বিদ্যা ভার্সাস রোনাল্ডিনহো ! অন্যদিকে দিদি বনাম শাহ। পুজো মানেই কি তবে ক্ষমতার প্রয়োগ

দ্বিতীয়ায় লেবুতলা পার্ক সাক্ষী হলো ছোটখাটো ফুটবল ময়দানের। যেখানে গোলকিপার সুজিত বোস আর অন্যদিকে রোনাল্ডিনহো।

কলকাতা : দ্বিতীয়ায় লেবুতলা পার্ক সাক্ষী হলো ছোটখাটো ফুটবল ময়দানের। যেখানে গোলকিপার সুজিত বোস আর অন্যদিকে রোনাল্ডিনহো। রোনাল্ডিনহোর এক শটে কুপোকাত হলেন সুজিত বোস। পুজোর আগে এইভাবে রোনাল্ডিনহোকে পেয়ে চারিদিকে আনন্দের সোরগোলে মেতে উঠেছে।দুর্গা পুজো,রাজনীতি,উদ্বোধন পর্ব,দ্বিতীয়া,তৃতীয়া,কলকাতা

দ্বিতীয়ার সন্ধ্যায় লেবুতলা পার্কে পুজো উদ্বোধন করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।তাঁর সাথে রয়েছেন কলকাতায় বিজেপির কাউন্সিলর সজল ঘোষ।দুর্গা পুজো,রাজনীতি,উদ্বোধন পর্ব,দ্বিতীয়া,তৃতীয়া,কলকাতা

তৃতীয়ার বিকেলে চেতলার পুজো উদ্বোধন হলো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল মোডে উপস্থিতির সাথে। এ পারে মন্ত্রী তথা চেতলা অগ্রণীর পুজোর কর্ণধার ফিরহাদ হাকিম। সঙ্গে অপর মন্ত্রী শশী পাঁজা। তাঁর সঙ্গে বিধায়ক, কাউন্সিলর, এলাকার বিবিধ নেতা।

তবে তার আগেই তালিকায় রয়েছেন বিদ্যাবালান। যাকে ঘিরে তুমুল উচ্ছ্বাস। সাথে তার বিখ্যাত ডায়লগ ‘সাকসেসফুল হোনে কে লিয়ে সিরফ তিন চিজো কি জরুরত হ্যা – এন্টারটেইনমেন্ট এন্টারটেইনমেন্ট এন্টারটেইন”।দুর্গা পুজো,রাজনীতি,উদ্বোধন পর্ব,দ্বিতীয়া,তৃতীয়া,কলকাতা

পঞ্জিকা মতে এ বছরে দুর্গাপুজোর ষষ্ঠী তিথি শুরু ১৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার (১ কার্তিক) রাত ১২টা ৩৩ মিনিটে। সেটাই পূজা শুরুর সময়। হিন্দু রীতিতে ‘বোধন’ দিয়েই পুজো শুরু হওয়ার কথা। পণ্ডিত সুরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য সঙ্কলিত ‘পুরোহিত দর্পণ’ বলছে, ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় ‘ষষ্ঠ্যাং সায়াহ্নে বোধয়ামি বৈ’ মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে দেবীপূজার বোধন হবে। এর পরে ‘অধিবাস’। তার পরে ‘পূজারম্ভ’।

আসলে গত কয়েক বছর ধরেই পুজো উদ্বোধনকে ঘিরেই পঞ্চমীর জায়গায় পুজো এগিয়ে এসেছে মহালয়ারও আগে। পিতৃপক্ষে উদ্বোধন ঠিক না বেঠিক, তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে লড়াই হচ্ছে বটে। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে যারা তর্কবিতর্কের মধ্যে যাচ্ছেন তারাই আবার পূজোর প্রতিটি বিষয়কে উৎসাহের সঙ্গে উপভোগ করছেন।

আসলে মহালয়ার আগের থেকেই দুর্গাপুজোর উদ্বোধন এ বিষয়টি এখন একটি রাজনৈতিক বিষয়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে পুজোর আগেই উদ্বোধন যেন এক প্রতিযোগিতার রূপ নিয়েছে। সেই দৌড় প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তবে প্রতি বছরের মতো এবছরের তিনি সমস্ত জায়গার উদ্বোধন সেরেছেন ভার্চুয়াল মোডে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে পৌঁছাতে পারেননি যত্রতত্র উদ্বোধনের জন্য। তাই ভার্চুয়াল মোডেকে কেন্দ্র করেই তিনি সেরেছেন উদ্বোধন পর্ব।

মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে বিধানচন্দ্র রায়, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়েরা বিভিন্ন নামী পুজোর প্যান্ডেলে গিয়েছেন শোনা গেলেও তাঁরা উদ্বোধনে যোগ দিতেন বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। বাম জমানায় জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদেরও পুজোর মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হয়েছে দলীয় বিশ্বাসের বাধ্যবাধকতায়। তবে তাঁরা বেঁধে রাখতে পারেননি সুভাষ চক্রবর্তীকে। ২০০৪ সালে বেলেঘাটায় মন্টু সান্যালের দুর্গাপুজো উদ্বোধন করেছিলেন সুভাষ। যিনি মনে করতেন, বাঙালির বৃহত্তম উৎসবের সঙ্গে দলের দূরত্ব রাখাটা কৌশলগত ভুল। তাতে পার্টি ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে থাকবে। সুভাষ-ঘনিষ্ঠেরা বলেন, তিনি নাকি এমনও মনে করতেন যে, ভারতে কোনও দিন বিপ্লব এলে জাতীয় উৎসব হবে দুর্গাপুজো।

তবে এর পাশাপাশি রাজনীতির তকমা থাকলেও কলকাতার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে । দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজ্ঞ পুজোকর্তার কথায়, ‘‘যত জাঁকজমক, তত প্রচার। যত প্রচার, তত বিজ্ঞাপন। যত বিজ্ঞাপন, তত স্পনসর। যত স্পনসর, তত বাজেটবৃদ্ধি। এটা একটা চক্রের মতো। প্রতি বছর যার বহর বাড়তে থাকে।’’

তবে একটা সমেও ছিল যখন উদ্বোধনের জন্য কোনও সাহিত্যিক বা রামকৃষ্ণ মিশনের কোনও সন্ন্যাসীর হাতে। অনেকে ব্যতিক্রমী পথে হেঁটে এলাকার কোনও কৃতী পড়ুয়াকে দিয়েও বড় মাপের পুজোর উদ্বোধন করিয়েছেন। কিন্তু সেইসব পথ চুকেছে । অন্যদিকে অধিকাংশ উদ্যোক্তা মনে করেন, নাহ্। উদ্বোধনই আসল। কারণ, উদ্বোধনেই পুরো পুজোর সুর বেঁধে দিতে হয় এখন। তখন থেকেই শুরু হয় ভিড় টানার লড়াই। এবং সে লড়াই হয় খ্যাতনামীদের টানতে পারার নিরিখে।

কিন্তু এখন যুগ এসেছে বিখ্যাত কোনো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতা-অভিনেত্রীকে কিংবা কোনো ফুটবলার কে আমন্ত্রণ জানিয়ে নানান পুজো প্যান্ডেলের পুজোকে উদ্বোধন করা। তবে কি সাংস্কৃতিক নিয়মের চেয়ে স্বেচ্ছাচারিতাই প্রধান?




Leave a Reply

Back to top button