তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ ওমরের মৃত্যু আজও রহস্য গোটা বিশ্বের কাছে

কুখ্যাত তালিবান নেতা তথা তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমরের মৃত্যু নিয়ে আজও জল্পনা গোটা বিশ্ব জুড়ে। যে মহম্মদ ওমরের নামে একদা ত্রাসের সঞ্চার হত বিশ্বের তামাম শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে, যাকে বাগে আনতে সিআইএ থেকে শুরু করে কেজিবির মতন বিশ্ববিখ্যাত সব গোয়েন্দা সংস্থাও হার মেনে গিয়েছিল, তাঁর মৃত্যু হল কিভাবে ?কে এই মোল্লা মহম্মদ ওমর ? আসুন, জেনে নেওয়া যাক।

১৯৬০ এর দশকে, আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে একটি দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ওমর। ছোট বেলাতেই বাবা মৌলবী গুলাম নবী আখুন্দকে হারান ওমর। তখন আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট শাসন, ছোটবেলা থেকেই ওমারের লক্ষ্য হয়ে ওঠে আফগানিস্তানকে কমিউনিস্ট মুক্ত করার। এরপর বয়স একটু বাড়লে উচ্চশিক্ষার জন্য তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে পাকিস্তানের দারুল-উলুম-হাকানিয়া মাদ্রাসাতে। পাকিস্তান থেকে নিজের দেশে ফিরে এসে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ওমর। সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে নেমে পড়েন মাঠে।এর মধ্যেই আফগান কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংঘর্ষে নিজের ডান চোখ হারান ওমর। তারপর থেকেই তাকে ‘ওয়ান আইড লিডার’ নামে চিনতে শুরু করে সবাই। এরপর সোভিয়েত আক্রমণের সময় মুজাহিদিন গোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান নেতা হয়ে ওঠেন ওমার।

Taliban in Afghanistan,Taliban leaders,Militants in Middle East,Taliban News in Bengali,News from the Middle East. Insurgency in Afghanistan আফগানিস্তানে তালিবান,তালিবানদের বাংলা খবর,তালিবানদের নৃশংসতা,মুসলিম জঙ্গি

মুজাহিদিনের যে সমস্ত ছাত্র এই লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের বলা হত তালিব। সেই থেকেই তালিবানের উৎপত্তি। সোভিয়েতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল এই তালিবদেরই। সে সময়ে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের নিরসন করতে তালিবানের নেতা ঘোষণা করা হয় মোল্লা মহম্মদ ওমরকে। মুজাহিদিনকে সরিয়ে সারা দেশে তালিবান-রাজ কায়েম করতে শুরু করে ওমর। এরইমধ্যে কুখ্যাত জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়দার সঙ্গে হাত মেলায় তালিবান। তাদের লক্ষ্য, আফগানিস্তান তথা মধ্যপ্রাচ্যের সমস্ত দেশ থেকে আমেরিকা সহ নানা বিদেশী শক্তির প্রভাব একেবারে মুছে দেওয়া। ১৯৯৬ সালে, বুরহানুদ্দিন রাব্বানীর সরকার ফেলে দিয়ে কাবুলের ক্ষমতা দখল করে তালিবানেরা। এরপর আগামী ৫ বছর আফগানিস্তানের ক্ষমতার শিখরে থাকে তারা।

সমস্যা দেখা দিয়ে পাঁচ বছর পর, ২০০১ সালে। আমেরিকায় টুইন টাওয়ার এবং পেন্টাগনের হামলার পর, আল কায়দা তার দায় স্বীকার করে।  আমেরিকা সহ ইংল্যান্ড , ফ্রান্স এবং কানাডার সামরিক বাহিনীর যৌথ -উদ্যোগে , আলকায়দা দমন করার উদ্দেশ্যে এয়ার স্ট্রাইক করা হয়ে আফগানিস্তানে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে গড়ে উঠেছিল তালিবান প্রতিরোধ ঐক্য। অগত্যা, দেশের ভিতর এবং বাইরে থেকে ক্রমাগত আক্রমণের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হয় তালিবান। আত্মগোপন করেন মোল্লা মোহাম্মদ ওমর।  সিআইএ এবং মার্কিন সেনার রাডারেও ধরা পড়েনি এই তালিবান নেতা। তার মাথার দাম ধার্য করা হয় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সারা আফগানিস্তান তোলপাড় করে খুঁজে ফেললেও ধরা পড়েননি ওমার।  গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সুত্র অনুযায়ী পাকিস্তানে গা ঢাকা দিয়েছিলেন ওমার , কিন্তু সেখানেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Taliban in Afghanistan,Taliban leaders,Militants in Middle East,Taliban News in Bengali,News from the Middle East. Insurgency in Afghanistan আফগানিস্তানে তালিবান,তালিবানদের বাংলা খবর,তালিবানদের নৃশংসতা,মুসলিম জঙ্গি

ইতিমধ্যে, সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে পরিস্থিতিও। দীর্ঘ এক দশক তালিবানদের ক্ষমতার বাইরে রাখার পর , ২০১১ সালে তালিবানদের সাথে শান্তিচুক্তিতে উদ্যোগ নেয় আফগান সরকার। ২০১৫ সালে সেই চুক্তি পরিণত পাওয়ার আগেই জানা যায়, মোল্লা মহম্মদ ওমারের মৃত্যু হয়েছে।  দীর্ঘদিন যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালেই মারা গিয়েছেন তালিবানের সুপ্রিম কমান্ডার। জীবনের শেষ কদিন ভর্তি ছিলেন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের এক হাসপাতালে।

মোল্লা ওমরের মৃত্যু নিয়ে জল্পনা রয়ে গিয়েছে আজও। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর রিপোর্ট অনুসারে, জীবনে কোনওদিন আফগানিস্তানের বাইরে পা অবধি রাখেননি ওমার। আর তাতেই শুরু হয় জল্পনা। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি অন্য কোনো অজ্ঞাত কারণে প্রাণ হারাতে হয় এই দুর্ধর্ষ তালিবান নেতাকে? তবে ওমারের ‘কাল্ট অফ পার্সোনালিটি’ যে তাকে তালিবানদের কাছে এক ঐশ্বরিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে , সে বিষয় কোনো সন্দেহ নেই।




Back to top button