পাততাড়ি গুটিয়ে ফের স্বদেশ যাত্রায় বাইডেন বাহিনী, ২০ বছর ধরে আফগান ভূমে কী করছিল মার্কিন সেনা?
২০ বছর ধরে চলা যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক আবসান। তালিবানের সঙ্গে আফগানিস্তানের ‘শান্তিচুক্তি’ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই আফগানিস্তান থেকে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করে নিল আমেরিকা। লক্ষ লক্ষ আফগান নাগরিকের ভবিষ্যত তালিবানের হাতে তুলে দিয়ে আফগানিস্তান ছাড়ল মার্কিন সেনা। প্রশ্ন, কেন আফগানিস্তানে সেনা পাঠিয়েছিল আমেরিকা ?
আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের কথা। ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। ১৯ জন সন্ত্রাসী আমেরিকায় চারটি যাত্রীবাহী জেট বিমান ছিনতাই করে তা দিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং পেন্টাগনে। মুহূর্তের মধ্যে ধসে পরে আমেরিকার গগনচুম্বী ১১০ তলার টুইন টাওয়ার। শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ হামলার ঘটনায় আঁতকে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২,৯৭৭ জন, আহতের সংখ্যাটা ছিল প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি। হামলার জন্য দায়ী করা হয় উগ্রবাদী ইসলামপন্থী সংগঠন আল-কায়দাকে। এই হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসাবে উঠে আসে ওসামা বিন লাদেনের নাম।
৯/১১ এর হামলার পর প্রতিশোধের আগুনে ফুঁসতে থাকে আমেরিকা। আফগানিস্তান থেকে এই হামলার নীল নকশা তৈরি হয়েছিল, এই অভিযোগে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা পাঠাতে শুরু করে আমেরিকা। সেই সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল আজকের তালিবানরা। আল-কায়দা নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয় তালিবানদের। কিন্তু তা অস্বীকার করে তালিবানরা। এর এক মাসের মধ্যেই তালিবানকে ক্ষমতাচ্যুত করে মার্কিন বাহিনী।
মাঝে কেটে গিয়েছে অনেক গুলি বছর। শত্রুদের চিরতরে ধ্বংস করতে চেয়েছিল আমেরিকা, আর চেয়েছিল নিজের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নত করে নয়া আফগানিস্তান গড়তে। আফগানিস্তান পুনর্গঠনের জন্য বিপুল অর্থও খরচ করে আমেরিকা। কিন্তু আমেরিকার অজান্তেই গোকুলে বেড়ে উঠতে শুরু করে কুখ্যাত তালিবান। আসতে আসতে কখন যে পায়ের মাটি সরে গিয়েছে, তা টেরই পায়নি আমেরিকা।
আমেরিকা আগাগোড়াই তালিবানের নাছোড়বান্দা মনোভাবকে খাটো করে দেখেছিল। কিন্তু বুকের ভিতর বারুদ নিয়ে দেশ দখলের ইচ্ছাটা শেষ দিন পর্যন্তও ছাড়েনি তালিবানরা। একদিন না একদিন আমেরিকাকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে, একথা এরা জানত। তার জন্য ধৈর্য ধরে দিনের পর দিন ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করে গেছে তালিবানরা।
তারপর কী হল? ২০ বছরের বিনিয়োগ ফেলে তালিবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। লাখ লাখ আফগান নাগরিকের ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই মার্কিন সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার চুক্তিতে সই করে আমেরিকা। আর তার কিছুমাসের মধ্যেই আফগানিস্তানের ক্ষমতা ফের দখল করে তালিবানরা। তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা তো দূর, সামান্য লড়াইয়ের চেষ্টাও করল না আমেরিকার মদতপুষ্ট আফগান সেনা।
সময়সীমার একদিন আগে, অর্থাৎ ৩০ অগাস্ট সব মার্কিন সেনাকে ফিরিয়ে নিয়েছে আমেরিকা। শেষ মার্কিন সেনা দেশ ছাড়ার পর থেকেই উল্লাসে ফেটে পড়েছে তালিবানেরা। রীতিমতো উৎসবের চেহারা নেয় গোটা আফগানিস্তান। শূন্য গুলি ছুড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় অনেককে। কেউ কেউ আবার আনন্দে রকেটও ছুড়তে শুরু করে। বলা যেতেই পারে, আফগানিস্তান এখন সম্পূর্ণ ‘স্বাধীন’!