Jeet – অবাঙালি হলেও দুর্দান্ত অভিনয়ে হাল ধরেছিলেন টলিউডের, রইল সুপারস্টার জিৎ এর অজানা কাহিনী

২০০২ সাল, মৃতপ্রায় টলিউড (Tollywood)। একঘেয়েমি ও সাংসারিক ড্রামার (Family Drama) সিনেমা দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে বাংলা সিনেমা থেকে যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বাঙালী দর্শক, ঠিক তখনই বাংলা সিনেমা জগতে আসে এক পাঞ্জাবী ছেলে জিৎ মাদনানী (Jeet Madnani)। জন্মসূত্রে পাঞ্জাবী হলেও জিতের বড়ো হয়ে ওঠা এই দক্ষিণ কলকাতা শহরেই। পারিবারিক সমস্যার কারণে খুব অল্প বয়সেই পড়াশোনা ছেড়ে মডেলিং (Modeling) জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। ৩০ শে নভেম্বর অভিনেতা জিতের ৪৩-তম জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক তাঁর জীবনের উত্থান-পতন, সাফল্য-ব্যর্থতার গল্পগুলি।
ছ’ফুট লম্বা, ফর্সা বর্ণের এই ছেলেটি প্রথম দর্শকের সামনে আসে ‘নবাব (Nawab)’ এর স্যান্ডো গেঞ্জির বিজ্ঞাপনে। দর্শকের নজর কাড়ে। সুযোগ আসে ‘চন্দু’ নামে একটি তামিল ছবিতে অভিনয় করার। কিন্ত সেটি আর মনের মতন হয়ে ওঠে না দর্শকের। ফলে তামিল ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে আসতে হয় ছেলেটিকে। ১৯৯৪ সালে ‘বিষবৃক্ষ’ নামক একটি বাংলা ধারাবাহিকের হাত ধরে বাংলা টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন তিনি। তারপর ২০০২ সালে হরনাথ চক্রবর্তীর “সাথী” সিনেমায় মুখ্য অভিনেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন জিৎ। তারপর আর কখনও পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেতাকে। বন্ধন, প্রেমী, চ্যাম্পিয়ন, শুভদৃষ্টি, প্রেমী একের পর এক ব্যাক টু ব্যাক হিট দিয়ে হাল ফিরিয়ে ছিলেন বাংলা টলিউড ইন্ডাস্ট্রির, হলমুখী করেছিলেন দর্শকদের।
টলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রী কোয়াল মল্লিক (Koel Mallick)-র সঙ্গে জিতের জুটি সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় ছিল দর্শক হৃদয়ে। ‘জিকো’ (JeKo) জুটির প্রায় সমস্ত ছবিই ব্লকবাস্টার হিট (Blockbuster Hit) থাকতো সিনেমা হলে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হল ‘বন্ধন’, ‘শুভদৃষ্টি’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘হান্ড্রের্ড পার্সেন্ট লাভ’, ‘বেশ করেছি প্রেম করেছি’ ইত্যাদি। তবে অভিনেত্রী কোয়েলের সঙ্গে জিতের জুটি দর্শকের পছন্দের হলেও, অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের (Swastika Mukhopadhyay) সঙ্গে অভিনেতা জিতের প্রেমের সম্পর্ক কানাঘুষো শোনা যেত ইন্ডাস্ট্রির অলিতে-গলিতে। সেই সময় ২০০৪-২০০৮ সাল পর্যন্ত অভিনেত্রী স্বস্তিকার সঙ্গে ‘সাথীহারা’, ‘পার্টনার’, ‘প্রিয়তমা’ এর মতন অনেকগুলো সুপারহিট ছবিও করেছিলেন অভিনেতা জিৎ। একসঙ্গে অনেক রাত পর্যন্ত পার্টিও করতে দেখা যেত দুজনকে। তবে এ বিষয়ে কখনও ক্যামেরার সামনে মুখ খোলেননি দুজনের কেউই। এরপর ২০০৮ সালের শেষ দিকে ব্রেকাপও হয়ে যায় তাদের। কিন্ত সম্পর্কের সূত্রপাত বা ভাঙন কোনো জল্পনা নিয়েই কোনোরকম আগ্রহ দেখাননি এই অনস্ক্রীন ও অফস্ক্রীন জুটি।
সাফল্যের শিখরে পৌঁছে ২০১১ সালে মোহনা রাতলানির সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন অভিনেতা। লখনউয়ের মোহনা পেশায় একজন স্কুল শিক্ষিকা। ২০১২ সালে অভিনেতার ঘর আলো করে আসেন তাঁদের একমাত্র মেয়ে ‘নবন্যা’। অভিনেতার মেয়েই যেন তার চোখের মণি। মেয়ের সঙ্গে নাচ করার ভিডিও, আবার কখনও মেয়ের হাতের মালিশ অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম জুড়ে অধিকাংশ তাঁদের বাবা-মেয়ের স্টোরি। ক্রিকেটপ্রেমী এই অভিনেতা সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে (Celebrity Cricket League) ‘বেঙ্গল টাইগার’ (Bengal Tiger) দলের অধিনায়কও (Captain) ছিলেন। নিয়মিত ডায়েরি লেখায় বিশ্বাসী এই অভিনেতা নিজের সুখ-দুঃখ, পথচলার কাহিনী নিয়মিত বন্দী করেন নিজের ডায়েরীতে। সাধারণ একটি পাঞ্জাবী ঘরের ছেলে থেকে আজকের বাংলার সুপারস্টার জিৎ হয়ে ওঠার উত্থান-পতনের গল্প আজও বহু বাঙালী ছেলের জীবনে অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করে।