Child Marriage Protest: পরনে শাড়ি, কপালে লাল টিপ! বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নারীর বেশেই এগিয়ে এলেন হুগলির দেবাশিস

বাল্যবিবাহ ( Child Marriage ) হল এক সামাজিক অভিশাপ। প্রাচীন কাল থেকেই সমাজে এই প্রথা চলে আসছে। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও সমাজ থেকে দূর হয়নি এই ভয়ানক ব্যাধি। আগেকার মানুষেরা প্রায়শই একটি কথা বলতেন। তাদের কথায় লোহা গরম থাকতেই তা নমনীয় থাকে, ঠান্ডা হলে নয়। অনেকেরই মনে হতে পারে এর সঙ্গে বাল্যবিবাহের কি সম্পর্ক! এ কথার মাধ্যমে পুরনো আমলে মানুষ এটাই বোঝাতে চাইতেন যে একমাত্র বাল্যকালে মেয়েদের বিয়ে দিলেই তারা সুশীল গৃহবধূ হয়ে উঠবে। সে সময় থেকে এখনও পর্যন্ত বাল্যবিবাহকে সমাজের বুক থেকে সম্পূর্ণরূপে দূর করতে চালানো হয়েছে বহু প্রচেষ্টা। তা সত্ত্বেও সমাজ থেকে দূর হয়নি এই অভিশাপ। সম্প্রতি মেয়েদের বাল্যকাল বাঁচাতে এগিয়ে এলেন হুগলির ( Hooghly ) এক শিক্ষক।
একজন শিক্ষকের দায়িত্ব হল সমাজের সকলকে কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে আলোর পথ দেখানো। আর এই কর্মেই মনোনিবেশ করেছেন হুগলির খানাকুলে মাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, যিনি বর্তমানে গোলাপসুন্দরী নামেই অধিক পরিচিত। সমাজে বাল্যবিবাহ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বহুরূপীর সাজেই এ গ্রাম ও গ্রাম ঘুরে বেড়ান এই গোলাপসুন্দরী, সঙ্গেই চলে মধুর কন্ঠে কখনও ছড়া, কখনও বা গান। গোলাপসুন্দরীর কন্ঠেই শোনা যায়, “ছেলেদের ২১ আর মেয়েদের ১৮ হলে, তবেই বিয়ে দেওয়া চলে।”
সাত মাস আগে থেকেই এ কাজ শুরু করেছেন দেবাশিস। ধারণ করেছেন একজন মহিলার রূপ। পরনে লাল সুতির কুর্তি, গলায় ছোট রঙীন স্কার্ফ, চোখে টানা কাজল, কপালে বড় সিঁদুরের টিপ। নিজের লেখা ছন্দ, গান গেয়ে চলেছেন প্রতিটি গ্রাম ঘুরে। সমাজ থেকে বাল্য বিবাহের মতো জটিল ব্যাধি দুর করে সমাজকে শিক্ষার আলোতে আলোকিত করাই একমাত্র উদ্দেশ্য দেবাশিসের। তাঁর কথায়, “এ যুগে দাঁড়িয়েও সমাজের মানুষের মধ্যে বাল্য বিবাহ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হচ্ছে এটাই লজ্জার।”
যদিও এই মহৎ কর্মে একা নন দেবাশিস। তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন তাঁর স্ত্রী এবং ছেলেও। জানা গিয়েছে দেবাশিসের স্ত্রী কাবেরী নিজে তাঁর স্বামীকে সাজিয়ে দেন গোলাপসুন্দরীর বেশে। কাবেরীর কথায়,“ ও যে কাজ করতে চায়, তার উদ্দেশ্য অনেক মহৎ।” এছাড়াও বাবাকে প্রচারে সাহায্য করে ছেলেও। দেবাশিসের ছেলে দীপ্তম তাঁর বাবাকে প্রচার থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজে অনেক সাহায্য করেন বলে জানা গিয়েছে। একজন শিক্ষক হয়ে তিনি সমাজের প্রতি নিজের কর্তব্য যেভাবে পালন করে চলেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।