সিলেবাসে কোপ, কেন বামপন্থী আন্দোলনের ইতিহাস বাদ দিতে উঠে পড়ে লেগেছে মোদী-মমতা

দিল্লির কৃষক আন্দোলন নিয়ে যখন উত্তাল গোটা দেশ, সেই আন্দোলনকে সমর্থন করছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, ঠিক সেই মুহুর্তেই রাজ্যের সিলেবাস থেকে বাদ পড়ল ভারতের কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন! যা নিয়ে ফের নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।

করোনা আবহে গত বছরের মার্চ থেকেই বন্ধ স্কুল। এবছর হলে বসে পরীক্ষাও দিতে পারেনি মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে সিলেবাস কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। বাংলা, ইংরেজি সহ সমস্ত বিষয়েই ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সিলেবাস বাদ দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা কোন সিলেবাসে হবে, তা প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। আর সেই সূত্রেই ইতিহাস থেকে বাদ পড়েছে বিশ শতকে ভারতের কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন! যা নিয়ে শাসক দল ও বামেদের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা।

Madhyamik Examination,Secondary Syllabus,Delhi University Syllabus,মাধ্যমিক পরীক্ষা,মাধ্যমিকের সিলেবাস,দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস,বামপন্থী আন্দোলনের ইতিহাস,রাজ্যের সিলেবাস,সিলেবাস থেকে বাদ বামপন্থীরা,দিল্লির কৃষক আন্দোলন,History of leftist movement,state syllabus,leftists excluded from syllabus,peasant movement in Delhi

একদিকে   কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, অন্যদিকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, দুজনেরই চক্ষুশূল বামপন্থী আন্দোলন। পাঠ্যপুস্তক থেকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে একের পর এক সংগ্রামী ইতিহাস। তবে শুধু রাজ্যের সিলেবাসেই নয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস থেকেও বাদ গিয়েছে প্রখ্যাত লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী এবং দুই দলিত সম্প্রদায়ের লেখকের গল্প। এক আদিবাসী মহিলাকে নিয়ে লেখা মহাশ্বেতা দেবীর ‘দ্রৌপদী’-গল্পটিকে সিলেবাস বাদ দেওয়া হয়েছে কোনও কারণ না জানিয়েই। একইসঙ্গে দলিত সম্প্রদায়ের লেখক বামা ও সুখরথারিনির লেখা সিলেবাস থেকে বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে উচ্চবর্ণের লেখক রমাবাইয়ের লেখা ঢোকানো হয় সিলেবাসে। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় দেশ জুড়ে। প্রশ্ন উঠছে, সিলেবাস থেকেও বামপন্থীদের মুছে দিয়ে তাহলে কি বৃহত্তর ফ্যাসিবাদী চক্রান্ত ভারতবর্ষের বুকে ?

Madhyamik Examination,Secondary Syllabus,Delhi University Syllabus,মাধ্যমিক পরীক্ষা,মাধ্যমিকের সিলেবাস,দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস,বামপন্থী আন্দোলনের ইতিহাস,রাজ্যের সিলেবাস,সিলেবাস থেকে বাদ বামপন্থীরা,দিল্লির কৃষক আন্দোলন,History of leftist movement,state syllabus,leftists excluded from syllabus,peasant movement in Delhi

তবে সিলেবাস থেকে বামপন্থী আন্দোলনের ইতিহাসকে বাদ দেওয়া নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বামেরা। বামেদের দাবি, স্বাধীনতা আন্দোলনে রাজ্যের বামপন্থীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মুজাফ্ফর আহমেদ, গণেশ ঘোষ, কল্পনা দত্ত, সুবোধ রায়, অনন্ত সিং থেকে বহু কমিউনিস্ট বিপ্লবী নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। তাছাড়া ভারতের কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনেরও একটা সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। সেইসব ইতিহাস অস্বীকার করা মানে ছাত্রছাত্রীদের অন্ধকারে রাখা। অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি, ৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে সমর্থন করেনি বামেরা। তাই ওদের ইতিহাস সিলেবাস থেকে বাদ গেছে, ঠিকই হয়েছে। যদিও তৃণমূলের এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে বামেরা। তবে এই বিষয়ে পর্ষদের যুক্তি, বিশ শতকে ভারতের কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলনের অংশটি সিলেবাসের একদম শেষের দিকে রয়েছে, তাই বাদ গিয়েছে।

 

বর্তমানে কৃষক আন্দোলন নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। দিল্লির উপকণ্ঠে ঠায় আন্দোলনে বসে পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকরা। প্রায় ১১ দফা বৈঠকে হয়েছে সরকার ও কৃষকদের মধ্যে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও রফাসূত্র মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কৃষক আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে তৃণমূল। এমনকি নবান্নে কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রেক্ষাপটে বামপন্থী ও শ্রমিক, কৃষক আন্দোলনকে যেভাবে সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া হল, তা নিয়ে হতবাক অনেকেই। প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র বিজেপির বিরোধিতা করবেন বলেই কি কৃষকদের সমর্থন জানিয়েছেন মমতা ? আদৌও যদি মমতার কৃষকদের প্রতি এতই দরদ থাকত, তাহলে কি দিল্লি সফরে গিয়ে একটি বার অন্তত অবস্থানরত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে পারতেন না তিনি ?




Back to top button