“তোমায় গুন্ডা দিয়ে মার খাওয়াব!”, সর্বসম্মুখে তরুণ মজুমদারকে এ কী বললেন দেবশ্রী রায়

অহেলিকা দও, কলকাতা : ‘কুহেলি’ ছবি দিয়েই তরুণ মজুমদারের ( Tarun Majumdar ) হাত ধরে হাতে খড়ি দেবশ্রী রায়ের ( Debashree Roy )। বলতে গেলে তাঁর আর এক বাবা তরুণ মজুমদার। তখন তিনি অনেক ছোট ছিলেন। সেই সময় তাঁর পরিচয় ছিল দেবশ্রী রায় নয়, তখন তাকে সবাই চিনত তাঁর আসল নাম চুমকি নামে। নাচ নিয়ে এগোনোর স্বপ্ন ছিল তাঁর, কিন্তু মায়ের ইচ্ছেকে সমর্থন করে অভিনয়কেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তরুণ মজুমদারের মৃত্যুতে তাঁর কথা স্মরণ করে অভিনয়ের ঘটনাগুলো দর্শকদের সাথে শেয়ার করেছেন দেবশ্রী রায় ( Tarun Majumdar )।
‘কুহেলি’ পর তরুণ মজুমদার তাঁকে ডাক পাঠান হিন্দি ছবি ‘বালিকা বধু’র জন্য। ঠিক মনে রেখে ডেকে পাঠালেন ছোট চুমকিকে। মায়ের সঙ্গে তিনি গিয়েছিলেন টালিগঞ্জের বাড়ি ‘সন্ধ্যানীড়’-এ। যাওয়ামাত্র তাঁর সন্ধ্যাদি তাকে আদর করে তাড়াতাড়ি কাছে টেনে নিলেন এবং বললেন, “আমি সাজিয়ে দেব। তার পর যে ভাবে দেখিয়ে দেব, সে ভাবে অভিনয় করবে। কেমন?”
সন্ধ্যাদি তাকে যত্ন করে বেনারসি পরিয়ে, চুল বেঁধে দিলেন। সংলাপও শিখিয়ে দিলেন। ঠিক সেইভাবেই তিনি সব ঠিকমতো বললেন। তনুদা সব দেখে তাঁর মাকে ডাকলেন এবং বললেন, “মিসেস রায়, আমি যে রকম ‘পাকা বাচ্চা’ চেয়েছিলাম চুমকি যে সে রকম নয়! ও এখনও খুবই সরল। মুখে-চোখে সেই সারল্যের ছায়া। ওকে দিয়ে তো আমার হবে না! আমার ‘পাকা বাচ্চা’ চাই।”
তখন অভিনেত্রী নিজের উপরে নিজে রেগে গিয়ে ভেবেছিলেন, কেন যে আর একটু পাকা হতে পারলেন না! তবে সেই আক্ষেপ ঘুচে যায় ‘দাদার কীর্তি’ ছবির সময়। সেবারে তাঁকেই স্থির করা হল বাণীর চরিত্রে। কিন্তু তাও এক জায়গায় বাধ সাধল। তরুণ মজুমদার ফের তাঁর মাকে বলেন, “আপনার মেয়ে আগামী দিনে আরও ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করবে। সেখানে তো চুমকি নাম মানাবে না! ওর নাম বদলাতে হবে।’’ মা তনুদাকে অনুরোধ জানালেন, ‘‘আপনিই তা হলে দায়িত্ব নিয়ে একটা নাম দিন। মৌসুমীর দিয়েছেন, মহুয়ার দিয়েছেন। আমার মেয়ের নতুন নাম না হয় আপনার হাতেই হোক”।
