শিবের প্রিয় মাস শ্রাবণ! ঠিক কোন কারণে এই মাসকে বলা হয় শিবের মাস? জেনে নিন এর গুরুত্ব

রাখী পোদ্দার, কলকাতা : কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হতে চলেছে জুন মাস। আর তার পরই আসবে জুলাই ও আগস্ট মাস। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে এই সময়টা হল শ্রাবণ মাস ( Shrawan Month)। হিন্দু ধর্মাবলীদের মতে এই মাস হল অত্যন্ত পবিত্র একটি মাস। এই মাস শিব পুজোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই শ্রাবণ মাসের প্রত্যেক সোমবার করে উপবাস রেখে মহা ভক্তির সাথে আরাধনা করা হয় মহাদেবের। খেয়াল করে দেখবেন এই মাসেই দলে দলে মানুষ শিব মন্দির ( Shiva Temple) গুলোতে ভিড় করে শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল ভগবানকে ভক্তি ভরে আরাধনা করার কোনো আবার দিন হয় নাকি? ভগবানকে তো যখন ইচ্ছে খুশি ভক্তি ভরে ডাকা যায়। তবে কেন এই মাসটিকেই বলা হয় শিবের মাস? কেনই বা এই মাসের গুরুত্ব এত বেশি? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
মনে করা হয় শ্রাবণ মাসের ( Shrawan Month) প্রত্যেক সোমবার উপবাস রাখলে সমৃদ্ধি ও সুখ আসে জীবনে। সোমবারকে শিবের প্রিয় দিন বলে মনে করা হয়। শ্রাবণের যে কোনোও সোমবারই শিব পুজোর জন্য একেবারে আদর্শ। তাই শ্রাবণ মাসের সোমবারগুলোতে উপবাস রেখে শিবপুজো ( Lord Shiva Worship) করলে মহাদেব অত্যন্ত খুশি হন বলে ধারণা ধর্মগুরুদের। এই সময় মহাদেবের যে কোনও জ্যোতির্লিঙ্গে ফল ও দুধ দিয়ে পুজো করা অত্যন্ত শুভ বলে বিশ্বাস করেন অনেকে। এতে নাকি মনোবাসনা পূরণ হয় পুজো দানকারী ব্যক্তির। তবে এই মাসটিকে কেন উৎসর্গ করা হয়েছে শিবের নামে সে বিষয়ে নানা ধরনের প্রচলিত সব কাহিনী।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী শ্রাবণ মাসেই ( Shrawan Month) দেবতা ও দানবদের মধ্যে হয়েছিল সমুদ্র মন্থন। সমুদ্র মন্থন থেকে উঠে আসা হলাহল নামক বিষ পান করে পৃথিবীকে রক্ষা করেন মহাদেব। এর পরই বিষের জ্বালায় শিবের কণ্ঠ নীল হয়ে যায়। তাই তাঁর অপর নাম হল নীলকণ্ঠ। শিবের কষ্ট নিবারণের জন্য সমস্ত দেবী ও দেবতারা তাঁর মাথায় গঙ্গাজল ঢালতে শুরু করেন। তখন বিষের জ্বালা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এ কারণেই শ্রাবণ মাসে শিবের জলাভিষেক কিংবা দুগ্ধাভিষেককে এতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
অপর একটি প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী দেহত্যাগের পর পার্বতী রূপে জন্ম নেন দক্ষ কন্যা সতী। পার্বতীর বহু সাধ্য-সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব তাঁকে বিবাহ করতে সম্মতি প্রদান করেন। কথিত আছে যে, শ্রাবণ মাসেই শিব ও পার্বতীর পুনর্মিলন ঘটে। আর ঠিক এই কারণে শিবভক্তদের কাছে শ্রাবণ মাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়াও এই শ্রাবণ মাসে গুরু পূর্ণিমার দিন সপ্তঋষিকে শিষ্যত্ব দান করেছিলেন মহাদেব ( Mahadev)। সেই জন্য শিবকে আদিগুরু বলা হয়। শুধু শিষ্যত্ব দান করাই না। শিষ্যরা যাতে সিদ্ধ হতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে তিনি যোগীন্দ্রও হয়েছিলেন। যোগীন্দ্রর অর্থ, যিনি যোগীদের রাজা। এই রূপে ভগবান শিব তাঁর যোগী শিষ্যদের সমস্ত যোগ সাধনা এগিয়ে নিয়ে যান।
অনেকেই মনে করেন শ্রাবণ মাসে শিব মর্ত্যে নিজের শ্বশুরবাড়িত আসেন। সেখানে তাঁকে ভক্তি-ভালোবাসায় ভরিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। খুশি করে শিবের আশীর্বাদ লাভের জন্য নানান চেষ্টা চালান তাঁর ভক্তরা। তাঁকে পঞ্চামৃত দিয়ে অভিষেক করা হয়। শিবের শ্বশুরবাড়ি মর্ত্যে এবং শ্রাবণ মাসে মর্ত্যে আসার ফলে তিনি নিজের ভক্তদের নিকটে চলে আসেন বলে, সকলে শিবের ভক্তি ও পুজোয় ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। এবছর ১৪ই জুলাই শুরু হচ্ছে শ্রাবণ মাস ( Shrawan Month) এবং সোমবার পড়েছে মোট ৪টি। প্রথম সোমবার পরেছে ১৮ই জুলাই। দ্বিতীয় সোমবার পরেছে ২৫এ জুলাই, তৃতীয় সোমবার পরেছে ১লা আগস্ট। আর চতুর্থ বা এবারের শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার পরেছে ৮ই আগস্ট। আর, শেষ সোমবারের ঠিক চার দিন পরই ১২ই আগস্ট শ্রাবণ পূর্ণিমা। ওই দিনই এবছরের শ্রাবণ সংক্রান্তি বা শ্রাবণ মাস শেষ হচ্ছে।