Haunted school: ইতিহাস যেথায় থমকে আছে, ‛তেনাদের’ চোখ রাঙানিতে আজও বন্ধ পশ্চিমবঙ্গের এই স্কুল

জয়িতা চৌধুরি, কলকাতাঃ দার্জিলিং- এর সেন্ট পলস স্কুলের অশরীরীর গা ছমছমে গল্প শুধু পশ্চিমবঙ্গ না, গোটা দেশ জানে। সেই ঘটনা কি শুধুই গল্প? নাকি সত্যি তা নিয়ে মতভেদের অন্ত নেই। তবে এবার ভুতের হদিশ পাওয়া গেল শহর কলকাতার থেকে মাত্র ১৫০ কিমি দূরে। বর্ধমান জেলার একটি গ্রাম কুসুমগ্রাম। গ্রামের একরত্তি হাই স্কুল ‘টোইবা হাই স্কুল’ নাকি কাঁপছে এক অশুভ আত্মার ভয়ে। এমনকি ‘তেনা’-কে দেখে হুশ হারিয়ে ছিলেন স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্রী।
এই ঘটনার জেরেই প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল রশিদ একপ্রকার বাধ্য হয়েই অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্কুলে ছুটি ঘোষণা করেছেন। তবে তিনি চিন্তিত এই বিষয়ে যে আবার কবে ছাত্ররা ক্লাস করতে আসবেন? এই কুসংস্কার ও গুজব শুধু ছাত্রদের নয়, অভিভাবকদের মনেও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। একটি সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল রশিদ নিজে নাকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রদের অভিভাবকদের নিশ্চিন্ত করছেন এই বলে যে অশুভ আত্মা” বলে কিছু নেই। স্কুলে আসা তাই সম্পূর্ণ নিরাপদ। তবে তাতে সুরাহা খুব একটা বেশি হচ্ছে না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এই প্রসঙ্গে বলেন, “অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে আমি অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে তারা যা শুনেছে তা একটি গুজব। কিন্তু তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ইচ্ছুক নয়।”
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার। স্কুলের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের থেকে জানা গেছে, ওইদিন নমাজের সময় নাকি হঠাৎ করে একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রী মাথা ঘুরে পড়ে জান। একই দিনে দ্বাদশ শ্রেণীর আরেক ছাত্রীর সোনালী খাতুন তার শ্রেণিকক্ষে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরদিন বুধবার ৫ম শ্রেণীর চারজন ছাত্র তাদের শ্রেণীকক্ষে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত, মোট ১১ জন মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। রহস্যময় ভাবে অজ্ঞান হওয়া সমস্ত ছাত্রীই ছিল মেয়ে। ভয়ে ইন্ধন জোগায় যে “ভূত” তাদের টার্গেট করছে।
ইতিমধ্যেই স্কুল কমিটির সদস্যরা শুক্রবারবার স্কুল প্রাঙ্গণে একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের (PBVM) একটি দল এসে নাকি শিবিরে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের মনে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচারণা করবেন এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার প্রচারে সহায়তা করবেন। শিশুদের ও অভিভাবকদের মন থেকে ভয়টি দূর করতে এই শিবির সহায়তা করবে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে। PBVM বর্ধমান ইউনিটের সভাপতি শ্রীরূপ গোপাল গোস্বামী বলেন, “আমরা অভিভাবকদের সাথে দেখা করেছি এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া মেয়েদের কেস হিস্ট্রি অধ্যয়ন করে আমরা দেখতে পেয়েছি যে তাদের বেশিরভাগই হিস্টিরিয়া সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিল।”
তিনি আরও বলেন, “এছাড়াও এই সময়ে গ্রামের স্কুলগুলির ভিতরে এত গরম এবং আর্দ্র যে অজ্ঞান হয়ে পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়,” শ্রীরুপবাবু এও অভিযোগ করেন, “আমরা মনে করি যে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যারা তাদের সুবিধার জন্য স্কুলটি বন্ধ করতে চায় তারাও এলাকায় কাজ করছে।” তবে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই মনে করছেন এই অশরীরী নাকি স্কুল সংলগ্ন বিস্তীর্ণ ছিন্নভিন্ন বাড়িটির মালিক ও এককালীন জমিদার সৈয়দ বদরুদ্দোজার। যিনি ১৯৬০ সালে মারা যান। অনেকেই মনে করছেন এই জমিদারই নাকি টার্গেট করছেন স্কুলের সুন্দরী মেয়েদের।
এই বিষয়ে, ব্লক মেডিকেল অফিসার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় যিনি অজ্ঞান হয়ে পড়া দুই ছাত্রীর চিকিৎসা করেন তিনি বলেন, “মেয়েদের মধ্যে একজন গুরুতর বদহজমের সমস্যায় ভুগছিল এবং ওষুধে ভাল অনুভব করেছিল। অন্য একজন ছাত্র দীর্ঘস্থায়ী হিস্টিরিয়ার রোগী এবং আমাদের তাকে শান্ত করতে হয়েছিল। উভয়ই চিকিত্সার পরে সুস্থ হয়ে উঠেছে। গুজব থেকে উদ্ভূত উত্তেজনাও অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে,”