শুধুই রুপঙ্কর নয়! গান চুরির অভিযোগ থেকে রেহাই পাননি স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও

রাখী পোদ্দার, কলকাতা : ‘হু ইজ কে ম্যান’ এখন অতীত। বর্তমানে ফের এক নতুন বিতর্কে জড়ালেন গায়ক রূপঙ্কর বাগচী ( Rupankar Bagchi)। অন্যের গান চুরির অভিযোগ উঠেছে তাঁর উপর। নিউটাউন থানায় গায়ক রূপঙ্কর এবং কম্পোজার পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ইউটিউবার ( Youtuber ) মনোরমা ঘোষাল। বৃহস্পতিবার সকালেই নিউটাউনের ওই বাসিন্দা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁদের নামে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য তদন্তে নেমেছে নিউটাউন থানার পুলিশ ( Newtown Police Station )। বিশিষ্ট এক সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মনোরমা বলেন, কম্পোজার পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রূপঙ্কর বাগচীর নামে জেনারেল ডায়েরি করতে এসেছেন তিনি। ছয় মাস আগে তাঁর চ্যানেলে গানটা আপলোড করেছিলেন। কম্পোজার পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় পারিশ্রমিক নিয়েই তাঁর গানটি প্রোমোট করেন। তিনি তাঁকে এটাও বলেছিলাম যে এটা তাঁর সম্পূর্ণ নিজের গান। গানটি যাতে সকলের কাছে পৌঁছয় সেজন্য তিনি পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রমোশন করতে বলেছিলাম। তার জন্য উনি যথাযথ টাকা নিয়েছিলেন।

এরপর নাকি এক সপ্তাহ আগে থেকে পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় মনোরমা ঘোষালকে মেসেজ করতে শুরু করেন। কিছুদিনের জন্য গানটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে নিতে বলেন পার্থ। কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলেন রূপঙ্কর বাগচী ওই গানটি গাইছেন। ব্যাপারটা কনসিডার করার অনুরোধ করেন তিনি। মনোরমা ঘোষাল তখন বলেছিলাম, গান তাঁর প্যাশন। কোনওভাবেই এখানে আপোস করতে পারবেন না তিনি। এরপর উনি আর উচ্চবাচ্য করেননি। কিন্তু ২৯শে জুন গানটি ট্রেন্ড করতে শুরু করায় মনোরমা নিজের ইউটিউব চ্যানেলে চেক করার সময়েই দেখতে পান যে ‘সাগর তুমি’ গানটিতে স্ট্রাইক এসেছে। তা আর চলছে না। তিনি বলেন, সার্চ অপশনেও তাঁর গানটা আসছিল না। অথচ রূপঙ্কর বাগচী ( Rupankar Bagchi)র গানটি চলছে। বুধবারই রূপঙ্কর বাগচীর গানটি রিলিজ করেছে।

img 20220703 171032

এরপর গায়ক রূপঙ্কর বাগচীকে এবিষয়ে জানানো হলে তিনি বলেন যে, এ প্রসঙ্গে তাঁর কোনও বক্তব্য নেই। কারণ, তিনি কিছুজনের জন্য গান গেয়েছিলেন। কাদের জন্য গানটি গেয়েছিলেন সেটাও তিনি এই মুহূর্তে মনে করতে পারছেন না। এক ইউটিউবারের সঙ্গে সংস্থার সমস্যা হয়েছে সেটা শুনেছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, তাঁকে গানটি গাইতে বলা হয়েছিল। তাঁর কাজ গান গাওয়া। সেটাই করেছেন তিনি। যাঁরা গানটি রিলিজ করেছেন, তাঁরাই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে পারবেন। যে ইউটিউবার অভিযোগ করেছেন, তিনিও ব্যাপারটি ঠিক কিনা সেটা বলতে পারবেন।

 

Rabindranath Tagore
Rabindranath Tagore

তবে গান চুরির এই বিষয় নতুন নয়। এর আগেও এই অভিযোগ উঠেছে বহু শিল্পীদের বিরুদ্ধে। আর সেই অভিযোগের তালিকা থেকে বাদ পরেনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ( Rabindranath Tagore) নামও। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যার তৈরি করা গান আপামর বাঙালিরা শুনে ও গেয়ে থাকেন সশ্রদ্ধ চিত্তে। যে বাঙালি ভক্তিভরে পরম পূজনীয় ভেবে এর বিশুদ্ধতা রক্ষার চেষ্টা করে আপ্রাণ। তারাই হয়তো জানেন না যে, রবীন্দ্রনাথের এই বাইশ শ’ গানের অনেকগুলোই বিশুদ্ধ নয়, রবীন্দ্রনাথের মৌলিক গান নয়। অন্য কোনো গানের সুর থেকে সরাসরি নকল করা বা সেগুলোকে ভেঙেচুরে রবীন্দ্রনাথ নিজের মত করে নিয়েছেন, এমনটাই অভিযোগ উঠেছে বিশ্বকবির বিরুদ্ধে। দাবি করা হয় রবীন্দ্রনাথের এমন অসংখ্য গান আছে যেগুলি নেওয়া হয়েছে বিদেশী সুর থেকে, অনেক গান নেওয়া হয়েছে লোকসংগীত থেকে, অনেক গান আবার নাকি নেওয়া হয়েছে বাউল সুর থেকে। এমনকী বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতও ( National anthem of Bangladesh) নাকি চুরি করেই বানিয়েছে রবিঠাকুর।

শোনা যায়, গগন হরকরার সুর চুরি করে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( Rabindranath Tagore) গান বানিয়েছিলেন। শিয়ালদহের ডাক অফিসে চিঠি বিলানোর কাজ করতেন গগন। সেই সাথে কাজের ফাঁকে বাউল গান গাইতেন তিনি। “আমার সোনার বাংলা” গানের কথা রচনার আগে গগনের “আমি কোথায় পাবো তারে” গানের সুরটি রবীন্দ্রনাথকে করেছিল আলোড়িত। মুগ্ধ হয়ে এই সুরকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন। এই সুরে বিভোর হয়ে রবিঠাকুর তৈরি করেন এই অনবদ্য সঙ্গীত। এই সুর রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে এমন একটি গান লিখিয়েছিলেন যার কথায় প্রকাশ পেয়েছে স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা।




Leave a Reply

Back to top button