Year Ender 2021: ফেলে আসা কিছু স্মৃতি, কিছু মন খারাপ, চলতি বছরে বিদায় নিলেন যাঁরা

“সময় চলিয়া যায়, নদীর স্রোতের প্রায়”- দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও একটা বছর। আজ চলতি বছরের ৩৪৪তম দিন, পড়ে রয়েছে হাতে গোনা আর কয়েকটা দিনই। তারপর সমাপ্তি আরও এক বছরের এবং সূত্রপাত এক নতুন বছরের। গত বছরই ঠিক এই সময় মানুষ হয়ে পড়েছিল বেশ আশাবাদী। একটা গোটা বছর ধরে করোনার জেরে যখন সবাই ঘর বন্দী, নিঃশ্বাস প্রায় আটকে আসছে বললেই চলে, এমতাবস্থায় নতুন বছর(২০২১) নিয়ে ভারতবাসী হয়ে উঠেছে বেশ আশাবাদী। মাথায় চিন্তা একটাই হয়তো নতুন বছর নিয়ে আসবে একটা নতুন রূপ, হয়তো শেষ হবে মহামারি, হয়তো আবার সবাই খুলে দিতে পারবো মনের জানলা। কিন্তু এত আশা-প্রত্যাশা কি পূরণ করেছে ২০২১? নাকি শুধুই বাড়িয়েছে কেড়ে নেওয়ার তালিকা?
গত বছর মহামারি থেকে শুরু করে নানা বিপর্যয়ের জেরে স্বজন হারিয়েছেন বহু। এই হারানোর তালিকায় বহু ক্ষেত্রেই দেখা গেছে বহু বিশিষ্টকে। কিছু স্মৃতি, কিছু মন খারাপ মিলে মিশে কেটেছে গোটা বছর, জেনে নিন চলতি হারালাম যাঁদের-
নূরে আলম চৌধুরী, কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাণীবিকাশ মন্ত্রী। এছাড়াও, ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মুরারই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি তিনি প্রয়াত হন। পাশাপাশি, এই বছরই প্রখ্যাত ভারতীয় চিনাতত্ববিদ এবং কলকাতার ঠাকুর পরিবারের অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ ঘটে। তাঁর মৃত্যুতে এক শোকের ছায়া নেমে পড়ে বাংলার বুকে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ই এপ্রিল ভারত হারায় এক বিখ্যাত লেখক ও নাট্যকার পি বালচন্দ্রনকে। মালায়লাম সাহিত্য ও চলচিত্রে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়। একজন লেখকের পাশাপাশি, অসাধারণ নাট্যকার, পরিচালক ও অভিনেতা ছিলেন তিনি। একইসঙ্গে, সেই মাসেই ২১ তারিখ করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বাঙালির রত্ন, খ্যাতনামা কবি শঙ্খ ঘোষের। বাংলা সাহিত্যের প্রতি বা বলা চলে বাঙালির প্রতি তাঁর অবদান ‘ভুলিবার নহে’। বাঙালির ইতিহাস তথা বাংলার ইতিহাসের পাতায় তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল। কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুর ব্যাথা ভোলাতে পারেনি বাঙালি, এমতাবস্থায় মৃত্যুর খবর আসে বাংলা সাহিত্যের আরেক খ্যাতনামার। ২৮-এ এপ্রিল মৃত্যু হয় বাংলা সাহিত্যের রহস্য রোমাঞ্চ ও জনপ্রিয় কল্পবিজ্ঞান লেখক অনীশ দেবের। সাহিত্য জীবন ঘিরে একাধিক গ্রন্থ, একাধিক পুরস্কার, বাঙালির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে তাঁর নাম।
চলতি বছরে আমরা হারিয়েছি বহু মানুষ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেখেছি মৃত্যুর নদী, হাসপাতালে অক্সিজেন না পেয়ে মৃত্যুর জ্বালায় ছটফট করতে দেখেছি বহু মানুষকে। সমাজের এই সত্যিটাকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন এমনই কিছু ব্যাক্তির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বছরের মে মাসের ১৬ তারিখ মৃত্যু হয় তাঁর। একজন বরিষ্ঠ সাংবাদিক হিসাবে তাঁকে চেনেন না এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। বাংলার সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় নামটি কখনই