চোখের আলোয় দেখেছিলেম…ইচ্ছেশক্তি আর সাহসে ভর করেই মানুষ গড়ছেন দৃষ্টিহীন সঞ্জয় স্যর
ছকে বাঁধা পথে এগোয়নি তাঁর জীবন। জন্ম থেকেই প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেছেন। রুখে দাঁড়িয়েছেন দাঁতে দাঁত চেপে। জয় করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে।

এ যেন ব্ল্যাক সিনেমার বাস্তব রূপ।
ছকে বাঁধা পথে এগোয়নি তাঁর জীবন। জন্ম থেকেই প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেছেন। রুখে দাঁড়িয়েছেন দাঁতে দাঁত চেপে। জয় করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সাহসে ভর করেই বর্ধমানের সঞ্জয় কুমার গোস্বামী আজ আদর্শ শিক্ষক।
সঞ্জয়বাবু জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়স্বজনের অবহেলার স্বীকার। তবে গায়ে মাখেননি। বরং সংকল্প নিয়েছেন কিছু করে দেখানোর। সেই কাজে তিনি সফল। আজ তিনি পানাগড়ের রেলওয়ে কলোনির উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। ছাত্রছাত্রী থেকে সহকর্মী, তাঁর থেকেই প্রেরণা পান।
কলকাতার ব্লাইন্ড স্কুলে পড়াশোনা করেছেন সঞ্জয়বাবু। মাধ্যমিক দিয়েছেন সেখান থেকেই। এরপর ভর্তি হল কুলটির উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে। পরে আসানসোলের বিবি কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করেন। পুরুলিয়া থেকে বিএড।
এরপর শুরু হয় কর্মজীবন। ২০০৫ সালে স্কুল সার্ভিস পাশ করে পানাগড়ের রেলওয়ে কলোনির উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘দৃষ্টিহীন হওয়ায় অনেক সংশয় নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলাম। প্রথম দিকে মানিয়ে নিতে সমস্যা হত। কিন্তু ধীরে ধীরে সব বাধা কাটিয়ে উঠি’।
পড়ানোর পাশাপাশি আবৃত্তি ও কম্পিউটার চালানোতেও সমান দক্ষ সঞ্জয়বাবু। গানবাজনাও করেন। দূরদর্শনে প্রতিবন্ধী শিল্পী হিসেবে গানের অনুষ্ঠানও করেছেন। স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দায়িত্বও থাকে তাঁর কাঁধে। ছাত্ররা বলছেন, ‘সঞ্জয় স্যর দৃষ্টিহীন হলেও পড়া বুঝতে কোনও অসুবিধা হয় না। একবারে বুঝতে না পারলে বারবার বুঝিয়ে দেন’।