আড্ডা থেকে নাচ-গান, সবই নিষিদ্ধ! তালিবানি শাসনে আর কী কী বিধান রয়েছে আফগান মেয়েদের রুলবুকে
মার্কিন সেনা প্রত্যর্পনের পর আফগানিস্তানে এ আবারো শুরু হয়েছে তালিবানি যুগ। অর্থাৎ আফগান নাগরিকদের জীবনের সুতো এখন তালিবদেরই হাতে। তারাই আইন ও তারাই সংবিধান। বলা বাহুল্য চরম ইসলামপন্থী এই জঙ্গি সংগঠন দেশে সম্পূর্ণ শরিয়া আইন লাগু করতে বদ্ধ পরিকর। আর মধ্যযুগীয় শরিয়া আইন মানেই সাধারণ নাগরিকদের জীবনে বিশেষ করে মেয়েদের জীবনে নেমে আসবে কড়া বিধি নিষেধ। এমনকি কাবুল-কান্দাহারের মত শহর গুলিতেও চিরতরে পর্দার আড়ালে চলে যেতে হবে আফগান নারীদের। আর তালিব প্রণীত শরিয়া আইনের থেকে একটু বেচাল হলেই জুটতে পারে চরম শাস্তি এমনকি মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত। আসুন দেখে নেওয়া যাক নব্য তালিবানি শাসনে মেয়েদের জন্য কি কি কড়া নিয়ম কানুন লাগু হয়েছে।
এর আগে যখন তালিবান ক্ষমতায় এসেছিল তখন আফগান মেয়েদের জীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অন্ধকার। ১৯৯৫ থেকে ২০০১, ওই পাঁচ বছরের তালিবানি রাজত্বে এমন সব নিষ্ঠুর আইন মেয়েদের মেনে চলতে হয়েছে যা শুধু মধ্যযুগীয়ই নয় ভয়ানকও বটে।পর্দা ঢাকা জীবনে একটু রঙের স্বাদ পেতে গিয়ে কত আফগান নারীর কপালে যে শিরশ্ছেদ জুটেছে তার ইয়ত্তা নেই। তবে এবারে অনেককেই এমন আশা করতে দেখা গেছে যে তালিবান নাকি আগের তালিবান আর নেই। অনেকটাই উদারতার দিকে পা বাড়িয়েছে তারা। তাই মেয়েরাও নাকি তাদের জীবনে বেশ কিছু ছাড় পেতে পারেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র কি সত্যিই তাই? আসুন দেখে নেওয়া যাক গত তালিবানি শাসনে দৃশ্যটা ঠিক কেমন ছিল।
গত তালিবানি রাজে নিয়ম ছিল মেয়েরা বাজারে গেলে অবশ্যই কোনো পুরুষ অভিভাবককে সাথে নিয়ে যেতে হবে। এবারে মেয়েদের বাজারে যাওয়ার ছাড় দেওয়া হয়েছে বটে কিন্তু আগের বিধি নিষেধ লাগু আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। এছাড়াও বলা আছে মেয়েরা বাইরে কোনোভাবেই আড্ডা দিতে পারবে না। ১২ বছর পেরিয়ে গেলে বাইরের কোনো পুরুষ সঙ্গী তো দূর কোনো ছেলের সাথে ঘুরতেও পারবে না তারা। আগের বার ৫ বছর যাবৎ তালিব শাসনে মেয়েরা পড়াশুনা করতে পারতো বটে কিন্তু শুধুমাত্র মেয়েদের স্কুলে। ছেলে আছে এমন স্কুলে নয়। এছাড়াও শরিয়ত মোতাবেক গান বাজনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই মেয়েদের নাচ গান, পার্টিতে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে সম্পূর্ণ বিধি নিষেধ ছিল। এমনকি মেয়েরা মুখে কোনো রকম সৌন্দর্য বর্ধক দ্রব্য ব্যবহার করতে পারবে না এমনটাও নিয়ম ছিল। এছাড়াও ৮ বছরের উর্দ্ধে সকল নারীর বোরখা পরে বেরোনো বাধ্যতামূলক ছিল। বোরখা না পড়ায় তালিবানদের দ্বারা মেয়েদের হত্যা এরূপ খবর পাওয়া যেত হামেশাই।
নানা সূত্র মারফৎ খবর পাওয়া যাচ্ছে এবারে আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্যই হোক কিংবা বাকি বিশ্বের সহানুভূতি পাওয়ার জন্যই হোক, তালিবানরা নিজেদের নিয়ম কানুনে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। যেমন এবারে মেয়েদের অফিসে কাজ করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে নিয়ম করা হয়েছে সেই সমস্ত কর্মরতা মেয়েদের বাড়ি নিয়ে যাবে নিয়ে আসবে তালেবানরা। এছাড়াও আগের বার নিয়ম ছিল মেয়েরা ব্যালকনিতে দাঁড়াতে পারবেন না, হিল তোলা জুতো পড়তে পারবেন না, বা এমন ভাবে চলতে পারবেন না যাতে তাদের চলার শব্দ অন্য পুরুষের কানে যায়। আর এইসব নিয়ম না মেনে চললে মেয়েদের যেসব শাস্তির বিধান রয়েছে তা ভয়ানক। শরিয়া আইন অনুযায়ী নারীরা এইসব নিয়ম না মানলে জনতার সামনে হেনস্থা, বেত্রাঘাত এমনকি পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে হত্যা করার বিধান রয়েছে।