‘বুড়িমার বাজি’র সৃষ্টিকর্তা অন্নপূর্ণা দাস
বাজির নাম শুনলেই সবার প্রথমে যেই নামটি মনে আসত, সেটি হল ‘বুড়িমার বাজি’। কিন্তু আপনারা কি জানেন এই বুড়িমা কে এবং কেন তিনি এত বিখ্যাত? আসুন জেনে নিন সেই ইতিহাস

হাওড়া: কালীপুজো মানেই আলোয়ে ভরা শহর! দীপাবলি মানেই পাড়ায় পাড়ায় বাজির শব্দ। বছরের এই একটা দিন, ক্ষুদে থেকে বৃদ্ধ, অধিকাংশ লোকই আনন্দে মেতে ওঠে বাজির শব্দে। এই উৎসবের সাথে বাঙ্গালীদের জড়িয়ে রয়েছে আলাদা একটা আবেগ। তবে কালীপুজো হোক কি দীপাবলি, কোথাও না কোথাও সবকিছুর সঙ্গে জুড়ে থাকে একটি গভীর ও দুর্দান্ত ইতিহাস। মাঝেমধ্যেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসে বনেদি বাড়ি বা বারোয়ারি কালীপুজোর গল্প। তেমনি দীপাবলির বাজির সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে একটি আলাদা গল্প।
‘শব্দ বাজি’ এখন নিষিদ্ধ হলেও কয়েক বছর আগে, দীপাবলীর সময়, পাড়ায় পাড়ায় এর ব্যবহার হতো প্রচুর। চকলেট বোম, দোদোমা, তুবড়ি, কালিপটকা, ইত্যাদি ফাটানোতে ছিল না কোন বাধা। আর তখন বাজির নাম শুনলেই সবার প্রথমে যেই নামটি মনে আসত, সেটি হল ‘বুড়িমার বাজি’। কিন্তু আপনারা কি জানেন এই বুড়িমা কে এবং কেন তিনি এত বিখ্যাত বুড়িমা-র আসল নাম অন্নপূর্ণা দাস। বাংলাদেশের ফরিদপুরে বুড়িমার আদি বাড়ি। ১৯৪৮ সালে হয়েছিল দেশভাগ। এরপর স্বামী ও সন্তান নিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার ধলদিঘির সরকারি ক্যাম্পে থাকতেন তিনি। তাঁর স্বামী সুরেন্দ্রনাথ দাসের মৃত্যুর পর সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাবার জন্য কখনো শাক-সবজি বিক্রি করতেন বা কখনো ঘটি-বাটি বিক্রি করতেন। এরপর একটি সময় আসে যখন তিনি ধলদিঘি থেকে চলে যান গঙ্গারামপুর। এখানে সনাতন মন্ডল নামে এক ব্যক্তি তাঁকে শিখিয়েছিলেন বিড়ি বাধার কাজ এবং এরপর তিনি খুলে বসলেন একটি বিড়ির কারখানা।
বুড়িমার মেয়ের বিয়ে হয় হুগলি জেলার বেলুড়ে। সেখানে তিনি আলতা-সিদুর বানানোর কাজ শিখলেন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হল অন্নপূর্ণা আলতা-সিঁদুর। হঠাৎ একবার কালীপুজোয় তিনি ঠিক করলেন বাজির ব্যবসা করবেন। তিনি দোকানও তৈরি করে ফেলেছিলেন, কিন্তু পুলিশের অনুমতি না থাকায় ভেঙে দেওয়া হয়েছিল তা অবশেষে। কিন্তু তিনি হার মানেননি। অনুমতি জোগাড় করলেন তিনি। কিন্তু দেখলেন বাজি কিনে বেচায় খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। তাই তিনি নিজেই বাজি বানানো শিখলেন বাঁকুড়ার আকবর আলীর থেকে এবং এরপরই শুরু হয় বুড়িমার সাফল্যের সফর। ১৯৯৫ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এখন তাঁর নাতিরা ব্যবসার দেখাশোনা করেন।