মায়া ঝড়ে দেবীর চোখে! মা দুর্গার এই মন্দিরে গেলেই দূর হবে জীবনের সকল শোক-কষ্ট

পূণ্যভূমি ভারতবর্ষের নানা স্থানে ছড়িয়ে আছে একাধিক পীঠস্থান।দক্ষযজ্ঞের সেই তান্ডবলীলার কথা প্রায় সকলের জানা। মহাশক্তির আদি মূর্তি দেবী সতী ছিলেন মহাদেবের প্রথমা স্ত্রী।দক্ষের মুখে পতিনিন্দা শুনে দেবী সতী আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তারপরই সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেবের নটরাজ নৃত্যে যখন পৃথিবী ধ্বংসের মুখে, তখন বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রে খন্ডিত সতীর দেহাংশ ছড়িয়ে পড়ে মহাদেশের একান্নটি স্থানে। গড়ে ওঠে সতীপীঠ। সেই ৫১ পীঠের অন্যতম বহুলা পীঠ। শক্তিসাধনার কেন্দ্র হিসেবে এই পীঠের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, এখানে দেবী ভক্তের মনোস্কামনা পূরণ করেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্ত দের ফেরান না দেবী।শোনা যায় এমন ই সব অলৌকিক কান্ড। বর্ধমানের কাটোয়ার কেতুগ্রামে অবস্থিত এই ‘বহুলা’ সতী পীঠের মাহাত্ম্য জানেন কী ?
পীঠনির্ণয় তন্ত্র মতে এই পীঠে দেবী সতীর বাম বাহু পড়েছিল। বাহু থেকে এখানকার নাম হয় বহুলা আর দেবীও বহুলা নামে পূজিত হন এবং ভৈরবের নাম ভীরুক। তন্ত্র মতে দেবী বহুলা সর্বসিদ্ধি প্রদায়িণী। বহুলার মন্দির থাকায় এই শক্তিপীঠের নাম হয়েছে বহুলা। ভারতচন্দ্রের অন্নদামণ্ডল কাব্যে উল্লেখ রয়েছে ‘বাহুলায় বামবাহু ফেলিলা কেশব। বাহুলা চণ্ডীকা তাহে ভীরুক ভৈরব।’ অনেকে বলেন এখানের পূর্ব নাম ছিল বাহুলা সেখান থেকেই এই মন্দিরের নামকরণ হয়। কিন্তু,পরে রাজা চন্দ্রকেতুর নামানুসারে গ্রামের নাম হয়েছে কেতুগ্রাম। ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ করেন এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত জাগ্রত দেবী।
বহুলা মন্দিরে দেবীর মূর্তিটি কালো পাথরের তৈরি। মুখ বাদে দেবীর সর্বাঙ্গ বস্ত্র দিয়ে ঢাকা। ত্রিনয়নী ও চতুর্ভুজা দুর্গার রূপে দেবী মূর্তি নির্মিত। দেবীর পাশে রয়েছে কষ্টিপাথরে তৈরি আট হাতের গণেশ। ভক্তদের বিশ্বাস করেন,কেতুগ্রামে দেবী বহুলা স্বামী পুত্র পরিবার নিয়ে অবস্থান করেন।
প্রতিদিন দেবী অন্নভোগ গ্রহণ করেন।তবে দুর্গাপুজোর মহানবমীতে হয় মহাভোগ এবং বিশেষ পুজোর আয়োজন। দোলের সময় বিশাল উৎসব এক সপ্তাহ ধরে পালিত । শিবরাত্রি ও অন্যান্য পূজা হয় এই মন্দিরে। দেবী বহুলার মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটু পুকুর। দেবীর অলৌকিক ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস করেন গ্রামবাসী। এমনকি দূর দূরান্ত থেকে দেবীর কৃপা লাভের আশায় নিত্য ভীড় জমায় ভক্তেরা। ঐশ্বরিক ক্ষমতার বলে মানুষের বিশ্বাস পাশের পুকুরটিতে স্নান করলে রোগ ভোগ হরণ হয়।