ইস্টবেঙ্গলের জন্মের পিছনেও মোহনবাগান, ঘটি-বাঙাল তরজা আজও বহাল
ইস্টবেঙ্গলের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ঘটি-বাঙাল তরজা। ওপার বাংলা থেকে এ বাংলায় আসা মানুষেরা হয়ে ওঠেন বাঙাল। এ বাংলায় শুরু থেকেই বসবাসকারী বাসিন্দারা হয়ে যান ঘটি। আর মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ থাকা মানে ঘটি-বাঙালের জেগে ওঠা।

শুভঙ্কর, কলকাতা: সালটা ১৯২১, ৮ই আগস্ট কোচবিহার কাপ। প্রথমবার মুখোমুখি মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল। শোনা যায় ম্যাচটি ড্র হয়। তখন অবশ্য এত উন্মাদনা বা ঘটি-বাঙাল ব্যাপার ছিল না। সবে বছরখানেক হয়েছে ইস্টবেঙ্গল দল এসেছে। মোহনবাগান তো কবে থেকেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই নিত্যান্ত আরও পাঁচটা অন্য দলের সঙ্গে খেলা হিসেবেই দেখে মোহনবাগানরা। তবে ইতিহাসের পাতায় ওটাই প্রথম কলকাতার ডার্বি ম্যাচ।
ইস্টবেঙ্গল ধীরে ধীরে কলকাতার ময়দানে নিজের নাম ছড়াতে শুরু করলে আক্ষরিক অর্থে জনসাধারণের মধ্যে ঘটি-বাঙাল তরজা শুরু হয়। তবে ইস্টবেঙ্গলের জন্ম এই তরজাকে কেন্দ্র করেই। এর পিছনেও মোহনবাগান জড়িয়ে রয়েছে। সবাই জানে ১৯২০ সালে ইস্টবেঙ্গলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেই বছরই কোচবিহার কাপে ফাইনালে মুখোমুখি হয় মোহনবাগান এবং জোড়াবাগান। কাপ আসে সবুজ-মেরুন শিবিরে। জোড়াবাগান ম্যাচ হারায় সব রাগ গিয়ে পড়ে দুই ‘বাঙাল’ ফুটবলারদের ওপর। যার ফলে সেই সময় জোড়াবাগানের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পূর্ববঙ্গের বাসিন্দা সুরেশ চৌধুরী খোঁচে লাল হয়ে যান। সিদ্ধান্ত নেন ‘ঘটি’দের ‘সবক’ শেখাতে নতুন দল তৈরি করবেন। জন্ম হয় ইস্টবেঙ্গলের। এরপর দেশভাগ। পূর্ববঙ্গের প্রচুর মানুষের চলে আসা। ভিটে-মাটিহারা উদ্বাস্তু মানুষগুলো কোথাও এই ফুটবল দলের সঙ্গে নিজেদের নাড়ীর টান বুঝতে পারে। জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে ইস্টবেঙ্গলের। বাকিটা ইতিহাস।
ইস্টবেঙ্গলের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ঘটি- বাঙাল তরজা। ওপার বাংলা থেকে এ বাংলায় আসা মানুষেরা হয়ে ওঠেন বাঙাল। এ বাংলায় শুরু থেকেই বসবাসকারী বাসিন্দারা হয়ে যান ঘটি। আর মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ থাকা মানে ঘটি-বাঙালের জেগে ওঠা। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা সেই নাড়ীর টান আজও অনুভব করেন দুই দলের সমর্থকরা। আগে মোহনবাগান জিতলে বাজার ছেয়ে যেত চিংড়িতে। ইস্টবেঙ্গল সমর্থক মোহনবাগান বন্ধু সমর্থককে কিনে দিতেন সেই মাছ। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গল জিতলে বাজার দখল নিত ইলিশ। তখন মোহনবাগান সমর্থক ইলিশ কিনে দিতেন ইস্ট বেঙ্গল সমর্থককে।
আজকে সেই দিন নেই। বিভিন্ন সংস্কৃতির ধারক হয়ে উঠেছে কলকাতা তথা বাংলা। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের ঐতিহ্য ধাক্কা খেয়েছে। সমর্থকরা খেলার মাঠেই প্রকাশ্যেই হাতা-হাতিতে জড়িয়েছে। তবে আজও এই দুই প্রধানের ম্যাচ হলে জেগে ওঠে বাঙালি। হোক না তা ঘটি কিংবা বাঙাল। পরিশেষে শেষে সবাই বাঙালি। আজ ডুরান্ড কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে তারা। এখনও পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে মোহনবাগান। ফের জেগে উঠেছে ঘটি- বাঙাল।