তাঁর মায়ের কথা মেনে ( Tarun Majumdar ) নিয়েছিলেন তরুণ মজুমদার। তাঁর হাত ধরেই ইন্ডাস্ট্রি পেল আগামীদিনের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়কে। তিনিই চুমকি নাম বদলে তাঁর নাম রাখলেন দেবশ্রী। এরপর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি দেবশ্রীকে। তরুণ মজুমদারের সঙ্গে একের পর এক হিট ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। দেবশ্রীর কথায়, “তরুণ মজুমদার যেমন আদর করতেন, তেমনই বকুনিও দিতেন। ‘দাদার কীর্তি’র সেটে নাকি তিনি রুল নিয়ে আসতেন। কোনও ভুল হলেই পিঠে পড়ত রুলের ঘা। এইভাবে নিজের হাতে অভিনয় শিখিয়েছেন তিনি।”
দেবশ্রী বলেন, “ছবির ( Tarun Majumdar ) একটি দৃশ্যের আগে হঠাৎ আমার ঠোঁটের দিকে নজর গেল কিংবদন্তি পরিচালকের। সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘ঠোঁটে কী মেখেছিস রে চুমকি?’ আমি তো ভয়ের চোটে বলেছি, কিচ্ছু মাখিনি। এ দিকে তো জানি কী করেছি! মু্ম্বইয়ের অভিনেত্রীদের দেখে লিপগ্লস লাগিয়েছি! ঠোঁট চকচক করছে। ঠিক নজরে পড়েছেতনুদার। সঙ্গে সঙ্গে রূপটান শিল্পীকে ডেকে ঠোঁট মুছে দিতে বললেন। আর আমায় শেখালেন, সিঁদুরের টিপ পড়লে ক্যামেরায় মুখ স্নিগ্ধ দেখতে লাগে। ভেলভেটের বিন্দি পড়লে একদম বদলে যায় মুখ। ঠিক সে ভাবেই লিপগ্লস ক্যামেরায় দেখতে ভাল লাগে না। তাই আর কোনও দিন যেন অভিনয়ের সময়ে লিপগ্লস না লাগাই।”
‘ভালবাসা ভালবাসা’ ছবির ( Tarun Majumdar ) একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের পর তরুণ মজুমদার তাকে পইপই করে বলছিলেন, “দেবশ্রী আজ বাড়ি গিয়ে কারওর সঙ্গে কোনও কথা বলবে না। কোনও গান বা সিনেমাও দেখবে না। খেয়ে, ঘুমিয়ে পড়বে। যেখানে আজ শেষ করলে ঠিক সেখান থেকে আগামী কাল শুরু করতে হবে।” অভিনেত্রী ঠিক সেইমতোই কাজ করলেন। কিন্তু তিনি বিগড়ে দিয়েছিলেন প্রথম ছবি ‘কুহেলি’র সেটেই। সেখানে একটা দৃশ্যে নাকি কোনওভাবেই কাঁদতে পারছিলেন না তিনি। চোখে গ্লিসারিন নিয়েও কান্না আসছিল না তাঁর। সেই সময় তরুণ মজুমদার খুব ধমক দেন তাঁকে। সেই ধমকেই তিনি এতই কেঁদে ফেলেছিলেন, শট শেষ হওয়ার পরও নাকি তিনি কেঁদেই যাচ্ছিলেন। অনেক করে বুঝিয়ে চুপ করানো হয় দেবশ্রী রায়কে।
তখনই অভিনেত্রী তরুণ মজুমদারকে সেটে সবার সামনে শাসিয়েছিলেন, “আমায় এ ভাবে করলে তো! পাড়ায় এস এক বার। আমার হাতে অনেক গুন্ডা আছে। তাদের দিয়ে তোমায় মার খাওয়াব।” শুনে হাসির ফোয়ারা সেটে। এমনকী, অনেক দিন পর্যন্ত তরুণ মজুমদারও এই নিয়ে তাকে খেপাতেন। তিনি খালি বলতেন, “দেবশ্রী আর এক বার বল! তুই যেন আমায় কী করবি বলেছিলি? গুন্ডা দিয়ে মার খাওয়াবি!” তাঁর মৃত্যুতে আজ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দেবশ্রী রায়।