Gangasagar Mela : “সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর এক বার”, জানেন কি এই গঙ্গাসাগর মেলার ইতিহাস
অহেলিকা দও, কলকাতা: দাবানলের মতো করোনার ( corona ) তৃতীয় ঢেউ ছড়ানোর মূহুর্তেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা(Gangasagar Mela )। ইতিমধ্যে এই মেলার উদ্বোধনও(Inauguration ) হয়ে গিয়েছে। সরকার জানিয়েছে, করোনা বিধি(Corona rules ) মেনেই সমস্ত অনুষ্ঠান আয়োজিত(Organized ) হয়েছে এই মেলা। কিন্তু করোনা বিধি মানার কোনো লক্ষণই নেই। আসলে সকলেই গঙ্গাসাগরের সুদ্ধ স্নান(Bathing) অনুভব করতে চায়। গঙ্গাসাগরের স্নান করলে নাকি সব পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেখানে সকলের মুখের বানী(Bani) “সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর এক বার”। তবে এই গঙ্গাসাগর মেলার (Gangasagar Mela ) ইতিহাস জানেন কি? কেনো সেখানেই স্নান করলে সব পাপ(Sin) দূর হয়ে যায়? আসুন জেনেনিন এই গঙ্গাসাগর মেলার ইতিহাস(history)।
গঙ্গাসাগরের মেলা কোথায় হয়
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে সাগরদ্বীপের শেষ প্রান্তে আছে কপিলমুনির আশ্রম। প্রতি বছর এখানেই মক্রর সংক্রান্তিতে ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হয় গঙ্গাসাগর মেলা। গঙ্গা নদী(হুগলি নদী) ( Hoogly River ) এবং বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলই হল গঙ্গাসাগর। একদিকে তীর্থভূমি আবার অপরদিকেই মেলাভূমি। এই দুই এর মিলন হলো এই গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela )। সাগরদ্বীপ বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত সুন্দরবন অঞ্চলের এই দ্বীপটি আগে শ্বেতদ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। শুধু বাংলার মানুষই নয় বিদেশ থেকেও নানা মানুষ এই মেলায় আসে তাদের ষড়মুক্তির আশায়।
গঙ্গাসাগরের স্নান
অত্যন্ত জনপ্রিয় গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela) আপামর ভারতবর্ষের মানুষের চেনা। এই তীর্থ স্থানটি একসময় ছিল দুর্গম, পুর্ণার্থীদের এই পথে যাবার জন্যেও অর্জন করতে হত পুণ্য। নদীনালা, বন জঙ্গল আর খাড়ার উপর দোসর জলদস্যু, চোর, ডাকাতদের ভয়। এমনকি বন্য জন্তুদের আক্রমণে মৃত্যুও পর্যন্ত ঘটত মুর্হুঃমুর্হু। কিন্তু এখন যাতায়াতের পথ হয়েছে অনেক সহজ। প্রথমে ট্রেন, বাস বা গাড়িতে নামখানা এবং তারপরই নৌকা, ভটভটি, লঞ্চে উঠে খুব সহজেই সেরে ফেলা যেতে পারে গঙ্গাসাগরের স্নান।
সাগরদ্বীপে গঙ্গাসাগর মেলার বিশেষ প্রযুক্তিগত প্রভাব
পৌষ মাসের একেবারে শেষে মকরসংক্রান্তির দিনে প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে ছুটে আসেন কয়েক লক্ষ মানুষ। বছরের যেকোনো সময় এই গঙ্গাসাগরের স্নান সকলেই উপভোগ করতে পারেন। প্রতিদিন নিত্যনতুন মানুষের ভীড়ে গঙ্গাসাগরের মেলা হয়ে ওঠে জমজমাটি। তীর্থ স্নানের আসেপাশে গড়ে উঠেছে জেলা প্রশাসনের সার্কিট হাউস, যুব আবাস, জেলা পরিষদ ভবন, দোকান পাঠ, হোটেল, খাবারের দোকান ইত্যাদি। এমনকি সেবাশ্রমের বিশাল বাড়িও গড়ে উঠেছে এই দ্বীপে। সরকারের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে বড়ো মন্দির। এই দ্বীপেই রয়েছে মহাঋষি কপিল মুনির আশ্রম। তিনি এখানেই সাধনা করতেন।
বিশাল ঝড়ে লন্ডভন্ড কপিল মুনির গ্রাম
একসময় সাগরদ্বীপ ছিলো ১৭০ বর্গ মাইলের এক গমগমে প্রদেশ। ১৬৮৮ সালে সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে প্রায় দু’লক্ষ মানুষ সমুদ্রে ভেসে যায়। এরপর দ্বীপটি জনহীন হয়ে যায়। রানী সত্যভামা প্রথম কপিল মুনির মন্দিরটি তৈরী করেন। পরবর্তীকালে এই মন্দির বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং তারপর ছয়টি মন্দির তৈরি করা হলেও সেগুলোও বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে যে মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে সেটি আদি মন্দির থেকে প্রায় ২ কিমি দূরে অবস্থিত।
বর্তমানে Gangasagar Mela
বর্তমান সরকার দাবী করে, ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার আসার পর এই সাগরদ্বীপের উপর বিশেষভাবে নজর দেন তারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ( Mamata Banarjee ) এই সাগর দ্বীপে ‘গঙ্গাসাগর-বকখালি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড’ গঠন করেন। মুখ্যমন্ত্রী এই তীর্থ উন্নয়নের জন্য ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা খরচ করে। এখন সাগর মেলায় (Gangasagar Mela ) ছুটির দিনে হেলিকপ্টার সার্ভিসের ব্যবস্থাও রয়েছে। জনপিছু মাত্র ৫০০০ টাকার পরিবর্তে কলকাতার বেহালার ফ্লাইং ক্লাব থেকে হেলিকপ্টারে চেপে আধ ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন গঙ্গাসাগরে। আর সেরে ফেলতে পারবেন পুণ্যস্নান।