প্লেন হল ক্যাফে! ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে অভিনব রেস্তোরাঁ খুলে চমক দুই প্যালিস্তিনিয়ান যুবকের

কুড়ি বছর ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা একটি বোয়িং প্লেনকে অভিনব রুপ দিলেন দুই প্যালেস্টিনিয়ান যুবক। গোটা প্লেনটিকে মেরামত করে আস্ত একটি ক্যাফে তৈরি করলেন ইজরায়েল অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাংক নিবাসী খামিস আল সাইরাফি ও তার যমজ ভাই আতা আল সাইরাফি। প্রায় ৯৯% প্যালিস্তিনিয়ান মানুষ যেখানে এরোপ্লেনে চড়ার সুযোগ পায় না সেখানে এই অভিনব রেস্টুরেন্ট মন কেড়েছে সকলের। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্লেন ক্যাফের কথা জেনে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে।

খামিস আল সাইরাফি বলেন, “প্যালিস্তিনিয়ানদের অধিকাংশ মানুষই প্লেনে চড়তে পারেন না। আমাদের রাজনীতিবিদরাই খালি প্লেনে চড়েন। এই জন্যই এই ভাবনা আমাদের মাথায় আসে।” বর্তমানে বন্ধু বান্ধব কিংবা পরিবারের সাথে এই উড়োজাহাজে আহার করতে পারছেন সবাই। কিংবা মাত্র ১.৭৫ ডলারে ভেতরে ঢুকে ছবিও তুলতে পারছেন। ইতিমধ্যেই অন্তর্জাল মারফৎ রেস্টুরেন্টটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। গ্রাহকরাও এই অভিনব জায়গায় সময় কাটাতে পেরে খুবই খুশি। কফি ও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও সুইমিং পুল এবং অনুষ্ঠানের জন্য হল বুকিংয়ের সুবিধাও রয়েছে প্লেনটিতে।

The Palestinian-Jordanian Airline Restaurant and Coffee Shop

তবে ২০ বছর নিষ্ক্রিয় এই দানবীয় যানকে ক্যাফেতে বদলানোর কাজটা খুব একটা সহজ ছিলো না সাইরাফি ভাই দের কাছে। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে প্লেনের মালিকানা এবং রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স পেতে হয়েছে তাদের। এমনকি ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন সংঘাতও তাদের কাজের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বহুবার। তবু তারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন। এর আগে দুই ইজরায়েলি ব্যবসায়ী এই প্লেনটিকে কিনেছিলেন এই একই পরিকল্পনা নিয়ে যে তিনি ওখানে ক্যাফে খুলবেন।

The Palestinian-Jordanian Airline Restaurant and Coffee Shop

কিন্তু সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়ে ওঠেনি আর। সাইরাফি ভাইরা ১৯৯৯ সালে ১ লক্ষ ডলার দিয়ে ওই দুই ইজরায়েলি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্লেনটি কেনেন। প্লেনটি সেই সময় নর্দান ব্যাঙ্কে অবস্থিত ছিল। সেখান থেকে প্লেনটি ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে তুলে নিয়ে আসতে প্রায় ১৩ ঘন্টা এবং বিস্তর টাকা খরচ হয় তাদের। এছাড়াও লাইসেন্স পেতে আরো ৫০ হাজার ডলার খরচ হয়। আল সাইরাফি ভাইদের মূলত ব্যবহৃত ধাতুর ব্যবসা। এছাড়া বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবসাও রয়েছে তাদের। এতদিনে তাদের চেষ্টা ও পরিশ্রম সফল করতে পেরে ৬০ বছর বয়সী দুই প্যালিস্টিনিয় ভাই।

যেই বোয়িং ৭০৭ বিমানটিকে মেরামত করে ক্যাফে বানানো হয়েছে তার ইতিহাসও কিন্তু বেশ আকর্ষণীয়। বলা হয় এই প্লেনটিতেই ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম ১৯৭৮ সালে আমেরিকা গিয়ে মিশরের সঙ্গে বিখ্যাত শান্তি চুক্তিতে সই করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত এই প্লেনটি ইজরায়েলি সেনা ব্যবহার করে। ৯০ এর দশকে খামিস সাইরাফি এই প্লেনটিকে ইজরায়েলের শহর সফাদের বিমান বন্দরে দেখেন। ১৯৯৯ সালে বিমানটিকে কিনলেও তারপরেই শুরু হয়ে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের অচলাবস্থা। রেস্টুরেন্টের এলাকার আগেই ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট বসে। যাতে অনেক প্যালেস্টিনিয় বাসিন্দা ওই অঞ্চলে ঢুকতে বাধাপ্রাপ্ত হন। তারপর থেকে টানা ২০ বছর প্লেনটিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখতে বাধ্য হন সাইরাফি ভাইরা। অবশেষে ৬০ বছর বয়সে এসে তাদের স্বপ্ন সফল করলেন সাইরাফি ভাইরা।




Back to top button