APC College: ধুন্ধুমার মধ্যগ্রাম জুড়ে, SFI মিছিলে ঝঞ্ঝাটের মুখে মুকুল

মধ্যমগ্রাম এপিসি(APC) কলেজ(College)-এর সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের(Students) উপরে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামল এসএফআই ছাত্রছাত্রীরা। এদিন এই বিক্ষোভ মিছিল চলাকালীন হটাৎই সেই একই পথে নিজের গাড়ি যাচ্ছিলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা মুকুল রায়(Mukul Roy)। তাঁর গাড়িটিকে দেখতেই ঘোলা সোদপুর(Sodepur) রোডে সেটিকে ঘিরে ধরে এসএফআই(SFI) ছাত্রছাত্রীরা। যার জেরে গোটা এলাকা জুড়েই একটি চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে পরিস্থিতিকে সামাল দিতে সেখানে পৌঁছে যায় মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ(Maddhyamgram Police)। তারা বিক্ষোভরতদের আশ্বস্ত করে এবং এর কিছুক্ষণ পর মুকুল রায়ের গাড়িটিকে তারা ছেড়ে দেয়।
উল্লেখ্য, এই আন্দোলনের প্রসঙ্গে এসএফআই উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক আকাশ কর জানান, “সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে বেতন বাড়ানোর প্রতিবাদে আন্দোলন করেছিল। কিন্তু, তাঁদের উপর হামলা চালায় এপিসি কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সেই হামলার প্রতিবাদে আমরা আজ ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। এপিসি কলেজে বহু বছর ধরে নির্বাচনকে আটকে রাখা হয়েছে একটি অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ। যারা ছাত্র পরিষদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে তারা কেউই সেই কলেজের বর্তমান ছাত্র নয় বহু বছর আগেই তারা কলেজ পাস করেছে। এই সকল প্রতিবাদেই আজ আমরা পথে নেমেছি বিক্ষোভে।” তাঁর আরও দাবি, “কলেজে আন্দোলনে যোগদানকারী অনেক ছাত্রছাত্রীর বাড়িতেও হামলা চালায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এমনকি, এই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চাপের মুখে পড়ে কলেজ অধ্যক্ষ কিংবা অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদেরও মুখ বন্ধ করে রাখতে হয়।”
প্রসঙ্গত, ঘটনার সূত্রপাত গত ২০ই ডিসেম্বর। সেদিন নিউ ব্যারাকপুরের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ কর্তৃপক্ষ তরফে সকল ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে একটি নোটিস জারি করা হয়। যেখানে বলা হয়, ডিসেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে কলেজের ত্রৈমাসিক বেতন যেন সকল ছাত্রছাত্রীরা প্রদান করে দেয়। এরপরই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের একটি মতভেদ দেখা যায়। ছাত্রছাত্রীদের দাবি, কলেজে ত্রৈমাসিক বেতন বাবদ প্রায় তিন হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। যা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কোনও মতেই সঠিক কাজ নয়। এই বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার দরবার করা হলেও কোনও সুরাহা মেলেনি।
বর্তমানে করোনা জেরে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। দৈনিক খবরের কাগজের পাতা উল্টে পালটে দেখলেই দেখা যায়, পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি শোচনীয় হওয়ায় পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছে অনেক পড়ুয়াকে। প্রসঙ্গত, এই প্রকার মানবিক আবেদনের ভিত্তিতে এপিসি কলেজের অনেকাংশের ছাত্রছাত্রীরা কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে ত্রৈমাসিক বেতন কমানোর দাবি জানিয়ে দেখা করেন। পড়ুয়াদের দাবি, কলেজ অধ্যক্ষ তাদের সাথে একবারও ঠিক করে কথা বলেননি। এছাড়াও, পড়ুয়াদের আরও দাবি, করোনা পরিস্থিতির জেরে যখন কোনও ক্লাস ঠিক করে হয়নি সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও কেন কলেজ কর্তৃপক্ষ এই পরিমাণ টাকা নিচ্ছে?
উল্লেখ্য, সোমবার এপিসি কলেজ চত্বরে ফের একবার জমায়েত করে ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে ছাত্র আন্দোলনটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু কলেজের ইউনিয়ন তা করতে দেয়নি। পড়ুয়াদের দাবি, তাঁদের উপর হামলা শাসক দলের ইউনিয়নের ছেলেরা। অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজের পাশাপাশি কলেজ অধ্যক্ষের সামনেই মেয়েদের গায়ে হাত তোলা হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু অধ্যক্ষ কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকেন। কোনওরকম প্রতিবাদ করেন না। ছাত্রদের নিরপেক্ষ আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলেও দাগিয়ে দিয়েছে শাসক দলের ইউনিয়ন। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হলে আগামীতে আরও বড় আন্দলোনের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। সেই সঙ্গে ইউনিয়নের দোষী দাদাদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিও তোলা হয়েছে।
তবে এদিন এসএফআই মিছিল নিয়ে কলেজের দিকে রওনা হলেও, সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান কলেজে নাকি তালা পড়ে গেছে। কলেজ গতকাল নোটিস মাধ্যমে ৩১ তারিখ পর্যন্ত ছুটি জারি করে দিয়েছে সকল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। এই বিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনার এসএফআই জেলা সম্পাদক আকাশ কর-এর দাবি, “তাদের প্রতিবাদী মিছিলের খবর পেয়েই কলেজে তালা পড়ে গিয়েছে।”