South Asian Climate Change: বানভাসি পাকিস্তান-ব্যাঙ্গালুরু, খরা-অতিবৃষ্টির ‘লাল চোখ’ যেন বলছে প্রকৃতির অসুখের কথা

কলকাতা: প্রকৃতি যখন রাগ করে তার পরিণতি যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা হয় তো এখন বিশ্ববাসী হাড়ে-মজ্জায় টের পাচ্ছে। প্রথমে এই প্রকৃতির বুক থেকে সৃষ্ট হওয়া করোনা মহামারি আর তারপর এখন আবার বানভাসি পাকিস্তান  (Pakistan) ও ব্যাঙ্গালুরু (Bengaluru)। প্রবল বর্ষণে দুই দেশের পরিস্থিতি একেবারে নাজেহাল। পাকিস্তানে ইমরান সরকারের মতোই এখন বন্যার জলে ডুবেছে সাধারণ মানুষ। প্রকৃতির চোখ রাঙানিতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের কপালে। শ’য়ে শ’য়ে মানুষের মৃত্যুমিছিল শিহরণ তুলছে দেশের আর পাঁচজনের শিরদাঁড়ায়। 

মৃত্যু সংখ্যা পেরিয়েছে হাজারের গন্ডি। বন্যার কারণে সে দেশের ১৫ শতাংশ মানুষের জীবন যেন নরকের আকার ধারণ করেছে। দেশের দক্ষিণভাগে (South Asia) পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে আরও জটিল। তবে শুধুই পাকিস্তান নয়, ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি নগর ব্যাঙ্গালুরুও উন্নতির জোয়ার ছেড়ে বৃষ্টির জলে বানভাসি হয়ে পড়েছে। ফলত একরাশ চিন্তা পাখির মতো মাথায় এসে বাসা বেঁধেছে বোম্মাই সরকারের। কিন্তু কেন এমন দুর্দশা? এই প্রশ্ন যেন সব কিছুকেই ছাপিয়ে দানা বাঁধছে সকলের মাথায়? 

south asian climate change

সিএসআইআরও-এর আবহবিজ্ঞানী মাইকেল গ্রুস জানিয়েছেন, “উষ্ণতার বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে অতিবৃষ্টি ও হিমবাহের গলে যাওয়ার মতো ঘটনার জেরে এমন বিপত্তির মুখে পড়তে হয়েছে পাকিস্তানকে।” বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত ৩০ বছরের তুলনায় এবার তিন গুণ বৃষ্টির সম্মুখীন হয়েছে সে দেশ। সরকারে পতন, বিশ্বব্যাঙ্ক সহ নানা দেশের কাছে কোটি টাকার ঋণ আর তার মাঝে এমন প্রাকৃতিক দুরাবস্থা চিন্তায় ফেলেছে শেহবাজ শরিফের সরকারকে। ডুবে গিয়েছে বালুচিস্তান। রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই সরকারের অবহেলায় ডুবে থাকার পাশাপাশি এবার যেন প্রকৃতিও তাদের দিক থেকে মুখ সরিয়েছে। বানভাসি হয়েছে গোটা প্রদেশ। 

এদিকে, হামেশাই উন্নতির জোয়ারে ভেসে থাকা ব্যাঙ্গালুরুও পাকিস্তানের চেয়ে কোনও অংশে কম যায়নি। ২০১৪ সালের পর এক বিরাট পরিমাণ বৃষ্টির সম্মুখীন হয়েছে দক্ষিণের সেই রাজ্য। তথ্য অনুযায়ী, এ মাসের চার থেকে পাঁচ তারিখের মধ্যে ১৩১.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে সেই শহরে। এমনকী, বিগত জুন মাস থেকেই এই অতিবৃষ্টির ধারা ভাসিয়ে চলেছে সেই শহরকে। যার ফলাফল আপাতত সকলের সামনে। এক কোমড় জল নিয়ে দিনগুজারন করতে হচ্ছে সেখানকার আম জনতাকে। 

south asian climate change3

উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞদের মতে, গোটা দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই আবহাওয়ার এই পরিবর্তন ভীষণ ভাবে প্রভাব ফেলছে সাধারণ মানুষের জনজীবনে। মে ও জুন মাসে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ জুড়েই উষ্ণতার দাবদাহ পরিস্থিতি। চাঁদি ফাটা রোদে নাজেহাল হয়ে পড়ে দুই দেশের সাধারণ মানুষজন। শুধুই তাই নয়, কিছু কিছু এলাকায় দেখা দেয় খরার মতো পরিস্থিতিও আর ঠিক তার কয়েক মাস পেরোতেই হটাৎ এই অতিবৃষ্টি যেন বারবার প্রকৃতির অসুখকেই সুনিশ্চিত করছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত-পাকিস্তানই নয় আবহাওয়া পরিবর্তনের গুরুত্বর প্রভাব থেকে রেহাই পায়নি আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষরা। তালিবানদের আক্রমণের পর একই বছরে প্রায় দু’বার খরার সম্মুখীন হয় ওই রাষ্ট্র। এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের উপর দিয়ে আমফানের মতো ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়ের বয়ে যাওয়া বেশ বিপদের মুখে ফেলেছিল আম জনতাকে। শ্রীলঙ্কায় আবার সমুদ্রপৃষ্ঠ এলাকাগুলিতে দেখা দিয়েছিল বন্যার মতো ঘটনা। 

তবে এত জ্বালা-যন্ত্রণার মাঝেও বেঁচে থাকার একটা ক্ষীণ আলো রয়েছে এই ধরিত্রীর বুকে। হাতে সময় অল্প হলেও প্রাকৃতিক এই দুর্দশা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার কোনও না কোনও পন্থা আবিস্কার করতেই হবে প্রতিটি রাষ্ট্রের সরকারকে। যেমন, বাংলাদেশে সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছাসকে রুখতে ৭০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে বাঁধ। তৈরি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রও। আবার রাবণ রাজ্যে আর্থিক দুর্দশার মাঝেও ব্যবস্থা হয়েছে জলাভূমি পুনর্বাসনের। তবে অভিযোগ, এই প্রতিটি কাজের গতি অতি ধীর। যার ফলে পরবর্তী প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসার আগে সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে পারবে কি না এই নিয়ে সন্দেহ আছে সাধারণ মানুষের। এছাড়াও প্যারিসে আবহাওয়া বিষয়ক পরিবর্তনে চুক্তির পর একরাশ প্রতিশ্রুতির বার্তা বাতাসে ভেসে বেড়ালেও তা কতটাই বা সাধন হবে এই নিয়েও রয়েছ প্রশ্ন।




Back to top button