শূন্য থেকে শুরু আজ তাঁর দৈনিক অবাক করে দেবে যে কোনও চাকরিজীবীকে, চপ ভেজে সংসার চালান এই উমা

অল্প বয়সে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে। সংসার চালাতে প্রবল কষ্টের সম্মুখীন। হার না মান জেদ। আজ কার্যত সেলিব্রেটি এই দম্পতি।

শুভঙ্কর, হুগলির: ত্রিপল-দরমা দিয়ে বানানো এক চিলতে দোকান। তেলেভাজা বিক্রির জন্য খোলা। দীর্ঘ কয়েক বছরের স্ট্রাগল। দিনে ১০-২০ টাকা আয় থেকে আজ সারা দিনে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার আয়। পরিস্থিতিটা এতটা সহজ ছিল না হুগলির শ্রীরামপুর মাহেশ এলাকার দম্পতি উমা ও বিশ্বজিৎয়ের। অল্প বয়সে প্রেমের টানে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে দুজনের। হুল্লোড় করে বেড়ানোর বয়সে অদক্ষ, ষকচি হাতে সংসার সামলানো। বিয়ে তো হয়েছিল কিন্তু সংসার চলবে কি করে। সেই চিন্তা থেকেই মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের পাশে তারা খোলেন তেলেভাজার দোকান।

কোনও রকম ভাবেই চলছিল তাদের। সংসারের অবস্থা কোনদিনই বিশেষ ভালো হয়নি। এমন অবস্থায় কোল আলো করে আসে এক কন্যা সন্তান। দায়িত্ব আরও বেড়ে যায় তাঁদের। তবে হাল ছাড়েননি তাঁরা। গতানুগতিক অবস্থায় চলে এক প্রকার চলে যাচ্ছিল তাঁদের। এমন সময় এক জনপ্রিয় টিভি শো কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে উমার দোকান। ২০১৭ সালের দিদি নাম্বার ওয়ান বিখ্যাত টেলিভিশন আসেন উমা। সেখানে শোনান নিজের কঠিন পরিস্থিতির কথা। এর সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য জানিয়েছেন অল্প বয়সে পালিয়ে বিয়ে করার ঘটনাও। দশম শ্রেণীর বিশ্বজিৎ প্রেমে পড়েন সপ্তম শ্রেণীর উমার। সেখানে থেকেই শুরু হয় তাদের গল্প। এরপর পালিয়ে বিয়েও করেন তারা। এরপরই সংসার চালাতে খুলে ফেলেন তেলেভাজার দোকান। যা এখন লোক মুখে দোকানের নাম হয়ে যায় ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ চাপের দোকান।

Didi no 1,Zee Bangla,didi no 1 chop dokan,Hooghly,shrirampur,Mahesh

দিদি নাম্বার ওয়ান শো জিততে না পারলেও দ্বিতীয় স্থান দখল করেন উমা। তারপর থেকেই বদলে যায় তাঁদের পরিস্থিতি। রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তাদের নাম। স্বাভাবিকভাবেই দোকানের বেচা-কেনাও বাড়ে। উমার দোকানের প্রসঙ্গে স্থানীয় এক বাসিন্দা অশোক কুমার রুদ্র বলেন, ‘উমার দোকানে দীর্ঘ পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে চপ নিয়ে আসছি। একবার খেলে ওর চাপের স্বাদ ভোলা যায় না। ফ্যাক্টরিতে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় প্রতিদিনই আমি এখান থেকেই বাড়ির জন্য চপ কিনে আনি। বাড়ির সকলেও এই দোকানের চপ খুব পছন্দ করে’। উমা ও বিশ্বজিৎ নিজেদের পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘দোকানের সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না। কিভাবে চপ তৈরি করতে হয় তাও জানতাম না। আস্তে আস্তে সবটাই শিখেছি। জীবনে নিজের পায়ে দাঁড়াতে গিয়ে অনেক লড়াই করেছি। তবুও কখনও হেরে যায়নি। প্রভু জগন্নাথের আশীর্বাদে দোকানে ক্রেতা ভালোই হয়। এখন সংসার চালাতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। মেয়েরও বিয়ে দিয়েছি। ওঁর একটি সন্তান রয়েছে’।




Leave a Reply

Back to top button