স্মৃতির পাতায় ঠাঁই হয়েছে একাধিক নেতার, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর যাদের হারাল তৃণমূল
দু’দিন আগেই মৃত্যু হয় রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী তথা মমতা ঘনিষ্ঠ নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের(Subrata Mukherjee)। হাসপাতালের বিছানায় বেশ কয়েকদিন ধরেই চলে জীবন-মরণের লড়াই। কিন্তু এতো লড়াই সত্ত্বেও অবশেষে তাঁকে ছাড়তে হয় ইহলোকের মায়া। ছিঁড়ে দিতে পৃথিবীর সঙ্গে তাঁর সমস্ত পিছু টান। রাত ৯টা ২২মিনিট নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের(Subrata Mukherjee) নামের আগে যোগ হয়ে যায় স্বর্গীয় সুব্রত মুখোপাধ্যায় তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত মন্ত্রী। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক মতাদর্শের বিভেদকে ভুলে তাঁর মৃত্যু শোকে হতাশ হয়ে পড়েন অনেকেই। এক বড় শক্তিকে হারিয়ে ফেলে তৃণমূল। ২০১১ সালে শাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে একটু একটু করে বেশ কয়েক শক্তিকে হারিয়েছে রাজ্য শাসক শিবির। যাঁদের নাম হয়তো মুছে গেছে কাগজের পাতা থেকে, মানুষ হয়তো ভুলে গেছে তাঁদের, তাঁরা রয়ে গেছে শুধুই শাসক শিবিরের নেতা তালিকার পাতায়। জেনে নিন তাঁদের নাম-
অশোক মুখোপাধ্যায়ঃ
সালটা ২০১৪। সেই বছরের ১৭ই অগস্ট একটি খবর হটাৎই চলে আসে মানুষের চোখের সামনে। মৃত্যু হয়েছে তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপাধ্যায়ের। বীরভূম পুলিশ সুপার অলোক রাজরিয়া জানিয়েছিলেন, “প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ও খায়েরাসোল ব্লক কমিটি সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়কে রাত ১০টা নাগাদ গুলি করে খুন করা হয়। দুষ্কৃতিকে কেউই দেখতে পায়নি। তবে তাঁর মৃত্যু রহস্যের পিছনে রয়েছে খানিক তর্ক-বিতর্ক। গত বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১২ই অগস্ট নাগাদ মৃত্যু হয় তৃণমূল নেতা অশোক ঘোষের। তাঁর পরিবার নেতার মৃত্যু পিছনে মূল অভিযুক্ত হিসাবে অশোক মুখোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তোলে।
অনুপম সেনঃ
সাল ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫। রাত্রি নাগাদ মৃত্যু হয় বরিষ্ঠ তৃণমূল নেতা অনুপম সেনের। মৃত্যুকালীন তাঁর বয়স ছিল ৮৯ বছর। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েকদিন স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। দলের প্রতি তাঁর অনুদান যথেষ্ট। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের গঠনকালীন সদস্য ছিলেন তিনি। বলা যেতেই পারে, রাজ্যের এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন অনুপম সেন। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী হয়ে চলে আসেন তৃণমূল গঠনে ও রাজ্যের তৃণমূলের উত্থানে অংশীদার হতে।
জয়দেব জানাঃ
সালটা ২০১৬, ৮ই এপ্রিল। রাত্রি নাগাদ মৃত্যুর খবর আসে তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ও কর্মী জয়দেব জানার। মেদিনীপুর জেলার সাবাং অঞ্চল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কিছু দুষ্কৃতি তাঁর দিকে আক্রমণ করে। চলে বেধড়ক মারধর এবং যার জেরেই মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছিল চিকিৎসক। এই সময়কালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েন তৎকালীন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার দিকে হত্যার অভিযোগ তোলেন। এছাড়াও তিনি জানিয়েছিলেন, সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। যার শিকার জয়দেব জানা।”
মান্নান হোসেনঃ
বরিষ্ঠ তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন লোকসভা সদস্য আব্দুল মান্নান হোসেন মৃত্যু হয় ২০১৭ সালের ১৪ই নভেম্বর। মৃত্যুকালীন তাঁর বয়স ছিল ৬৫।
সুলতান আহমেদঃ
বরিষ্ঠ তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন লোকসভা সদস্য। ২০১৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ৬৪ বছর বয়সেই হৃদরোগে মারা যান তিনি। তিনি তৃণমূলের টিকিটে উলুবেরিয়া লোকসভা এলাকায় নির্বাচিত হন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। তবে রাজনৈতিক জীবনে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন নারদা কান্ডের সঙ্গে এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ইডি ও সিবিআই তলবের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে বারংবার।
সত্যজিৎ বিশ্বাসঃ
সালটা ২০১৯, ৯ ফেব্রুয়ারি। এদিন সন্ধ্যা নাগাদ কিছু দুষ্কৃতি গুলি নিক্ষেপ করে তৃণমূল নেতা সত্যজিৎ বিশ্বাসের দিকে। গোটা ঘটনাটি ঘটে নদীয়ার একটি সরস্বতী পুজোর মন্ডপে। এই ঘটনার পর পরই নেতার মৃত্যুর কারণ হিসাবে তৃণমূল অভিযোগ তোলে বিজেপির দিকে। মৃত্যুকালীন তাঁর বয়স ছিল ৩৭ বছর।
তমনাশ ঘোষঃ
সাল ২০২০। গোটা দেশ জুড়ে হু হু করে বেড়ে চলেছে করোনার প্রকোপ। মৃত্যুর শিকার বহু মানুষ। রাজ্যেও বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। কাছের মানুষ হারাচ্ছে অধিকাংশ। রাজ্য জুড়ে যেন নিরাশার ঘনঘটা । তারই মধ্যে তৃণমূল মহলেও দেখা গেল শোকের ছায়া। চলতি বছরের ২৪ জুন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল তৃণমূল নেতা তমনাশ ঘোষের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফাল্টা বিধানসভার কেন্দ্রে তিনবার জয়ী নেতা। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর প্রায় ১ মাস যাবৎ ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। মৃত্যুকালীন তাঁর বয়স ছিল ৬০ বছর।