এই থেরাপি নিলে আর দূর্বল হবে না বয়স্কদের স্মৃতি, সাফল্যের দোরগোড়ায় বিজ্ঞানীরা
ওয়েব ডেস্ক: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুর্বল হতে থাকে মানুষের স্মৃতিশক্তি। স্মৃতিশক্তি হ্রাসের কারণে পুরোনো দিনের অনেক ঘটনাই চট করে মনে করতে পারেন না বয়স্করা। বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি জনিত সমস্যা দূর করতে এবার এক অভিনব চিকিত্সা পদ্ধতির আবিষ্কার করেছেন ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাঁরা এমন এক থেরাপির উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে বুড়ো বয়সেও একেবারে সতেজ থাকবে স্মৃতিশক্তি।
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্ক তার স্মৃতিশক্তি ধরে রাখে, নতুন কিছু শেখে কিংবা কোনও কিছু তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তাকে নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তৈরি হয় মানুষের স্মৃতি। সম্প্রতি মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে পেরিনিউরোনাল নেটের (Peruneuronal Nets – PNNs) খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। গবেষকদের মতে এই পেরিনিউরোনাল নেট স্মৃতিশক্তি তাজা রাখতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।

এই পেরিনিউরোনাল নেটের (PNN)মূল কাজ হল মস্তিষ্কে নিউরোপ্লাস্টিসিটির প্রক্রিয়া সচল রাখা। এটি দেখতে অনেকটা কার্টিলেজের মতো, যা মানুষের দুটো হাড়ের জয়েন্টের মধ্যে থাকে। পেরিনিউরোনাল নেট মস্তিকের ভিতরে থাকা নিবিটরি নিউরন (nhibitory Neuron) কে ঘিরে থাকে। অল্প বয়সে মানুষের মস্তিষ্কে নিউরোপ্লাস্টিসিটি প্রক্রিয়া দুর্দান্ত ভাবে সচল থাকে, সেই কারণেই আমাদের স্মৃতি একেবারে সতেজ থাকে। যার কারণে আমরা পুরোনো ঘটনা থেকে থেকে শুরু করে ফোননম্বর, সবকিছু মনে রাখতে পারি।
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, পেরিনিউরোনাল নেটের একটি বিশেষ রাসায়নিক হল চন্ড্রয়েটিন সালফেট(Chondroitin Sulphate)। মূলত এই রাসায়নিকের কারণেই মস্তিষ্কে নিউরোপ্লাস্টিসিটির প্রক্রিয়া সচল থাকে। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই রাসায়নিকের পরিমাণ কমতে থাকে, যার ফলে বয়স কালে লোপ পেতে থাকে মানুষের স্মৃতিশক্তি। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকরা পেরিনিউরোনাল নেটের মধ্যে চন্ড্রয়েটিন সালফেট প্রতিস্থাপনের একটি উপায় আবিষ্কার করেছেন। যার ফলে বয়সকালেও আর লোপ পাবে না মানুষের স্মৃতিশক্তি।
এই পরীক্ষার জন্য, একটি ৬ মাস এবং একটি ২০ মাস বয়সী ইঁদুরের উপর গবেষণা চলিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা (একটি ইঁদুর গড়ে ২ বছর অর্থাৎ ২৪ মাস বেঁচে থাকে)। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ২০ মাস বয়সী ইঁদুরটির স্মৃতিশক্তি ৬ মাস বয়সী ইঁদুরের তুলনায় দুর্বল। এরপর ওই বয়স্ক ইঁদুরটির উপর একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চন্ড্রয়েটিন সালফেট প্রয়োগ করা হয়। যার ফলে দেখা যায় ইঁদুরটির স্মৃতিশক্তি উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে।
এই বিষয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রধান গবেষক জেমস ফসেট বলেন, ‘আমাদের গবেষণা এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র ইঁদুরের উপরেই করা হয়েছে। মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে ইঁদুরের মস্তিষ্কের অনেক মিল রয়েছে, দুটোর রাসায়নিক উপাদান একই।’ গবেষকদের দাবি, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অদূর ভবিষ্যতে বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি ফের আগের মতো ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব।