হাঁটাচলা দূর, স্নানটাও নিজে পারে না! প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে মাধ্যমিকে স্কুলে প্রথম এই কৃতী ছাত্রী

মনের জোর তাঁর অপার। কখনও তাঁকে ভেঙে পড়তে দেখেনি গ্রামবাসীরা। নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরেই সে সর্বদা শীর্ষে রেখেছে নিজেকে। পরিবারের বিশেষ অর্থের জোর নেই, তাঁর শরীরের একটা অংশ কাজই করে না। কিন্ত এসব কিছুই থামাতে পারেনি তাঁকে। পায়েলকে এলাকার মানুষজন চেনেন। কারণ স্কুলে সে কখনও দ্বিতীয় হয়নি। হাঁটাচলা তো দূরের কথা, নিজে একা স্নানও করতে পারে না সে। মাধ্যমিকে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর রীতিমতো নজর কেড়েছে সকলের। কিন্তু বাড়ির যা আর্থিক পরিস্থিতি তাতে আগামীতে কীভাবে পড়াশোনা করবে সে এই নিয়ে কোনও ধারণা নেই তাঁর।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবার ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের দ বালুরঘাট ব্লকের অমৃতখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের কামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা পায়েল। ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী সে। মায়ের কোলে চেপেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল পায়েল। চিরকাল নিজের মেধার জন্যই গ্রামে পরিচিতি পেয়ে আসছে সে। আর এবারও সেই চোখ ধাঁধানো নম্বর। মাধ্যমিকে নিজের ঝুলিতে ৮০ শতাংশ নম্বর ঢুকিয়ে ফেলেছে পায়েল। তাঁর নম্বর শুনে চোখে জল চলে আসে তাঁর মায়ের। কিন্তু সুখের আলো ফুটতেই যেন গ্রাস করে দুঃখের অন্ধকার। এত দূর পড়াশোনার পর এবার কীভাবে বাকিটা পথ এগোবে পায়েল? কারণ তাঁর চিকিৎসা করাতে গিয়ে যথারীতি ঋণে জর্জরিত পরিবার। এমতাবস্থায়, আবার আগামী দিনের পড়াশোনার দায়িত্ব কীভাবে সামলাবে এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছে পায়েলের পরিবার।
উল্লেখ্য, স্থানীয়দের কাছে বিষয়টি জানার পর ওই এলাকায় জান ডিএসপি হেড কোয়ার্টার সোমনাথ ঝাঁ এবং বালুরঘাট থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা। জেলা পুলিশ ও বালুরঘাট থানার পুলিশ পক্ষ থেকে পায়েলকে একটি ট্রাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে, তার পাশাপাশি আগামিদিনেও তাঁর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পুলিশ। শুধুই তাই নয়! তাঁর উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করছে জেলা পুলিশ ও বালুরঘাট থানার পুলিশ।
পায়েল জন্ম থেকেই শারীরিক ভাবে ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও এখনও তাঁর উচ্চতা ছোট্ট শিশুর মতো। কোমড়ের নীচ থেকে কার্যত অসাড় তাঁর। এই পরিস্থিতি নিজের কোনও কাজই একা করতে পারে না পায়েল। কিন্তু প্রতিবন্ধী বলেই কি পিছিয়ে পড়া? নিজের জীবনের সকল বাধাকে এড়িয়ে আগামীর পথে পায়েল। প্রতিদিন চলছে তাঁর জীবনযুদ্ধ।