জন্ম যাঁর আছে মৃত্যুও তাঁর আছে নস্টালজিয়ার দশ বছরে ‘লাঞ্চবক্স’
জন্মদিন আশা মানেই এক ধাপ করে মৃত্যুর দিকে যাওয়া। এইরকমই মনে করতেন ইরফান।

শুভঙ্কর, কলকাতা: জন্মালে তো মৃত্যু নিশ্চিত, এই কথাটা যেন রন্ধে রন্ধে সত্য। কেউ যদি চায় আপামর জীবন পৃথিবীতে থাকবেই কিন্তু সে পারবে না। তাকে একদিন না একদিন মায়া ত্যাগ করতেই হবে। ভাবছেন হঠাৎ করে আজ জীবন মৃত্যু নিয়ে কথা কেন বলছি? কথাটা হবে অভিনেতা ইরফান খানকে নিয়ে। ভাবছেন তাকে নিয়ে কথা বলব আর জীবন মৃত্যু এই দুটোর মধ্যে যোগসূত্র কি? যোগসূত্র একটাই তিনিও পৃথিবীর মাটি আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন। এমনকি তিনি জন্মদিন পালনেও বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি মনে করতেন প্রতিবছর জন্মদিন আশা মানে এক ধাপ করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। যে মানুষটা প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল পৃথিবীতে থাকার সেই মানুষটাকেই মায়া ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে মারণ রোগ ক্যান্সার। আজ থেকে তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালে ২৯ শে এপ্রিল তিনি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। তিনি চলে গিয়েও কোথাও যেন আজও সকলের মনে স্মৃতিতে থেকে গেছেন। ইরফানের অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমা ‘দ্যা লাঞ্চবক্স’। এই সিনেমাটাও কোথাও যেন তার জীবনের সাথে কিছুটা হলেও মিলেমিশে রয়েছে।
২০১৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় দ্যা লাঞ্চবক্স। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন রীতেশ বত্রা। ছবিটি তৈরি হয়েছিল ছাপোসা এক সাধারণ মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করে। আমরা যারা সাধারণ জীবন যাপন করি তাদের হয়তো কেউই মনে রাখেন না। আর এর প্রতিনিধি হিসেবেই দ্যা লাঞ্চবক্সে ছিল সজন ফার্নান্ডেজ। কারণ তিনি সেখানে ছিলেন সাধারণ একজন চাকরিজীবী ব্যক্তি। তিনি স্বপ্নেও যেটা ভাবতে পারেন না হঠাৎ করেই তার জীবনে সেটাই ঘটে। অর্থাৎ সাদামাটা জীবনে আলো ফোটাতে আসে ইলা। ধীরে ধীরেই তাদের অজান্তে দুটি পথ এক হয়ে যায়। এই দুটি পথ এক হওয়ার সাক্ষী হয়ে কে থেকেছিল জানেন? আমাদের মত কোন মানুষ নয়। সাধারণ একটা জড়বস্তু লাঞ্চবক্স। সেও অনেক কিছুর সাক্ষী হয়ে ছিল। ভাবছেন কিভাবে একটা লাঞ্চ বক্স দুটি অজানা মানুষের প্রেমে সাক্ষী হল? আসলে বিষয়টা হল এই লাঞ্চবক্সে করেই ইলা নিজের পছন্দমত রান্না স্বজনের জন্য পাঠাতো। আর ধীরে ধীরেই জন্ম নিয়েছে প্রেম।
লাঞ্চ বক্সের দশমতম জন্মদিনে ইরফানের প্রিয় বন্ধু ও স্ত্রী সুতপা সিকদার এই গল্পটাকে আঁকড়ে ধরেছেন। কারণ এই গল্পের এক একটা অধ্যায় তার জীবনের সাথেও মিলে যায়। স্বজনের মতো ইরফানের জীবনেও লাঞ্চবক্স যেন একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও মাধ্যম হয়ে ওঠে। সিনেমা ও জীবন সুতোপার চোখে এখন এক হয়ে মিশে গেছে। পুরনো দিনের স্মৃতি ছুঁয়ে সুতপা বলেন,“ কে বা জানত ছোট্ট একটা এই লাঞ্চবক্স তার জীবনে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে”।