Prahlad Sardar: ক্যারাটেতে বিশ্ব জুড়ে নাম! দু’বেলার ভাত জোটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কলকাতার সোনার ছেলে

ঘরে হয়নি প্ল্যাস্টার টুকুও, রঙ সেখানে বিলাসিতা। বাবা-মায়ের সঙ্গেই এক কামরার ঘরে বাস করেন ‘কলকাতার ব্রুস লি’। বাঘা যতীন স্টেশন পেরিয়ে সামান্য এগিয়ে গেলেই সামনেই রাজপুর নাইন স্টার ক্লাব ( Kolkata )। ক্লাবের সামনেই ছোট্ট একটি পার্ক। সেখানেই জনা দ’শেক ছেলেমেয়েদের ক্যারাটে শেখাচ্ছেন ব্রুস লি। পার্কের ব়্যালিংয়ের পাশেই দাঁড়িয়ে দেখছেন অনেক পথ চলতি দর্শক। 

স্থানীয় মানুষজন তাঁকে নাকি কলকাতা ব্রুস লি নামেই চেনে। তবে আসল নাম কিন্তু প্রহ্লাদ সর্দার ( Prahlad Sardar )। দক্ষিণ কলকাতার ( South Kolkata ) বাসিন্দা সে। তবে অনেক পুরানো বাসিন্দা হলেও মানুষ তাঁকে চেনে এই ‘ব্রুস  লি’র নামেই।  ভারতের হয়ে ক্যারাটেতে প্রতিনিধিত্ব করে ইতিমধ্যে বাংলার সোনার ছেলে সে। সাউথ এশিয়ান স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপে ( South Asian Sports Championship ) তাঁর ঝুলিতে ঢুকে গিয়েছে সোনা-রুপো ( Gold and Silver ) দুই। তবে প্রহ্লাদের মতোই তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরাও নিজেদের শিক্ষকের থেকে পিছিয়ে নেই। কারও কারও ঝুলিতে অল্প বয়সেই ঢুকে গিয়েছে সোনার  মেডেল। 

prahlad sardar1

তবে সোনার ছেলের জীবন কিন্তু মোটেই সোনায় মোড়ানো নয়। বয়সের সঙ্গে কাঁধে এসে চেপে বসেছে সংসারের দায়িত্ব।মাথায় তাই হাজারটা চিন্তা। কখনও সব্জি বিক্রি, কখনও বা গাড়ি পরিস্কার এই করেই জীবন চলছে প্রহ্লাদের। ছোট থেকে ক্যারাটেকেই নিজের জীবনের একমাত্র পথ হিসাবে বেঁচে নিয়েছে সে। কিন্তু সময়ের হাত ধরেই অভাবে সংসারে এই পেশায় নিজেকে টিকিয়ে রাখা যে সম্ভব নয় তা বুঝে গিয়েছে প্রহ্লাদ। 

prahlad sardar2

তবে এই ব্রুস লি নামটা কেউ তাঁকে সম্মান দিয়ে দিয়েছে এমনটা নয়। বরং ঘটেছে উলটপুরাণ। ছোটবেলায় ল্যাম্প পোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস করার সময় তাঁকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে লোকেরা এমন নামে ডাকত। তবে এরপর দেশের হয়ে সোনা জিততেই বদলে গেল সেই মানুষগুলো। তাঁর কথায়, “এরপর সত্যি যখন দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সোনা জিতলাম, তখন সেই লোকগুলোই এসে বলেছে যেন কিছু মনে না করি।”

ছোট ঘরের এক কোণ ভর্তি রয়েছে মেডেল-সার্টিফিকেট। এই বাংলার সোনার ছেলে সে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তাঁর ঘরেই নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ক্যারাটেকে পেশা করে সংসার চালানো অসম্ভব কঠিন হয়ে উঠেছে তাঁর কথা। এই নিয়েই এদিন সে জানায়, “এই দেশে মানুষের এখনও শুধুই ক্রিকেট ও ফুটবল নিয়ে মাতামাতি। তাঁর বাইরে যে কোনও স্পোর্টস থাকতে পারে, তা যেন ধারণার বাইরে। এক একটা কম্পিডিশনের জন্য অনেক পরিকাঠামোর প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রয়োজন হয়। আমাদের মতো ঘরের ছেলেমেয়েরা যারা ঠিক ভাবে খেতে পাই না, তারা এতটা ভাল পারফর্ম করছি। সব কিছু সঠিক থাকলে আরও ভাল হতে পারত।”




Back to top button