Rabi Ghosh – যুগ যুগ ধরে বাঙালি হৃদয়ে অমলীন রয়েছে অভিনয়, তিনিই বিখ্যাত অভিনেতা রবি ঘোষ

অরুণিমা সরকার, কলকাতা- ‘আমার আর ফেরার দরকারই হবে না’- গল্প হলেও সত্যি’র (Golpo Holeo Sotti) সেই ডায়লগ আজও যেন কানে বাজে। কিন্তু বাংলা সিনেমা (Bengali Cinema) কি কোন দিন সেই কিংবদন্তি অভিনেতাকে ভুলতে পারবে? বাংলা সিনেমাপ্রেমিরা কি কোন দিন মেনে নেবে তার ‘আর ফেরার দরকার নেই’? সে কিংবদন্তী রবি ঘোষ (Rabi ghosh)। কোনও পরিস্থিতিতেই বাংলা সিনেমার (Bengali Cinema) সঙ্গে কোনও আপস না করা সেই রবির গল্প।

‘ঠগিনী’ ছবির শ্যুটিং চলছে, সেদিন পৌঁছতে বেশ খানিকটা দেরীই হয়ে গিয়েছিলো তাঁর। কারণ, মাতৃবিয়োগ। লাঞ্চ ব্রেক পর্যন্ত টানা কাজ করে চলছেন তিনি, কিন্তু কাউকে কিছুই বুঝতে দেননি। কাজ শেষে ইউনিটের সকল সদস্যরা জানতে পেরেছিলেন যে তিনি সদ্য দাহ করে এসেছেন তাঁর মা’কে। কাজের প্রতি ঠিক এতটা পরিমাণই উৎসর্গিত (dedicated) ছিলেন তিনি। এখন যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক অন্যতম কিংবদন্তি রবি ঘোষ (Rabi Ghosh)। যিনি কোনও পরিস্থিতিতেই কখনও তাঁর কাজের সঙ্গে কোনও আপস করেননি।

বাংলার কিংবদন্তি রবি ঘোষ,বাংলা চলচ্চিত্রতে রবি ঘোষ,রবি ঘোষের জীবন,কে ছিলেন রবি ঘোষ,Bengali legend Ravi Ghosh,Ravi Ghosh in Bengali movies,Ravi Ghosh's life,who was Ravi Ghosh

মা জ্যোৎস্না রানী দেবী কোচবিহারের সুনীতি অ্যকাডেমি থেকে তৎকালীন সময়ে বৃত্তি পেয়েছিলেন। বাবা জীতেন্দ্রনাথ কর্মসূত্রে থাকতেন কলকাতার মহিম হালদার স্ট্রিটে, তবে তাঁদের আসল বাড়ি ছিলও বাংলাদেশে। ১৯৩১ সালের ২৪ নভেম্বর জন্ম হয় বাংলা চলচিত্র জগতের অন্যতম নক্ষত্র রবি ঘোষের। কোচবিহারের জেনকিন্স স্কুলে পড়াশোনা শুরু হলেও, কলকাতার সাউথ সাবার্বান মেন স্কুল থেকে ভারতের স্বাধীনতার বছরে (১৯৪৭ সালে) ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন রবি। স্কুলে পড়াকালীন তার সহপাঠী ছিলেন তরুণ কুমার, মহানায়ক উত্তম কুমারের ভাই।

আশুতোষ কলেজে থেকে আইএসসি পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর, ওই কলেজেই রাত্রিকালীন বিভাগে বি.কম পড়ার জন্য ভর্তি হন যুবক রবি। অভিনয় (Acting) দক্ষতাটা আসলে তাঁর জন্মগত। আশুতোষ কলেজে পড়াশোনা চলাকালীন কলেজের ছাদেই জোর কদমে চলত তাঁর নিজস্ব দল ‘বন্ধুমন’ -এর মহড়া। অভিনয় জগতে আসার পর ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ সিনেমাটা করার সময় তাঁর পরিচয় হয় অনুভা গুপ্তের সঙ্গে। সেই সময় রবি ঘোষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অনুভা দেবীর অপরিসীম শুশ্রূষায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।

বাংলার কিংবদন্তি রবি ঘোষ,বাংলা চলচ্চিত্রতে রবি ঘোষ,রবি ঘোষের জীবন,কে ছিলেন রবি ঘোষ,Bengali legend Ravi Ghosh,Ravi Ghosh in Bengali movies,Ravi Ghosh's life,who was Ravi Ghosh

অনুভা দেবীর সঙ্গে গড়ে ওঠা তাঁর সম্পর্কটা বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে তাঁদের সম্পর্ক পরিণতি পেলেও, পরলোকগতা হন অনুভা দেবী। ১৯৮২ সালে অর্থাৎ এই ঘটনার প্রায় এক দশক পর তিনি পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বৈশাখীদেবীর সঙ্গে। পর্দার রবি ঘোষের সঙ্গে বাস্তব এর রবি ঘোষের তফাৎ ছিলও চোখে পড়ার মতো। বাস্তব এর রবি ঘোষ ছিলেন যথেষ্ট গুরু গম্ভীর একজন ব্যক্তি। তাঁর দিন কাটতো বিবেকানন্দ এবং রামকৃষ্ণ দেব সংক্রান্ত নানা ধরণের বই পত্র পড়ে। পরনিন্দা-সমাচলনা-কটু কথা বলা, এই সমস্ত বিষয় থেকেই সর্বদা নিজেকে দূরে রাখতে পছন্দ করতেন তিনি।

কলেজে পড়াকালীন তিনি ব্যায়ামাগারে (Gym) গিয়ে নিয়মিত শরীরচর্চাও করতেন। তবে পরবর্তীতে কালে আর জিমে না গিয়ে মর্নিং ওয়াক বং বাড়িতেই শরীরের করতেন। সত্যজিৎ রায়ের অস্কার না পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় যারা রয়েছেন রবি ঘোষ তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন। রবি ঘোষ তার অভিনয় দক্ষতার কারণে জীবিতকালে যা সন্মান পেয়েছেন আজও তা অব্যাহত। অভিনয় জগতে আসার আগে তিনি চেয়েছিলেন বডিবিল্ডার হতে, সত্যিই যদি তা হতো তাহলে আমরা পেতাম না বাংলা চলচ্চিত্রের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে।

অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় তাকে ‘অঙ্গার’ নাটকে অভিনয় করতে দেখেন। ১৯৫৯ সালে তিনি আহবান চলচ্চিত্রে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। তপন সিনহার গল্প হলেও সত্যিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সবার নজরে আসেন। ১৯৬৮ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় নির্মিত ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ চরিত্রে তার অভিনয় চলচ্চিত্র-জগতে একটি মাইলফলক। একে একে তিনি অভিযান (১৯৬২), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), হীরক রাজার দেশে (১৯৮০), গুপী বাঘা ফিরে এলো (১৯৯১), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩) সহ বেশকিছু উপমহাদেশ-খ্যাত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি নিধিরাম সর্দার চলচ্চিত্রটি পরিচালনাও করেন। তিনি একজন বিখ্যাত থিয়েটার অভিনেতাও বটে। ১৯৭০ সালে তিনি গুপী গাইন বাঘা বাইন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভালেও অংশ নেন। তিনি চলাচল থিয়েটার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। 8 ঠা ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭ জীবনাবসান হয় এই চরিত্রাভিনেতার।




Back to top button