ফেলে দেওয়া আনাজপাতি কুড়িয়েই পেট চলে, অসুস্থ স্বামী-শাশুড়িকে নিয়ে সংসার চালান দেবী

পচা, ফেলে দেওয়া আনাজ কুড়িয়ে সযত্নে ব্যাগে ভরেন।

কৌশিক, কলকাতা: ইনি দেবী। তবে ঈশ্বরী নন, মানবী।

দুপুরের দিকে বেচাকানা প্রায় শেষ। সবজির বাজার গুটিয়ে একে একে উঠে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সেই সময় বাজারে আসেন দেবী। পচা, ফেলে দেওয়া আনাজ কুড়িয়ে সযত্নে ব্যাগে ভরেন। তাঁর কাছে টাকাপয়সা নেই। তাই টাটকা তাজা সবজি কেনার সামর্থ্যও নেই। কিন্তু পেট শুনবে কেন! অগ্যতা এই পথ। অনেক সবজি ব্যবসায়ী দয়া করে বিক্রি না হওয়া আনাজপাতি দেবীকে দেন। সেদিন যেন লটারি লেগেছে, ভাগ্য সুপ্রসন্ন।

ইনি দেবী। তবে ঈশ্বরী নন, মানবী।

মানবী বলেই জীবনযুদ্ধে হার মানেননি তিনি। বরং তীব্র লড়াই দিচ্ছেন। দেবী ধাড়ার বয়স ৫৩ বছর। বাড়িতে অসুস্থ স্বামী-শাশুড়ি। সারাদিন তাঁদের দেখভালেই চলে যায়। স্বামী পক্ষাঘাতগ্রস্ত। উঠতে পারেন না। শাসুড়িও চলচ্ছক্তিহীন। তাঁদের ফেলে রেখে কাজে যাবেন কী করে! তিন সন্তান ছিল। শিশু অবস্থাতেই মৃত্যু হয় একজনের। পাঁচিল চাপা পড়ে প্রাণ যায় আরেকজনের। আরেক ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় নিখোঁজ হয়ে যান। কিন্তু হার মানেননি দেবী। ভেঙে পড়েননি। জীবনকে যেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘কত ক্ষমতা তোরত, আমায় হারিয়ে দেখা’।

Kalna,Purba Bardhman,Debi Dhara

ইনি দেবী। তবে ঈশ্বরী নন, মানবী।

কালনার ধর্মডাঙা গ্রামের এক চিলতে টিনের ছাউনি। সেখানেই থাকেন দেবী। তাঁর অভিযোগ, সরকারি কোনও প্রকল্পের সাহায্য তিনি পান না। ঘর হয়নি। বিল মেটাতে পারেননি বলে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়ে গেছে বিদ্যুৎ দফতর। স্বামী বিনা চিকিৎসায় পড়ে আছেন। শাশুড়ির অবস্থাও একই। তবে ধর্মচ্যুত হননি দেবী। রাস্তার আলোতে স্বামী, শাশুড়ির শুশ্রূষা করেন।

ইনি দেবী। তবে ঈশ্বরী নন, মানবী।

পেট চালাতে তাই সবজি খোঁজেন দেবী। রাস্তায় পড়ে থাকা পচা, গলা সবজি। কোনও ব্যবসায়ী দয়া করে কিছু দিলে আলাদা কথা। কিন্তু প্রতিদিন ভাগ্য মুখ তুলে চায় না। মুদি দোকান থেকে তেল, নুন , মশলা চেয়ে নেন। এখনও ভালো মানুষ কিছু আছেন। তারপর শুকনো পাতা, কাঠের টুকরো দিয়ে রান্না বসান। ন্যা, দেবীর বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার নেই। থাকার কথাও নয়। স্থানীয় বিডিও সেবন্তী বিশ্বাস মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন। বলেছেন, খোঁজ খবর নেব। দেবী আশ্বস্ত হয়েছেন কিনা বলা মুশকিল। তবে তিনি হার মানেননি। দেবীদের হারানো যায় না।




Leave a Reply

Back to top button