Sunil Gangopadhyay:মুখে তৃপ্তির হাসি! একালের তারকাদের মতোই সিগারেটের বিজ্ঞাপনে ধরা দিতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

নস্টালজিক বাঙালি যেখানেই থাকুক না কেন চা আর সিগারেট তার বরাবরের সঙ্গী। যেমন বাঙালির বুদ্ধির কদর করে বিশ্ব তেমনই বাঙালি কদর করে সিগারেটের। যদিও সিগারেট পাশ্চাত্যজাত তবু বাকি আদব কায়দা পোশাক পরিচ্ছদের সঙ্গে সিগারেটটাও রপ্ত করে ফেলেছে বাঙালি জনগন। সিগারেটের প্যাকেটের ওপর যতই লেখা থাক, ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর’ তবুও তার বাজার কোনদিন কমেনি এর। ফলে জন্মসময় থেকেই একটি দীর্ঘ ইতিহাস বহন করছে সিগারেট । যত দিন গেছে বরং আভিজাত্য বাড়িয়ে সকলের পকেটে পকেটে নিত্য সঙ্গী হয়ে উঠছে।
img 20220901 161748

বাঙালি আরও দুই জিনিসের প্রতি আসক্ত গোয়েন্দা ও ভ্রমণ। আর গোয়েন্দার সঙ্গে সিগারেটের যে ওতপ্রোত সম্পর্ক তা আর বলার অবকাশ রাখে না। বাঙালির সেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধি গোয়েন্দা ফেলু মিত্তিরের পছন্দের সিগারেট কি জানেন? ফেলুদার পছন্দের ব্র্যান্ড ‘চারমিনার’৷ ১৯৮১ সালে ‘নেপোলিয়ানের চিঠি’, গল্পে ফেলুদার ছবি বেরানো নিয়ে বলা হয়েছে। ‘এই সে দিনই একটা বাংলা কাগজে ফেলুদার একটা সাক্ষাত্‍কার বেরিয়েছে, তার সঙ্গে হাতে চারমিনার নিয়ে একটা ছবি৷’ এখন কথা হল এই বিশেষ ব্র্যান্ডটির প্রতি ফেলুদার আসক্তির কারণ কী? চারমিনারের বিজ্ঞাপন অনুসারে, ‘সর্বাধিক বিক্রি’-এর কারণ হতে পারে না৷ আসলে ৬০-এর দশক থেকে চারমিনারের সঙ্গে প্রচ্ছন্ন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল বুদ্ধিজীবীর তকমা৷ শক্ত-পোক্ত-চিন্তাশীল এই তিনটি তকমার সঙ্গে খাপ খাওয়াতেই ফেলুদার পছন্দের ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছিল এই সিগারেট৷

তবে আজ আমরা গোয়েন্দাগিরি করে আরও দুর্লভ একটি ব্রান্ডের সঙ্গে আপনাদের আলাপ করাতে পারি। চারমিনারের আগে যার আবির্ভাব। শিল্পী সাহিত্যিক মহলে যার ছিল অবাধ আনাগোনা। দুই বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষ্মী এই সিগারেট। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্রান্ড হয়ে উঠেছিল একসময়।১২৮ বছর বয়সী ইংল্যান্ডের বুকে জন্মানো এই সাহেবিকেতার সিগারেটের নাম ক্যাপসটান। লন্ডন থেকে পাড়ি দেয় বিভিন্ন দেশে যার মধ্যে ভারত অন্যতম। এমনকী চারমিনারের অগ্রজ এই ব্যান্ডের ইতিহাস অনেক বেশি সুপ্রসিদ্ধ। বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্যাপস্টান ছিল যোদ্ধাদের অবসর সঙ্গী। সেসময় প্রায় স্লোগান হয়ে গিয়েছিল ‘টাইমস ফর ক্যাপস্টান’ আর ‘হ্যাভ আ ক্যাপস্টান’। ব্রিটিশ তারকারা করেছিলেন এর প্রচার। ব্রিটেনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ইভিলিন লে এবং বিট্রিশ তারকা ডেভিড নিবেন। তবে এদের সঙ্গে ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক , চেনেন কে? বাঙালিদের মধ্যে এই সিগারেটের ব্রান্ডিং করেছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, তিনি আর কেউ নন। বঙ্কিম পুরস্কার প্রাপ্ত খ্যাতনামা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

এই সিগারেটের সম্বন্ধে কী লিখলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়? বললেন, “একমাত্র প্লেন সিগারেট খেয়েই আমি পুরো তৃপ্তি পাই। আর এক্ষেত্রে ক্যাপস্টান প্লেন সিগারেটই সবার সেরা। এর কারণ ক্যাপস্টানের অপূর্ব স্বাদ গন্ধ।” একটি ছবি দিয়ে এই বিজ্ঞপ্তি ছেপেছিল ব্রিটিশ ক্যাপস্টান কোম্পানি। “তৃপ্ত স্বাদে ভরা, গন্ধে মনোহরা” বাংলায় এই দুই লাইন ব্যবহার করত ক্যাপস্টান কোম্পানি। তবে চারমিনারের প্রাদুর্ভাবে ধীরে ধীরে বাজার হারায় এই ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন কোম্পানি। বিজ্ঞাপনের ইতিহাসে বাংলায় রয়ে গেছে এই দুর্লভ ছবি, ব্রিটেন কোম্পানিতে বাঙালি সাহিত্যিকের করা বিজ্ঞাপন।




Back to top button