School Reopening- পড়ুয়াদের ফের বিদ্যালয়মুখী করে তুলতে উদ্যোগ নিল এই জেলার শিক্ষকেরা
স্কুল খুললেও স্কুল ব্যাগটা এখনও ঘরের কোণেই পড়ে থাকে। রাজ্য সরকার ১৬ই নভেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সহ নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অনিমেষের(নাম কল্পিত) স্কুলে যেতে ভালো লাগে না। অনিমেষ জানে ‘ওঁ’ একা নয়। ওঁর বাকি সব বন্ধুদেরও একই সমস্যা। স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে আর ভালো লাগে না। বাড়িতে থেকে হাতে এই ৫ ইঞ্ছির স্মার্ট ফোনটা দিয়ে তো বেশ চলছিল। কিন্তু হটাৎই স্কুল খুলে গেল, অনিমেষ শুনেছিল করোনার সংক্রমণ নাকি কমে যাচ্ছে তাই রাজ্য সরকার এই সিধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এখন যে ওঁর আর স্কুল যেতে ভালো লাগে না। মোবাইলটা হাতে পাওয়ার পর থেকেই গেম খেলার প্রতি একটা বেশ গভীর আসক্তি জন্মেছে।
অনিমেষ জানে ওঁর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এই আসক্তি সমন্ধে জ্ঞাত। প্রসঙ্গত, গত দেড় বছর ধরে রাজ্য তথা দেশে করোনার বাড়বাড়ন্তের জেরে স্কুল-কলেজ বন্ধ। শিক্ষার এক নয়া মাধ্যম এখন অধিকাংশ পড়ুয়াদের হাতে, তাহল অনলাইন পড়াশোনা। আর শিক্ষা প্রসারের এই নয়া স্রোতের বা বলা যেতে পারে নয়া ঢেউয়ে গা ভাসাতে হচ্ছে সকল পড়ুয়াদেরই। যার জেরে রীতিমতো বাধ্যই হয়ে অভিভাবকদের তার দুধে-ভাতে সন্তানটির হাতে তুলে দিতে হচ্ছে স্মার্ট ফোন। যার ফলে এখন বিদ্যালয় খুলে গেলেও মহা বিপদে পড়েছেন অভিভাবকরা। অধিকাংশ পড়ুয়াদের মধ্যেই তৈরি হয়েছে প্রথাগত পড়াশোনা বা বলা যেতে পারে, স্কুলে গিয়ে পড়াশোনার প্রতি অনীহা। এই অনীহা দূর করতে এবং পড়ুয়াদের বিদ্যালয়মুখী করে তুলতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। খাতায়-কলমে দেখতে গেলে চোখে পড়ছে শিক্ষাদপ্তরের নতুন নির্দেশিকাতেও বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার তলানিতেই।
এই পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিদর্শক অমর কুমার শীল দাবি করেন, “নতুন নির্দেশিকার ফলে সপ্তাহের শেষ দিনে কিছু বাড়তি পড়ুয়া স্কুলে এসেছে। জেলার বিদ্যালয়গুলির প্রধান শিক্ষকদের কাছে আবেদন করা হয়েছে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করে তুলতে উদ্যোগ নিতে।” এই প্রেক্ষাপটে আবার মনোবিদদের ধারণা, “করোনা পর্বে প্রায় সকল স্তরের মানুষের মধ্যেই কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়েছে কৈশোর থেকে বেড়ে ওঠা ছেলে-মেয়েদের মধ্যে। এই করোনা পর্বে কম বয়সীদের মধ্যে দেখা গেছে পড়াশোনার প্রতি অনীহা পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমে পড়াশোনা এগিয়ে রাখার জন্য তাঁদের হাতে এসে গেছে স্মার্ট ফোন। যার জেরে মোবাইলের প্রতি তৈরি হয়েছে আসক্তি এবং বিদ্যালয়ের প্রতি নিরাসক্তি, এমনটাই মতামত অভিভাবকদের।
আরও পড়ুন…..New Variant of corona virus – সংক্রমণ রুখতে ঢাল স্বাস্থ্যমহল, রাজ্যবাসীকে আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর
উল্লেখ্য, এই বিষয়ে পন্ডিতপুরের বাসিন্দা ওয়াসেকুল ইসলাম, জিয়াগঞ্জের ববি সিং চাওয়ালার বক্তব্য, “বাড়ির ছেলে মেয়েরা আর আগের মতো এক ডাকে সাড়া দেয় না। মোবাইলের নেশায় বুঁদ ওঁরা। স্কুল খুললেও নেই স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ।” পাশাপাশি, খাতায়-কলমে দেখতে গেলে লালগোলার লস্করপুর হাইস্কুলে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশই পড়ুয়া উপস্থিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর ধারণা এই অনুপস্থিতির একটিই মূল কারণ তা হল মোবাইল আসক্তি। জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, “দু-এক’দিনের মধ্যেই এলাকায় বিদ্যালয়ে আসার জন্য মাইক মাধ্যমে প্রচার করা হবে।” অন্যদিকে, বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপস্থিতি বাড়াতে শনিবার থেকে এলাকায় অভিযান শুরু করবেন নবগ্রামের সিঙ্গার হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ, এমনটাই দাবি করেছেন সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মন্ডল।