বেজেছে ঢাকের বাদ্যি, আসছে উমা! মন্দা কাটিয়ে উৎসবের আবহে কেমন আছে বাংলার মৃৎশিল্পীরা?

শেষ হয়েছে বিশ্বকর্মা পুজো। সামনে আবার বাঙালির শ্রেষ্ঠ পার্বন দুর্গোৎসব। ক্যালেন্ডারের পাতায় হাতে গোনা আর মাত্র কয়েক দিন। উমার আগমনের আগেই প্রতিবারের মতো এবারও মেতে উঠেছে বাঙালি। শারদোৎসব পালনের আশায় আনন্দে আত্মহারা। জামাকাপড়ের দোকানেও জমতে শুরু করেছে ভিড়। চারিদিকেই এক প্রকার সাজ সাজ রব। ফুটে গেছে কাশফুল। কিন্তু এই এতো আনন্দের ভিড়ে একবারও ভেবে দেখেছেন কেমন আছে সেই মৃৎ শিল্পীরা? করোনার মহামারীর দ্বিতীয় পর্ব কাটিয়ে আজ যখন তৃতীয় পর্বের অপেক্ষায় আমরা বসে আছি, একবারও কি জানতে চেয়েছি তাঁদের কী অবস্থা?

তাঁদের বাজার ভালো চলছে তো আদেও? নাকি মাটির সাথে মিশে যাওয়া অর্থনৈতিক অবস্থার শিকার তারাও, আবার এ বছর এই মহামারীর মধ্যে একটাও বড় বায়না পেয়েছে কি তাঁরা? মালিকপক্ষ তরফে ঠিকঠাক ভাবে কি মিলছে মজুরি? এই প্রসঙ্গে একজন জানিয়েছেন, আগের বছরের তুলনায় এবছরের বাজার কিছুটা ভালো। তবে বিগত ৭-৮ মাস কেটেছে রোজগার হীনতায়। বিগত দেড় বছরে করোনার কারণে প্রায় প্রতিটা ব্যবসাই ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। সুতরাং সেখান থেকে বাদ পড়েনি মৃৎ শিল্পীরাও।

Potters of Kumarthuli,Potters of Bengal,Durgapujo 2021,Best Festival of Bengal Durgotsab,Durgapujo Bangla News,কুমোরঠুলির মৃৎশিল্পী,বাংলার মৃৎশিল্পী,দুর্গাপুজো ২০২১,বাঙালির শ্রেষ্ঠ পার্বন দুর্গোৎসব,দুর্গাপুজোর বাংলা খবর

বলে রাখা ভালো,  ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে কথিত আছে শাপভ্রষ্ট বিশ্বকর্মা ও ঘৃতাচী পৃথিবীতে ছিলেন কিছুকাল। তখন তাঁদের নয় সন্তান জন্মগ্রহণ করে। প্রত্যেক সন্তানকে বিশেষ বিশেষ শিল্পের শিক্ষা দিয়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। তাঁদেরই একজন কুম্ভকার। এবার মজার ব্যাপারটা হল, এইরকম মহামারি পরিস্থিতিতে এই মৃৎ শিল্পীদের প্রথম উপার্জনের সূত্রপাত কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজো দিয়েই।

Potters of Kumarthuli,Potters of Bengal,Durgapujo 2021,Best Festival of Bengal Durgotsab,Durgapujo Bangla News,কুমোরঠুলির মৃৎশিল্পী,বাংলার মৃৎশিল্পী,দুর্গাপুজো ২০২১,বাঙালির শ্রেষ্ঠ পার্বন দুর্গোৎসব,দুর্গাপুজোর বাংলা খবর
ছবিঃ রাহি হালদার

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এই প্রায় অধিকাংশ পার্বণের সঙ্গেই যুক্ত এই কুম্ভকাররা। গত বছরের মতো এবছর বেশ সময় ধরে বন্ধ ছিল তাঁদের জীবিকা। ফলত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জীবন ও আর্থিক পরিস্থিতি। মজুরি মিললেও আগের তুলনায় বেশ কম, কিন্তু একদল মৃৎ শিল্পীর বক্তব্য কিছুটা আলাদা। তাঁদের দাবি, কুমোরটুলিতে মালিকপক্ষ তরফে আগের মতোই দেওয়া হচ্ছে মজুরি। সুতরাং এই বিষয়ে কুমোরটুলির অন্দরমহলে খানিকটা বিবাদ আছে তা বলা বাহুল্য।

Potters of Kumarthuli,Potters of Bengal,Durgapujo 2021,Best Festival of Bengal Durgotsab,Durgapujo Bangla News,কুমোরঠুলির মৃৎশিল্পী,বাংলার মৃৎশিল্পী,দুর্গাপুজো ২০২১,বাঙালির শ্রেষ্ঠ পার্বন দুর্গোৎসব,দুর্গাপুজোর বাংলা খবর
ছবিঃ রাহি হালদার

আবার এই মৃৎ শিল্পীদের অনেকেরই দাবি, আগের তুলনায় বেশি খরচ সাপেক্ষ মূর্তির বায়না অনেক কমে গেছে। অধিকাংশ ক্লাব কর্তারাই বাজেটের অজুহাত দেখিয়ে অল্প খরচের মূর্তি নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, “অধিকাংশ ক্রেতাই একচালা মূর্তির বায়না দিয়ে গেছেন।” করোনার আগে যে বাজেট ছিল ১ লক্ষের ওপরে আজকের এই মূল্যবৃদ্ধি দিনে দাঁড়িয়ে সেই বাজেট নেমে গেছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজারে। ফলত বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পারিশ্রমিক। এই ভাবেই কাটছে তাঁদের জীবন। জীবনের অধিকাংশ সময়টাই দিয়েছেন এই শিল্পে সুতরাং এখন নেই কোনো প্রশ্ন এখান থেকে সরে অন্যভাবে জীবিকা নির্বাহের।

প্রতিমাকে ঘিরে তাঁদের ব্যবসা যে ভালোই ক্ষতিগ্রস্থ, ফলত কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই পুরানো জৌলস। শহরের প্রতিটা রাস্তায়, প্রতি গলিতে, আনাচে-কানাচে থেকে হারিয়ে গেছে সেই পুরানো আনন্দ। সমাজে বিভেদ আগাগোড়াই ছিল, পুজোর সময় কোনো ঘরে আলো জ্বলত তো কোনো ঘরে জ্বলত না, কিন্তু এই মহামারি সমাজের সেই ক্ষতটাকে যেন আমাদের সামনে আরও স্পষ্ট করে এগিয়ে নিয়ে এল।




Back to top button