ার দরুন জীবনের সিংহভাগ পড়াশোনা করেছেন সরকারি স্কলারশিপের টাকায়। মাত্র ১৭ বছর বয়সে মাদ্রাজ ক্রিস্টিয়ান কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক করার দু’বছর পর সেখান থেকেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রীও অর্জন করেন তিনি। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ১৯০৬ সালে মাদ্রাস প্রেসিডেন্সি কলেজের দর্শন বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন রাধাকৃষ্ণাণ। তারপর ১৯১৮ সালে মহীশূর মহারাজার কলেজে দর্শন বিভাগে প্রফেসর হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। তিন বছর পর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম জর্জ অধ্যাপকরূপে যোগদান করেন রাধাকৃষ্ণাণ। এটি ছিল ভারতের সর্বোচ্চ সম্মানীয় অধ্যাপকের পদ। এই সময় সাইমন কমিশনের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা প্রতিবাদ মিছিল বের করলে উপাচার্যকে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হতে হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন রাধাকৃষ্ণাণ। এরপর ছাত্রদের সরকরি অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় তাদের পাশে এসে দাঁড়ান এই অধ্যাপক।

এরপর ১৯৩১ সালের ১ মে অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে যোগ দেন। ১৯৩৯ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে যোগ দেওয়ার পর ১৯৪৮ সালে পদত্যাগ করেন রাধাকৃষ্ণাণ। তারপর সদ্য গঠিত এডুকেশন কমিশনের দায়িত্বভার সামলান ডঃ রাধাকৃষ্ণাণ। স্বাধীন ভারতের শিক্ষার ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার প্রধান কান্ডারি হয়ে ওঠেন তিনি। প্রথাগত ভাবে আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার ভাগ হতো দুই ভাবে, একটি কলাভিত্তিক শিক্ষা এবং অন্যটি বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা। সেই সময় ডঃ রাধাকৃষ্ণাণ বুঝতে পারেন যে পাঠক্রমের এই দুইয়ের পাশাপাশি ভোকেশনাল কোর্স বা পেশাগত পাঠক্রমের উপরেও সমান জোর দেয়া উচিত। শিক্ষা কমিশন তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং কৃষি, কারিগরি এবং প্রযুক্তি বিদ্যার উপর জোড় দিয়ে পেশাগত শিক্ষার প্রসার ঘটায়। ঠিক এতটাই দুরদর্শী ছিলেন ডঃ রাধাকৃষ্ণাণ।

National Education Policy 2020,Teacher's Day in India,Dr. Sarvepalli Radhakrishnan,Teacher's Day National honours. রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি ২০২০,ভারতে শিক্ষক দিবস,ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন,শিক্ষার খবর,২০২১ শিক্ষক দিবস,বাংলা খবর

এর পর ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালের আচার্য এবং ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতির পদ অলঙ্কৃত করেছেন তিনি। তাঁর বক্তৃতা সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা বিশ্বে। একাধিক দার্শনিক গ্রন্থ রচনা করে তিনি তোলপাড় সৃষ্টি করেন পণ্ডিত মহলে। তাঁর ‘অ্যান আইডিয়ালিস্ট ভিউ অব লাইফ’ গ্রন্থটির জন্য তিনি নোবেল প্রাইজের জন্যও বিবেচিতও হয়েছিলেন।

নিজের সমস্ত জীবন শিক্ষা, প্রগতি ও মানবকল্যাণের জন্য নিবেদন করেছেন ডঃ রাধাকৃষ্ণাণ। তাই ‘জাতীয় শিক্ষক সংস্থা’ ১৯৬২ সালে তাঁর জন্মদিনটি সারা দেশজুড়ে সাড়ম্বরে উদ্যাপনের বিষয়ে উদ্যোগী হন। তিনি তখন ভারতের রাষ্ট্রপতি। কিন্তু নিজের জন্মদিন পালনে অনীহা প্রকাশ করলেন তিনি। জানালেন, তাঁর জন্মদিনটি যদি উদ্‌যাপিত করতেই হয়, তা উদ্‌যাপিত হোক শিক্ষক দিবস হিসেবে। সেই থেকে প্রতি বছর ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবেই তাঁর জন্মদিনটি পালন করা হয়।

তিনি সর্বদা বলতেন, একটি জাতির উত্থানের মাপকাঠি হল শিক্ষা। তাই হয়তো সেই সময় দাঁড়িয়ে শিক্ষায় ধর্মীয় মূল্যবোধ কে আলাদা করে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে ওনার উত্তরাধিকার কি এখন সংকটে? গতবছর, অর্থাৎ ২০২০ রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতির কথা মাথায় রেখে এই আশঙ্কাই করছে বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশ।




Back to top button