মহালয়ার ভোর শুধু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের, উত্তম কুমারকে ছেড়ে কথা বলেনি বাঙালি, কী হয়েছিল জানেন?
তিনি বাঙালির ‘গুরু’, এক ও অদ্বিতীয় উত্তম কুমার। বাঙালি তাঁকে আপন করে নিয়েছে সমস্ত সাংস্কৃতিক সত্তায়। সাধে কি আর পেয়েছেন ‘মহানায়ক’ তকমা।

তাঁর হাসিতে বাঙালি মেয়েরা পাগল। তাঁর চালচলন, কথা বলার ধরণ আজও নকল করে বাঙালি পুরুষরা। হ্যাঁ, তিনি বাঙালির ‘গুরু’, এক ও অদ্বিতীয় উত্তম কুমার। বাঙালি তাঁকে আপন করে নিয়েছে সমস্ত সাংস্কৃতিক সত্তায়। সাধে কি আর পেয়েছেন ‘মহানায়ক’ তকমা। কিন্তু একবার, ওই প্রথম এবং শেষ, কিন্তু একবার বাঙালি তাঁকেও প্রত্যাখ্যান করেছে। তীব্র প্রত্যাখ্যান।
দুর্গা পুজো, বাঙালির তেরো পার্বণের সবচেয়ে বড় পার্বণ। মহালয়া দিয়ে শুরু। আরও ভালো করে বললে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠ দিয়েই শুরু হয় বাঙালির দুর্গা পুজো। ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জরী…’ শুনে পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ। পরদিন থেকে শুরু দেবীপক্ষ। মহালয়া পিতৃপক্ষ আর দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ। শাস্ত্র ব্যাখ্যা যাই থাক, এই চণ্ডীপাঠ দিয়েই পুজোর আবাহন।
১৯৭৬ সাল। উত্তম কুমার তখন খ্যাতির শীর্ষে। আকাশবাণীতে গোপন বৈঠক বসল। ঠিক হল, এবছর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র নন, মহালয়ার ভোরে চণ্ডীপাঠ করবেন উত্তম কুমার। বাঙালির ম্যাটিনি আইডল। উত্তম কুমারের জন্য ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র স্ক্রিপ্ট লিখলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের প্রধান ডঃ গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়। মহালয়ার ভোরে বেজে উঠল রেডিও। উত্তম কুমারের কণ্ঠে বাঙালি শুনল ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম’।
কিন্তু এ কি! উচ্ছ্বাস কই? বাঙালি যে ক্ষেপে গেল। সমালোচনার ঝড় উঠল সর্বত্র। আকাশবাণীতে ভাঙচুর হল। অফিস থেকে চায়ের ঠেক – সব জায়গায় গালাগাল খাচ্ছেন উত্তম কুমার, ‘ছিঃ ছিঃ এ কী অনাচার’! অনেকের মনে হল, মহালয়ার ভোর কলুষিত হল। এ বার বুঝি অমঙ্গল কিছু হবে। একটা অনুষ্ঠানকে ঘিরে এমন আবেগ! ভাবতেও পারেনি আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ। এমন ঘটনা ভূভারতে আর ঘটেনি।
উত্তম কুমারের জনপ্রিয়তা আর ভালো অনুষ্ঠানের যুগলবন্দীতে নতুনত্বের স্বাদ দিতে চেয়েছিল আকাশবাণী। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে নতুন কাউকে জায়গা ছেড়ে দিতে আপত্তি ছিল না তাঁর। কিন্তু বাঙালি নিলে তো। উত্তম বাঙালির সমস্ত সত্তায় কিন্তু মহালয়ার ভোরটুকু একান্তই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের।