খেতে ভালোবাসতেন লুচি, হাসিই ছিল জীবনের প্রাণবায়ু, রসিক রবীন্দ্রনাথের এই রূপের অবাক হবেন আপনিও

জয়িতা চৌধুরি, কলকাতাঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মদিন ( birth anniversary ) পালন হচ্ছে আজ সারা বাংলা জুড়ে। আর রবীন্দ্রনাথ ( Rabindranath Tagore ) মানেই বাঙালীর আবেগের এক পবিত্র প্রতিচ্ছবি। তাঁর ছবি দেখে আপাত ভাবে গম্ভীর প্রকৃতির মনে হলেও বাস্তব জীবনে কবিগুরু ছিলেন বেশ কৌতুক প্রিয়। জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি একদা একসঙ্গে প্রাতরাশ খাচ্ছিলেন। গান্ধীজি লুচি পছন্দ করতেন না। তাই তাঁকে ওটস খেতে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর নিজে খাচ্ছিলেন গরম গরম ফুলকো লুচি। তা দেখে গান্ধীজি ( Gandhiji ) কবিগুরুকে বলেছিলেন, “গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ।” সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন বিষই হবে, তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাটবছর যাবত এই বিষ খাচ্ছি।”
জমিদার পরিবারে জন্ম হলেও কবিগুরু (Rabindranath Tagore) ছিলেন একদম মাটির মানুষ। সুযোগ পেলেই তিনি তার ভৃত্যদের সাথে হাসিঠাট্টাতে মেতে উঠতেন। একবার রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore) গান শেখাচ্ছিলেন তার ছাত্রছাত্রীদের। গাইছিলেন, ‘হে মাধবী, দ্বিধা কেন?’ তখন তার বাড়ির এক ভৃত্য বনমালী আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে তার ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে। ভাবছিলেন ঘরে ঢোকা ঠিক হবে কি হবে না। সেই সময় রবীন্দ্রনাথ বনমালীর দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠলেন, ‘হে মাধবী, দ্বিধা কেন?’ তার এই গান শুনে আইসক্রিমের প্লেট গুরুদেবের সামনে কোনোমতে রেখে লজ্জায় ঘর থেকে বেরিয়ে গেল বনমালী। আর তা দেখেই কবিগুরু বলেছিলেন “বনমালীকে যদিও মাধবী বলা চলে না। তবে তার দ্বিধা মাধবীর মতোই ছিল। আর আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে দ্বিধা করা মোটেই ভালো নয়।”
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore) ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীত রচয়িতা-সুরকার, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, সংগীতশিল্পী ও দার্শনিক। তিনি ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আজ যাকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় রূপে সকলে চেনে। ততকালীন শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক বিধুশেখর শাস্ত্রীকে রবীন্দ্রনাথ একটি ছবি পাঠান। সেই চিঠিতে তিনি লেখেন “আজকাল আপনি কাজে অত্যন্ত ভুল করছেন। এটা খুবই গর্হিত অপরাধ। এজন্য আগামীকাল বিকেলে আমি আপনাকে দণ্ড দিব।” কথা শুনে বেশ চিন্তায়ে পরেন অধ্যাপক। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে কবি একটি মোটা লাঠি হাতে আবির্ভূত হন। এবং সেটি বাড়িয়ে ধরে বললেন, “এই নিন আপনার দণ্ড! সেদিন যে এখানে ফেলে গেছেন, তা একদম ভুলে গেছেন আপনি!”
আরও পড়ুনঃ হেরে গিয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছি! রবীন্দ্রনাথের গানে পেয়েছি বেঁচে থাকার জীবনীশক্তি, কেন এমন বললেন ঋতু?
সময়ের সাথে সবকিছু বদলে গেলেও বদলাননি কবিগুরু। বদলায়নি তাঁকে জড়িয়ে থাকা বাঙালির পাহাড় সমান আবেগ। জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত মিলেমিশে ছিলেন সাধারণের সাথে। সারাটা জীবন অতিবাহিত করেছেন সমাজ গঠনে। স্বাধীনতা আন্দোলনে ‘স্বদেশী সমাজ’ গঠনে ভারতবর্ষের মূল কেন্দ্র গ্রাম্যসমাজ গঠনের ব্রতকে প্রধান কর্তব্য বলে চিহ্নিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি বলতেন, “রাষ্ট্রক্ষমতায় ভাগ বসানোর চেয়ে সামাজিক প্রাধান্যের কর্মোদ্যোগ ভারতবর্ষের স্বরাজসাধনার পক্ষে বিশেষ জরুরি।”
ইংরেজির ১৮৬১ সালের ৭ মে ও বাংলার ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখের কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশ্বকবি। বিশ্বসাহিত্যের তার অবদান অনস্বীকার্য । বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসারে তাঁর অবদান অসামান্য। বাঙালির মননে, সংস্কৃতি-কৃষ্টিতে তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন। শুধু সাহিত্য ও সংস্কৃতিই নয়, দর্শন, পরাধীন ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ সত্যজিত রায়ের থেকে অভিনয় শিখছেন ছোট্ট সোহম, বিরল ভিডিও শেয়ার করলেন অভিনেতা, রইল ভিডিও