রুশ বিপ্লবের সঙ্গে মিশে গিয়েছে বাংলার গল্প, যুদ্ধ আবহে এই অচেনা বাঙালির জীবন যুদ্ধের কথা জেনে নিন

রাখী পোদ্দার, কলকাতা : “যারা যুদ্ধে যায়, তাঁরা যুদ্ধ চায় না। যারা যুদ্ধ চায়, তাঁরা যুদ্ধে যায় না”। রাশিয়া ( Russia) এবং ইউক্রেনের ( Ukraine) মধ্যে দ্বন্দ্ব ইতিমধ্যেই ফেলেছে সারা বিশ্বের কপালে ভাঁজ। বাজছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডঙ্কা। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পুতিনের ( Vladimir Putin) আগ্ৰাসন। অপরদিকে গতকাল থেকেই খোঁজ মিলছে না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ( Zelenskyy)। ভারতের সাথে সর্বদাই ভালো সম্পর্ক রয়েছে রাশিয়ার। তবে ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায়, কোথাও গিয়ে রুশ বিপ্লবের ( Russian Revolution) সঙ্গে মিশে গিয়েছিল ভারতের গল্প। বলা ভালো ভারত নয় মিশে গিয়েছিল এক্কেবারে বাংলার গল্প। সময়টা ছিল বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পাশাপাশি আরেক ঐতিহাসিক ঘটনার প্রস্তুতি নিচ্ছিল রাশিয়া ( Russia)। যে ঘটনার যবনিকা পরেছিল ১৯১৭ সালে। স্বৈরাচারী জারের শাসনে ইতি ঘটিয়ে লেনিনের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছিল শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্ব। তবে এই লড়াই শুধু রাশিয়ার মানুষের ছিল না। এই লড়াইয়ে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন এক বাঙালি যুবকও। মেদিনীপুরের ( Medinipur) বনেদি মুসলমান পরিবারের যুবক হাসান শাহিদ সোহরাওয়ার্দী ( Hasan Shahid Suhrawardy) সেদিন উপস্থিত ছিলেন সেই লড়াইয়ের ময়দানে। ১৮৯০ সালে এক গোঁড়া মুসলিম পরিবারে যে ছেলেটির ( Hasan Shahid Suhrawardy) জন্ম হয়েছিল, সেই যে স্কটিশ চার্চ কলেজ আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পাঠ শেষ করে একেবারে রাশিয়ায় গিয়ে পৃথিবীর প্রথম শ্রমিক বিপ্লবে সামিল হবে, এমনটা আশা করেননি কেউই।

বাজছে যুদ্ধের দামামা, বিশ্বযুদ্ধের উপর তৈরি এই ৫টি যুদ্ধের সিনেমা ঝড় তুলবে আপনার মনেও

Russia জীবনের শিক্ষা লগ্ন থেকেই বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিজেকে সোপে দিয়েছিল হাসান ( Hasan Shahid Suhrawardy)। ১৯১৪ সালেই স্কলারশিপ ( Scholarship) নিয়ে রাশিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন হাসান। উদ্দেশ্য ছিল রুশ ভাষা শিক্ষা। অবশ্য এর পরেই ১৯১৫ সালে তিনি পাড়ি দেন লন্ডনে ( London)। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ( Oxford University) ভর্তি হয়েছিলেন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে। এমতাবস্থায় রাশিয়ার ( Russia) বলসেভিক পার্টির কিছু কর্মকাণ্ড ছুঁয়ে গিয়েছিল তাঁর মন। তাই অক্সফোর্ডের পড়াশুনো শেষ করে আবার ফিরে গিয়েছিলেন রাশিয়াতেই ( Russia)। তখন বিপ্লবের প্রস্তুতি তুঙ্গে। ১৯১৭ সালে যখন বিপ্লব সফল হয়, তখন হাসান রাশিয়ার একজন পরিচিত মুখ। মস্কো ( Moscow) বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হিসাবে। তবে তার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আবার পাড়ি দেন প্যারিসে ( Paris)।

Ukraine-Russia war : দেশবাসীর মনোবল বাড়াতে টুইটারে ভিডিও বার্তা রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কির

এরপর লেনিনের আহ্বানে ফের প্যারিস থেকে রাশিয়ায় ফিরে যান হাসান ( Hasan Shahid Suhrawardy)। তবে তা স্থায়ীভাবে নয়। লেনিনের ( Lenin) নির্দেশে এরপর তিনি চলে যান চিনে। সেখানে কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে পরিচালনার করার ভার দেওয়া হয় হাসানের উপর। চিনের ( China) মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশেই জীবনের অধিকাংশ কবিতা লিখেছিলেন তিনি। এরপর আবার ১৯২৬ সালে ফিরে এসেছিলেন রাশিয়াতে ( Russia)। তারপর ৩ বছর ধরে মস্কো আর্ট থিয়েটার ( Moscow Art Theatre) প্রকল্পের হয়ে কাজ করেছিলেন তিনি। অবশেষে বিদেশের পাট চুকিয়ে ১৯৩২ সালে দেশে ফিরে আসেন হাসান সোহরাওয়ার্দী। প্রথমে হায়দ্রাবাদের ( Hyderabad) ওসমানিয়া ইউনিভার্সিটি এবং তারপর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তিনি। তবে এই দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তাঁকে কোনোদিনই আকর্ষণ করতে পারেনি। পরাধীন দেশে মানুষের ঐক্যের পরিবর্তে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ দেখেছিলেন তিনি। আর তার মধ্যে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরই পরিবারের আরেক সদস্য হোসেন সোহরাওয়ার্দী ( Hasan Shahid Suhrawardy)। তাই শেষ জীবনটা তিনি কাটিয়ে দিয়েছিলেন কবিতা লিখে আর শিক্ষকতা করেই। তবে এতকিছুর পরও দেশবাসী তাঁকে মনে রেখেছে কতটুকু? নিজের চোখের সামনে ভাগ হতে দেখেছে দেশকে। জন্মসূত্রে মুসলমান হওয়ার অপরাধে ভারত ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল পাকিস্তানের (Pakistan) করাচিতে ( Karachi)। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন তিনি।

Indians in Ukraine: ‘আমার দিদিকে ফিরিয়ে দাও’, ইউক্রেনের আটকে থাকা দিদিকে ফিরে পেতে কাতর আর্জি একরত্তির




Leave a Reply

Back to top button