ঘর ছেড়ে কলকাতার প্রেমে! প্রাণ গেলেও ছোট্ট শৌভিক আজও ব্যস্ত শহরের ডাক্তারি পড়ুয়াদের শিক্ষাদানে

অনীশ দে, কলকাতা: অনীশ দে, কলকাতা: কলকাতা, আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত এই শহর। নানা মানুষ পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্ত থেকে মেশে তিলোত্তমার জনবহুল পথে। কেউ আসে কাজের হদিস খুঁজতে কেউ বা আসে প্রাণ বাঁচাতে। তবে সবার মধ্যেই একটি জিনিস লক্ষ্য করা যায়। তা হচ্ছে এই শহরের প্রতি ভালোবাসা। এই শহরেই ২৪ বছর আগে এসেছিল শৌভিক সামন্ত (Souvik Samanta)। কিন্তু শেষমেশ তাঁর আর বাড়ি ফেরা হয়নি। সত্যি বলতে, বাড়ি ফিরতেই চায়নি সে। এই বিশাল শহরের বুকেই বাকি জীবনটা কাটাতে চেয়েছিল সে (Souvik Samanta)। আর হয়েছিল ঠিক তেমনটি। তবে যেভাবে হয়েছে তা যেন আজও সকলকে নাড়া দিয়ে যায়।
দিনের পর দিন কত মানুষকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে সরকারি হাসপাতাল থেকে। কেউ কেউ ফিরেও যেতে পারেনি। শহরের অন্যতম ব্যস্ত হাসপাতাল এনআরএস (NRS Medical College)। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা করতে লোকে ছুটে আসে এই হাসপাতালে। তেমনটাই এসেছিল শৌভিক সামন্ত (Souvik Samanta)। কিন্তু ভাগ্যের কী নিঠুর পরিহাস, শেষ পর্যন্ত আর বাড়ি ফেরা হল না তাঁর। ৫ বছর বয়সে সে আসে এনআরএসে (NRS Medical College), তবে এখনও সেখানেই রয়ে গিয়েছে এই খুদে। কিন্তু তার পিছনে কী কারণ রয়েছে? ডাক্তারি পড়ুয়াদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় অ্যানাটমি। এন আর এস কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের বাঁদিকের ক্লাসরুমে রয়েছে শৌভিক, বলা ভালো শৌভিকের (Souvik Samanta) নরকঙ্কাল।
কিন্তু কীভাবে অ্যানাটমি বিভাগের কাছে এসে পৌঁছল শৌভিকের নরকঙ্কাল? আলোকপাত করেছেন অ্যানাটমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া ওয়েস্ট বেঙ্গল চ্যাপ্টারের সভাপতি এবং অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার অভিজিত ভক্ত। তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে অসুস্থতার কারণে নিজের বাবার সাথে প্রথমবার কলকাতায় পা রাখে শৌভিক। কিন্তু শেষমেশ আর বাড়ি ফেরা হয় না তাঁর। সেই বছরই ২৯ শে অক্টোবর সবাইকে ছেড়ে চলে যায় সৌভিক। কিন্তু শৌভিকের শরীর দান করেছিল তাঁর বাবা। কাঁচের বাক্সের উপর শৌভিকের জন্ম এবং মৃত্যু সাল লেখা রয়েছে।
বিগত ২৪ বছর ধরে অ্যানাটমি বিভাগে রাখা রয়েছে তাঁর দেহ। পাশেই রয়েছে একটি প্রাপ্ত বয়স্ক নর কঙ্কাল। সচরাচর অ্যানাটমির জন্য শিশুদের নর কঙ্কাল প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এই হাসপাতালে রয়ে গিয়েছে শৌভিক। কাঁচের বাক্সের সামনে দাড়াতেই মনে হয় চোখ দু’টো যেন কিছু বলতে চায়। ৫ বছরের ছোট্ট শিশুটি চেয়েছিল তিলোত্তমাতেই থাকতে, খুব পছন্দ হয়েছিল এই সহর তাঁর। আর সৌভিকের ইচ্ছানুসারে তাঁর বাবা তাঁকে কলকাতাতেই রেখে যান। সেদিন যদি শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত থাকত তাহলে হয়তো এই ছোট্ট প্রাণের আহুতি আমাদের দিতে হত না।