Kolkata : তিলোত্তমার বুকেই গড়ে উঠেছিল ‘দ্বিতীয় কলকাতা ‘ যা আজ বিলুপ্তির পথে, জেনে নিন সেই অধরা ইতিহাস

নেহা চক্রবর্ত্তী, কলকাতা : এখনও তিলোত্তমা (Kolkata) বহু রাস্তা, অলি গলি,বহু এলাকা , ইট কাঠ পাথর ঐতিহ্যের (Heritage) ধ্বজা বহন করে চলেছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা মানুষের অগোচরে থেকে ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলা চলে। পড়ে থাকে শুধুই নাম। ঐতিহ্যকে মনে রাখার জন্য খানিক রক্ষণাবেক্ষণ বা তদারকির করার ব্যবস্থাও করা হয়। আসুন আজ জেনে নেওয়া যাক কলকাতার বুকে এমনই প্রাচীন ২৪২ বছর আগে এক ‘দ্বিতীয় কলকাতা’ তৈরির পরিকল্পনা। যা অধরা থাকলেও বেশ চর্চিত এক ইতিহাস।

kolkata 20191003160018

বাংলায় চিনা উপনিবেশ স্থাপনের জন্য চেষ্টা হয়েছিল অনেক। আঠারোর শতকে ইন্দো- চিন বাণিজ্য পথে চৈনিক নাবিকরা কলকাতায় বসতি স্থাপন করেন। ততদিনে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আফিমের ব্যবসাতেও বেশ নিজের পাকা পোক্ত জায়গা করে ফেলেছেন। এবার আসল কথা হল চিন থেকে এমন জাহাজ তখন বেশ মাঝেমাঝেই আসতো কলকাতার বন্দরগুলিতে। কিন্তু জাহাজ থেকে যাঁরা নামতেন তাদের মধ্যে অনেকেই থেকে যেতেন তিলোত্তমায়। তেমনই কলকাতার অদূরে খানিকটা পরিত্যক্ত জমি দেখে সেখানেই থেকে গেলেন টং অছি। আর তখন থেকেই শুরু হল ভারতে চিনা উপনিবেশ তৈরির প্রারম্ভকাল।

 

সময়টা ১৭৭৮ সাল। অছি এখানে থেকে গেলেও টাকা পয়সা বিশেষ সঙ্গে আনেননি বলা চলে। যদিও অছির উপর সদয় হয়ে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁকে ৫৬০ বিঘা ফসলি জমি দানই করেছিলেন। সেখানে চাষাবাসের প্রস্তুতি করলেন অছি সাহেব নিজেই। কারণ তিনি ঠিক করে ফেলেছেন, এখানেই তৈরি করবেন চিনির কল। যেমন বলা তেমন কাজ। কিন্তু বিপদ হল অন্য জায়গায়। চাষের খবর শুনে বর্ধমানের মহারাজা ছুটে এলেন। দাবি করলেন এই জমি তাঁর। অবশেষে ঠিক হল অছি সাহেব বার্ষিক খাজনার ভিত্তিতে জায়গাটির মালিকানা ভোগ করবেন । সাহেব রাজি মহারাজও রাজি। তবে শুরুটা ভালো হলেও বেশিদিন ব্যবসা টেকানো দায় হল অছি সাহেবের। ঈর্ষার বশে সাহেবকে ব্যবসার পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা শুরু করলেন চিন থেকে আগত অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।কিন্তু তাঁরা তো আর জানতেন না সাহেবের মাস্টার প্ল্যান। তিনি চেয়েছিলেন ইংরেজদের টেক্কা দিয়ে কলকাতার মতোই আরেক শহর তৈরি করতে। এক চীনাদের উপনিবেশ তৈরি করতে। কিন্তু হল উল্টোই। স্বজাতিই তাঁর শত্রু হয়ে উঠল । শেষ অবধি অছি সাহেব বিরক্ত হয়ে কোম্পানির হস্তক্ষেপ দাবি করলেন।

১৭৮১ সালে কোম্পানি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘোষণা করল, তারা এই চিনা উপনগরী তৈরির পরিকল্পনাকে যথাযথ উৎসাহ দিতে চায়। সুতরাং যাঁরা এই পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করবেন, তাঁরা অবশ্যই শাস্তি পাবেন। এর প্রত্যুত্তোরে খুশি হয়ে কোম্পানিকে ধন্যবাদ দিয়ে চিঠিও লিখেছিলেন টং অছি। তবে সেগুরে বালি। ততদিনে অনেক শ্রমিকই তাঁর কারখানা ছেড়ে চলে গেছেন কলকাতা শহরে। সেখানে ধর্মতলার কাছে গড়ে ওঠা নতুন ব্যবসার জায়গায় কাজ করছেন তারা। যে জায়গার নাম কসাই তলা। তাই বলা চলে অধরাই রইলো চিনা উপনিবেশ।

উল্লেখ্য,এর কিছুদিনের মধ্যেই মারা গেলেন টং অছি। তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে উঠলো নিলামেও। শুধু থেকে গেল অছি সাহেবের সমাধি আর উপনিবেশ তৈরির অধরা অসম্পূর্ণ ইচ্ছেগুলো। এরপর কাসাইতলা থেকে সরতে সরতে চিনারা উঠে এল মধ্য কলকাতার টেরিটি বাজারে। পরবর্তীকালে কলকাতা শহরের বুকেই তৈরি হয়েছে চিনাদের নিজস্ব এক পাড়াও। একসময় প্রায় ২০ হাজার চিনা নাগরিকের বাসস্থান ছিল এই জায়গাটিতে। তবে বছরের পর বছর ধরে এই জনসংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে।যদিও এখনও কিছু মানুষ তাঁদের পুরনো সংস্কৃতি নিয়ে এই জায়গায় স্বতন্ত্রভাবে বসবাস করেন। প্রতি রবিবার ভোজন রসিকরা এই টেরিটি বাজারের অন্দরে প্রাতঃরাশ সারতে যান। চিনা খাবারে ভরপুর হয়ে ওঠে এই এলাকা।

 

 




Back to top button