ভুলবার নয়। কবি শঙ্খ ঘোষ, অনীশ দেব, সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ব্যাথা ভুলতে পারেনি বাঙালি, এমতাবস্থায় খবর আসে মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় বাঙালি কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের। ২০২১ সালের ১০ই জুন মৃত্যু হয় তাঁর, একজন দুর্দান্ত কবি ও চলচিত্র নির্মাতা হিসেবে পরিচিত তিনি। তাঁর লেখা পড়ে বড় হয়েছি আমরা সকলেই। আকাশছোঁয়া সফলতা ও একাধিক পুরস্কারে ঘেরা তাঁর জীবন। বাংলার মাটিতে কিংবা বলা চলে ভারতের মাটিতে তাঁর নাম চিরকালই অমর হয়ে থাকবে।
ভারতীয় চলচিত্রের কথা উঠতেই একজনের নাম বারংবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। কেউ চাইলেও হয়তো সেই নামকে বা বলা চলে সেই ব্যাক্তিকে কখনো রুখে দিতে পারবে না। ভারতীয় সিনেমাজগতের মতোই তাঁর নাম চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে। বলিউডের প্রথম “খান” বা বলা চলে মহম্মদ ইউসুফ খান ওরফে দিলীপ কুমার। ২০২১ সালের ৭ই জুলাই মৃত্যু হয় তাঁর। ভারতীয় চলচিত্রের এক রত্ন তিনি। তাঁর মৃত্যু আপাতত ভারত “রত্নহীন”। ভারতীয় চলচিত্রে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। উল্লেখ্য, এই গোটা মহামারি পর্বে দেখা গিয়েছিল মৃত্যু মিছিল। আর এই মৃত্যু মিছিলে বাঙালি হারিয়েছে তাঁর বহু অমূল্য রত্নকে। গত ২৯ আগস্ট করোনার প্রকোপে পড়ে মৃত্যু হয় বুদ্ধদেব গুহের। প্রখ্যাত ভারতীয় সাহিত্যিক, প্রকৃতি প্রেমী তিনি। তাঁর মূল রচনার ভিত্তিও ছিল অরণ্য, বন এবং প্রকৃতি। ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্বআফ্রিকা তার হাতের তালুর মতো পরিচিত। নিজের গোটা জীবনকে প্রকৃতির কাছে সমর্পণ করেন। প্রকৃতি মাধুর্য ও সৌন্দর্যে হারিয়ে গিয়ে নিজের সাহিত্যকে ফুটিয়ে তোলেন।
আরও পড়ুন…..CDS Bipin Rawat: ভারতের বক্ষ জুড়ে স্বর্ণাক্ষরে থাকবে তাঁর নাম, ফিরে দেখা সেই প্রতিটি বিজয়ী মুহূর্ত
এই হারানোর তালিকায় কয়েকদিন আগেই যুক্ত হল আরও একটি নাম। এই দেশ যার কৃতিত্ব ভুলবে না কোনোদিনই, তিনি সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত। একজন সামরিক পন্ডিত ও এই দেশের সামরিক ব্যবস্থার অভিভাবক। চলতি বছরের ৮ই ডিসেম্বর মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তাঁর। একটি বায়ু সেনার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিজের স্ত্রী ও আরও কয়েকজন স্টাফ সহ মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত গোটা দেশ। এই রাষ্ট্রের প্রতি তাঁর অবদান কখনোই যাবে না শোধ করা।
আরও পড়ুন….স্মৃতির পাতায় ঠাঁই হয়েছে একাধিক নেতার, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর যাদের হারাল তৃণমূল
“মনে হয়, অজস্র মৃত্যুরে পার হয়ে আসিলাম, আজি এই নবপ্রভাতের শিখড় চুড়ায়”-শেষের কবিতার সেই লাইনগুলির মতো যেন অজস্র মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে পরবর্তী বছরের দিকে আমাদের গমন, কিছুটা মন খারাপ এবং কিছুটা স্মৃতি মিলেমিশে একাকার। অজস্র মানুষকে হারিয়ে আজ যেন স্মৃতির পাতাগুলো পূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রয়োজন নেই আর এই মৃত্যু মিছিলের, কিন্তু বাস্তবতা কি কোনোভাবে মেনে নিতে পারবে এই নিস্পাপ দাবি? মোটেই নয়, কারণ, “জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে, চিরস্থির কবে নীর, হায় রে, জীবন-নদে?”