জ্বালানির জ্বালায় জ্বলছে বিশ্ব! বিভিন্ন দেশের দরবারে তেল রপ্তানিতে মস্কোর যোগদান

রাশিয়ার নাম আসলেই আলোচনায় আসে তাদের জ্বালানি তেলের কথা  (Russian Oil Flow)। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্ব নেতাদের ওপর প্রভাব খাটানোর যে চেষ্টা করেন; তার পেছনে বড় একটা কারণও এই তেল।

তেল উৎপাদনে (Russian Oil Flow) যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পর তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হলো রাশিয়া। প্রতিদিন দেশটি প্রায় ৫০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল (Russian Oil Flow) রপ্তানি করে। এর অর্ধেকের বেশি যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাজ্যের চাহিদার ৮ ভাগ তেল রপ্তানি করে রাশিয়া। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের চেয়ে রাশিয়ার ওপর কিছুটা কম নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার মোট ৩ ভাগ তেল আসে রাশিয়া থেকে।

ব্লুমবার্গের তথ্য বলছে, দিনে সাড়ে ১৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে সৌদি আরব করে ১১ মিলিয়ন ব্যারেল, আর রাশিয়া করে ১০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেল (Russian Oil Flow)। কানাডা ৫ দশমিক ১, ইরাক ৪ দশমিক ১, চীন ৩ দশমিক ৯ আর কুয়েত উৎপাদন করে ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন।

ইউক্রেনে রুশ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে। তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে ইউরোপের দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার রাশিয়ার হুঁশিয়ারির পর পশ্চিমা দেশগুলো থেকে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। তবে এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সারা বিশ্বেই পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, রাশিয়ার হামলার জন্য দেশটির বিরুদ্ধে ইউক্রেন আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানোর পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানির ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। যুক্তরাজ্য বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করবে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি দুই–তৃতীয়াংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। তেলের জন্য রাশিয়ার বিকল্প উৎস খোঁজার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।

জ্বালানির ওপর পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকসান্দার নোভাক বলেছেন, রাশিয়ার তেল প্রত্যাখ্যান করলে তা বিশ্ববাজারের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনবে।

তেল ও গ্যাসের দাম ইতিমধ্যে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। রাশিয়া তেল রপ্তানি (Russian Oil Flow) বন্ধ করলে দাম আরও বাড়তে পারে। এতে যুক্তরাজ্যের জীবনযাত্রার ওপর পড়বে বড় প্রভাব। বিশ্বে বিভিন্ন পণ্যের দাম আরও অনেক বেড়ে যাবে।

জ্বালানি নীতি গবেষণা বিশ্লেষক বেন ম্যাকউইলিয়ামস বলেন, গ্যাসের তুলনায় তেলের বিকল্প উৎস খুঁজে পাওয়া সহজ। কারণ, গ্যাসের পাইপলাইনের স্বল্পতা রয়েছে। কিন্তু তেলের ক্ষেত্রে রাশিয়া ছাড়াও অন্য দেশ থেকে জাহাজে করে বহন করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে সৌদি আরবকে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছে। কিন্তু এর আগে দাম কমিয়ে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে মার্কিন অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল। বিশ্বের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের সদস্য নয় রাশিয়া। তবে ২০১৭ সাল থেকে তেলের উৎপাদন সীমিত রাখতে ওপেকের সঙ্গে কাজ করছে দেশটি।

এদিকে তেলের বাজার সচল রাখতে ভেনেজুয়েলার দ্বারস্থ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র। তেল বিক্রিতে ভেনেজুয়েলার ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা সহজ করার কথা ভাবছে দেশটি। কিন্তু একসময় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারী হলেও ভেনেজুয়েলা বর্তমানে চীনের কাছে তেল বিক্রি করছে।

রাশিয়ার গ্যাস না পেলে পশ্চিম ইউরোপে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে এসব দেশে দাম বাড়তে শুরু করেছে গ্যাসের, যা আরও বাড়বে। ইউরোপে যে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি হয়, তার প্রায় ৪০ ভাগই আসে রাশিয়া থেকে। ইউক্রেন সংকটে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিশেষ করে সংকটে পড়বে ইতালি ও জার্মানির মতো দেশগুলো। যুক্তরাজ্য ৫ শতাংশ গ্যাস আমদানি করে রাশিয়ায় থেকে। আর যুক্তরাষ্ট্র দেশটি থেকে কোনো গ্যাসই আমদানি করে না। এসব দেশে দাম বাড়ছে মূলত সরবরাহের ঘাটতির কারণে।

শিগগিরই রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প বের করা সহজ হবে না। কারণ, রাশিয়া থেকে অধিকাংশ গ্যাসের পাইপলাইন ইউরোপে গেছে। গবেষণা সংস্থা ব্রুগেল বলছে, রাশিয়া গ্যাস না দিলে ইউরোপকে তখন যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। এতে অন্য জ্বালানি উৎসের ব্যবহার দ্রুত বাড়বে।

জ্বালানি বিশ্লেষক সিমোন তাগলিয়েপেট্রা বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে। তাই স্বল্পমেয়াদে তা সমাধান নয়। আগামী শীতে ইতালি বা জার্মানিকে জরুরি প্রয়োজনে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে যেতে হতে পারে।’

সর্বশেষ মঙ্গলবার অশোধিত তেল ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। ব্যারেল প্রতি দাম উঠেছে ১৩০ ডলারে। আর বিভিন্ন পাম্পে পেট্রলের দাম সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রতি গ্যালন গড়ে ৪ দশমিক ১৭ ডলারে বিক্রি হয়।

২০৩০ সালের মধ্যে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ইউরোপের নির্ভরতা কমিয়ে আনার একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে ইইউ। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহে বৈচিত্র্য আনা এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বিকল্প কিছুর ব্যবস্থা করা। 

 




Leave a Reply

Back to top button