কার মৃত্যুতে শেষবারের মত বাঁশী বাজিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ ?

শ্রীকৃষ্ণের মুর্তি মানেই হল বাঁশী হাতে দন্ডায়মান । বাঁশী ছাড়া শ্রীকৃষ্ণকে কল্পনা করাই যায় না। কিন্তু কি এমন ঘটেছিলো যে শ্রীকৃষ্ণ বাঁশী ভেঙ্গে ফেলেছিলেন?

শ্রীকৃষ্ণ যার নামে উত্তাল হয় প্রেমের সমুদ্র । শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রেম হল সকলের কাছে আর্দশ যা বহন করে আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনকে । বহু কাহিনী, গান এবং পদ রচিত হয়েছে রাধাকৃষ্ণের প্রেমকে কেন্দ্র করে। কথিত আছে রাধা কৃষ্ণের প্রতি আর্কষিত হয়েছিলেন তাঁর বাঁশী শুনে। শুধু রাধা নয়, সমস্ত বৃন্দাবনবাসী কৃষ্ণের বাঁশীর সুরে নিমজ্জিত থাকত। তাই কৃষ্ণের বাঁশিকে বলা হত সম্মোহনী বাঁশী । বাঁশী ছাড়া শ্রীকৃষ্ণ অসম্পূর্ণ। তাঁর বাঁশীর সুর প্রেম, ভক্তি ও সুখসমৃদ্ধি বয়ে আনত।

কিন্তু বাঁশী শ্রীকৃষ্ণ পেলেন কোথায়? ছোটবেলায় একদিন নদীর ধারে খেলা করতে গিয়ে কৃষ্ণ দেখতে পান এক বৃদ্ধ বাঁশী বাজাচ্ছেন। তাই দেখে কৃষ্ণেরও শখ হয় বাঁশী বাজানোর । তিনি বৃদ্ধকে অনুরোধ করেন তাঁকে বাঁশি শিখিয়ে দেওয়ার জন্য। বৃদ্ধ রাজী হন না। শ্রীকৃষ্ণ কাঁদতে শুরু করলে বৃদ্ধ তাঁকে বলেন, বাঁশীতে যেমন ফুঁ দেবেন, তেমনই বাজবে । বৃদ্ধের কথামতো কৃষ্ণ বাঁশীতে ফুঁ দিয়ে এক অপরূপ সুর তোলেন। তাঁর এই বাঁশীর সুরে সমস্ত জগৎ বিমোহিত হয়ে পড়ে। দেবতারা পুষ্প বৃষ্টি করে। তখন বৃদ্ধ বুঝতে পারেন এ আসলে কোনো সাধারণ বালক নয়। তিনি শ্রীকৃষ্ণের পদপ্রান্তে শুয়ে পড়েন। এইভাবে শুরু হয় শ্রীকৃষ্ণের বাঁশী বাজানো।

শ্রীরাধিকাসহ বৃন্দাবনের সমস্ত গোপীনি ছিল শ্রীকৃষ্ণের বাঁশীর অনুরাগী। শোনা যায় শ্রীকৃষ্ণের বাঁশী শুনে সমস্ত কাজ রেখে মুগ্ধ হয়ে শুনতেন সকলে। যৌবনে রাধার সঙ্গে প্রেম হলেও দুষ্টের দমন করতে শ্রীকৃষ্ণকে বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় আসতে হয়। পরবর্তীকালে দ্বারকায় এসে নিজের রাজধানী স্থাপন করেন। সংসারধর্ম করলেও শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধার এক বিশেষ স্থান ছিল । শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে আসার সময় রাধাকে কথা দিয়েছিলেন পুঃনরায় রাধার সঙ্গে মিলিত হবেন। কিন্তু সারাজীবনে তাঁর আর রাধার সঙ্গে দেখা হয় নি। মৃত্যুকালে রাধা একবার শ্রীকৃষ্ণের সাক্ষাৎপ্রার্থী হতে চান। রাধার অনুরোধে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর মৃত্যু অবদি বাঁশী বাজাতে থাকেন। রাধার মৃত্যু ঘটলে কৃষ্ণ তাঁর প্রিয় বাঁশিটি ভেঙ্গে জলে ফেলে দেন। আর কখোনো তিনি বাঁশী বাজান নি।




Leave a Reply

Back to top button