বাংলার বুকে প্রথম মেনুকার্ড আসে ঠাকুরবাড়ির এই সদস্যের হাত ধরেই, চেনেন তাঁকে ?
ওয়েব ডেস্ক: সালটা ১৯০৬। প্রাশ্চাত্যের তালিমে ধীরে ধীরে আধুনিকতার রাস্তায় এগিয়ে যাচ্ছে বাঙালি। ১২ মাসে ১৩ পার্বণের মধ্যে লাগতে শুরু করেছে পশ্চিমী ছোঁয়া। একদিকে যখন গোটা বাংলা জুড়ে জ্বলে উঠছে স্বদেশী বিপ্লবের আগুন, তখন উচ্চ-মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ মজতে শুরু করেছে পশ্চিমী ভাবধারায়।
কলকাতার এরকমই এক প্রভাবশালী পরিবারের গৃহকর্তা ছিলেন কুমার রামেন্দ্রকৃষ্ণ দেব। নিজের বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার ছেলের বিয়ে উপলক্ষে আয়োজন করেছিলেন মহাভোজ। ৩৬ রকম পদ সহযোগে আয়োজিত এই মহাভোজে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার বহু স্বনামধন্য ব্যক্তি। বর-কর্তার দায়িত্বভার সামলান খোদ কলকাতার তত্কালীন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। বিয়েবাড়িতে ঠাকুর বাড়ির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ পুত্র হেমেন্দ্রনাথ এবং তার মেজ কন্যা, বাংলার প্রথম ‘কুকবুকের’ রচয়িতা প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী।

তবে এই মহাভোজের প্রধান আকর্ষণ কিন্তু ৩৬ টি পদ ছিল না, ছিল মেনুকার্ড। এর আগে অব্দি ভোজের কোনও পদ খাওয়ার আগে জানতে পারতেন না অতিথিরা। সেই কারণে মেনুকার্ডই ছিল ভোজের এক অন্যতম ও প্রধান আকর্ষণ। বাংলায় ছাপানো এই মেনুকার্ডে ছিল ৩৬টি পদের নাম। একইসঙ্গে ফরাসি ভাষায় ছাপানো মেনুকার্ডে বিদেশী অতিথিদের জন্যে ছিল ১৬ রকমের পদ।
ইতিহাসের পাতাতে, ঠাকুরবাড়ির নাম সবসময় উঠে এসেছে কিছু অভিনব কারণের দরুন। বলা হয়ে, বাঙালি ভোজে ‘মেনুকার্ডের’ চলন এসেছিল রবিঠাকুরের ভাইঝি প্রজ্ঞাদেবীর হাত ধরেই। প্রথম দিকে হাতে লেখা হলেও, পরের দিকে তা ছাপিয়ে সব নিমন্ত্রিতদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হতো।
একবিংশ শতাব্দী তে দাঁড়িয়ে মেনুকার্ড এখন আমাদের কাছে একটি অতি সহজলভ্য জিনিস। রেস্তোরাঁ বা যেকোনো অনুষ্ঠান বাড়িতে গেলেই সবার আগেই হাত পৌঁছে যায় মেনুকার্ড। তবে তৎকালীন সময় মেনুকার্ড মোটেও সহজলভ্য ছিল না, ভোজের আকর্ষণ বাড়াতেই প্রধানত তা ব্যবহার করতেন ধনীরা।