গায়ের মাঝে জীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে বিভূতি বাবুর শ্বশুর বাড়ি
গায়ের মাঝে পোড়ো বাড়ির রূপ নিয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্বশুর বাড়ি

মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। বেড়ার ও পারে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা। এ পারে বসিরহাটের পানিতর গ্রাম। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী। সুন্দর গ্রামটি অবশ্য আর পাঁচটা সীমান্ত গ্রামের মতো নয়। বসিরহাটের এই গ্রামেই ছিল প্রকৃতিপ্রেমিক লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্বশুরবাড়ি। সেই সুবাদে বেশ কয়েক বার পানিতর গ্রামে এসেছিলেন বিভূতিবাবু। এই গ্রামের মেয়ে গৌরীদেবীকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ওই গ্রামেই ছিল বিভূতিভূষণের পূর্বপুরুষদের বাস। গ্রামের জামাইকে নিয়ে নানা মধুর স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে পানিতরের এখানে-ওখানে। কিন্তু বহু স্মৃতি বিজরিত সেই বাড়ি এখন ভগ্নপ্রায়। অবস্থা এমনই যে সংস্কার না হলে যে কোনও দিন সেটি ভেঙে পড়তে পারে।তবে সেই বিয়ে বেশি দিন টেঁকেনি। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই গৌরীদেবীর মৃত্যু হয়। তবে কিন্তু পানিতরের স্মৃতি কোনও দিন পিছু ছাড়েনি বিভূতিবাবুর৷ তাঁর বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে এই গ্রামের ছবি।
বিভূতিবাবুর সেই শ্বশুরবাড়ি এখন যেন পোড়ো বাড়ি। কারও পা পড়ে না। দরজা-জানলা উধাও। তবে পানিতরের এই বাড়ি তাঁর কাছে শুধু শ্বশুরবাড়ি নয় যেন এক অনন্য স্মৃতি বিজড়িত স্থান। সেই স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতে রাজ্য সরকার থেকে হেরিটেজ ঘোষণা করার পর নতুনভাবে গৌরিদেবী বাড়ি সংস্কার করা হলেও এখনও অধরা পড়ে আছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্ত্রী গৌরী দেবী বাড়ি।যে দালানে দুর্গাপূজা হত সেই দালানটা এখনো প্রায় ভগ্নদশা রাজ্য সরকার থেকে হেরিটেজ ঘোষণা করার পরেও এই দালানটিকে কোন সংরক্ষণ করা হয়নি। কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই বাড়িতে বসে একাধিক উপন্যাস লিখেছে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রাজ্য সরকার থেকে কোন দেখভাল করা হচ্ছে না।এলাকাবাসীর অভিযোগ গৌরীদেবীর বাড়িতে সন্ধ্যা হতেই চলছে দুষ্কৃতীদের আড্ডা। অন্ধকারাচ্ছন্ন পড়ে আছে এই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্বশুরবাড়ি।লাইটপোস্ট থাকলেও জ্বলেনা আলো।ভারত-বাংলাদেশ পানিতরে সীমান্তে এই বাড়িটিতে একসময় সীমান্ত পেরিয়ে ওপার বাংলার মানুষজন দেখতে আসত এই গৌরী দেবীর বাড়ী।
তবে এলাকার কয়েকজন আজও বিভূতি চর্চাকে টিঁকিয়ে রেখেছেন। তাঁদের অন্যতম আনন্দ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দূর থেকে অনেকেই ওই বাড়ি দেখতে আসেন। কিন্তু পোড়ো বাড়ি দেখে হতাশ হন।’’ বসিরহাটের বাসিন্দা বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়ের আত্মীয় হতেন বিভূতিবাবু। সেই বঙ্কিমবাবু বলেন, ‘‘পিসেমশায়ের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আমরা চাই রাজ্য সরকার বাড়িটি হেরিটেজ ভবনের মর্যাদা দিক।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই বাড়িটি সংস্কার করে সেখানে সংগ্রহশালা এবং সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে আর্জি জানানো হয়েছে।