মৃত্যু সংবাদে বিধ্বস্থ সোলাঙ্কি, সদ্যোজাত মেয়ের পর বাবার মৃত্যুসংবাদ

রাজকুমার মণ্ডল : সদ্যজাত মেয়ের সৎকার করে রঞ্জিতে ফিরেই বাবার মৃত্যুসংবাদ পেলেন বিষ্ণু সোলাঙ্কি। নিজের সদ্যজাত কন্যার মৃত্যুর হয়েছিল। মেয়ের ( Solanki )সৎকার করে এসে রঞ্জিতে শতরান করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরেই নিজের বাবার মৃত্যু সংবাদ বরোদার ক্রিকেটার বিষ্ণু সোলাঙ্কি। বাবার শেষকৃত্য করার জন্য বাড়ি ফেরেননি, মোবাইলে বসেই শেষকৃত্য দেখেছেন। রঞ্জিতে চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে বরোদার ম্যাচ চলছিল। ফিল্ডিং করেছিলেন বিষ্ণু।বিষ্ণুকে সাজঘরে ডেকে বাবার মৃত্যু সংবাদ দেন দলের ম্যানেজার। দলের অধিনায়ক দেওধর জানান, কঠিন মুহুর্ত ছিল বিষ্ণুর জন্য। কুর্নিশ জানান দলের সহ খেলোয়াড়েরা। বরোদার অধিনায়ক দেওধর জানান, ‘গত দু’মাস ধরে অসুস্থ বিষ্ণুর ( Solanki ) বাবা। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মৃত্যুর পরে বেশি ক্ষণ দেহ ফেলে রাখা যেত না। তাই বিষ্ণু চাইলেও শেষকৃত্যের আগে বাড়ি পোঁছতে পারতেন না। বিষ্ণুর দাদা শেষকৃত্য করে। এই পরিস্থিতিতে ও কী ভাবে ক্রিকেট খেলল সেটাই আমাদের অবাক করছে।’
প্রসঙ্গত গত ১১ ফেব্রুয়ারি নিজের সদ্যজাত মেয়ের মৃত্যুর খবর পান বিষ্ণু। মেয়ের সৎকার করার পর দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তার পরে চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন তিনি। কিন্তু এর পরেই এবার বাবার মৃত্যু সংবাদ পান বিষ্ণু ( Solanki )। শেষকৃত্য তাঁকে দেখতে হয় মোবাইলে। সচিন তেন্ডুলকর থেকে বিরাট কোহলি, আপনজনের শোক বুকে নিয়ে ক্রিকেট খেলার নজির রয়েছে। এক্ষেত্রে কিছুটা মিল আছে বিরাট কোহলির সঙ্গে। বাবা মারা যাওয়ার পরের দিন তিনি দিল্লি হয়ে রঞ্জি ম্যাচে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের কয়েকদিন আগে মৃত্যু হয় সচিন তেন্ডুলকরের বাবার। কিন্তু সচিন কেনিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলেন ও অপরাজিত থেকে ১৪০ রানের ইনিংস খেলেন। তবে বিষ্ণু সোলাঙ্কির সঙ্গে যা ঘটেছে, তা মর্মান্তিক। বিষ্ণু সোলাঙ্কি ( Solanki ) । পেশায় ক্রিকেটার, বরোদার হয়ে রঞ্জি দলের নিয়মিত সদস্য।
মাত্র ১০ দিন আগে সোলাঙ্কি হারান সদ্যোজাত মেয়েকে। জন্মের একদিন বাদে মৃত্যু হয় মেয়ের। মেয়েকে হারানোর যন্ত্রণা সামলে তিনি কটকে যোগ দেন দলের সঙ্গে।পাঁচদিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর তিনি চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে খেলতে নামেন এবং শতরান করেন। বরোদার হয়ে চন্ডীগড়ের বিরুদ্ধে দলের প্রয়োজনে দুর্দান্ত ১০৪ রানের ইনিংসও খেলেন তিনি। মেয়েকে হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের শোক নেমে এল বিষ্ণুর জীবনে। ম্যাচের শেষদিন, রবিবার ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর অসুস্থ বাবারও পরলোক গমনের খবর পান বিষ্ণু। গত রবিবার ম্যাচ শেষে দলকে ড্রেসিংরমে ডাকেন বরোদার ম্যানেজার ধর্মেন্দ্র আরোথে। সেখানে জানান প্রয়াত হয়েছেন বিষ্ণুর পিতা। মুহূর্তে আকাশ ভেঙে পড়ে বিষ্ণুর মাথায়। ড্রেসিংরুমের এক কোণায় বসে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হতে দেখেন তিনি। জীবনের অন্যতম কঠিন সময়ের মধ্যে ২৯ বছর বয়সী ক্রিকেটার বিষ্ণু ( Solanki ) । পরপর দুই আপনজনের মৃত্যু নিঃসন্দেহে যে কাউকে ভেঙে দেবে। তবে এখানে বিষ্ণু আলাদা। অভূতপূর্ব মানসিক দৃঢ়তার প্রদর্শন দেখিয়ে বরোদা দলের হয়ে তিনি মরশুমের তৃতীয় রঞ্জি ম্যাচেও মাঠে নামতে প্রস্তুত। মেয়ের শেষকৃত্যের জন্য ফেরত আসায় তিনদিন নিভৃতবাসে থাকার নিয়ম অনুযায়ী বিষ্ণু প্রথম ম্যাচে খেলতে পারেননি। তবে বাবার মৃত্যুর পর তিনি ফিরছেন না। বরং দলের সঙ্গেই থেকে পরের ম্যাচের প্রস্তুতি সারছেন। বরোদা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি অজিত লেলে এই বিষয়ে কে জানান, ‘ও ফিরে আসছে না, শেষ ম্যাচেও খেলবে। ও তৃতীয় ম্যাচে খেলবে এবং দলের সঙ্গেই থাকছে।’ ৩ মার্চ বরোদা এলিট গ্রুপ বি-র ম্যাচে হায়দরাবাদের মুখোমুখি হবে। ক্রিকেটার বিষ্ণু শোক ভুলে মাঠে নামতে প্রস্তুত।