Mohan Oberoi- সামান্য হোটেল স্টাফ থেকে ৭ হাজার কোটির কোম্পানির মালিক, কী করে হল স্বপ্ন পূরণ
নেহা চক্রবর্তী, কলকাতা- মাসের শেষে পারিশ্রমিক (Salary) ৪০টাকা। ভাগ্যের চাকা (Fortune Wheel) ঘোরার সাথে ৭২০০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক তিনি। এ যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের (Aladin’s Chiraag) গল্প। যেখানে প্রদীপ ঘষলেই ‘জিন’ এসে সোনা, সম্পত্তি, অর্থ দিয়ে যায়। কিন্তু এটা কোনো কল্পকথা নয়। বাস্তবেই এই ব্যক্তি আছেন এবং তাঁর বসবাস খোদ ভারতেই। তাই ৪০-৭২০০ কোটি এর অঙ্কটা মেলাতে হলে প্রথম থেকেই জানতে হবে তাঁর জীবনের গল্পটি (Life Story)।
সালটা ১৮৯৮ সালের ১৫ই আগস্ট। পাকিস্তানের ডাউন গ্রামে দরিদ্র পরিবারে এক ফুটফুটে সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় মোহন (Mohan)। জন্মের ৬মাস পরই তার বাবা মারা যায়। ফলত মাথার উপর ছাদ সরে যায় তার। একদিকে যে বয়সে সকলের হাসি ও খেলায় দিন কাটে, অপরদিকে প্রতিনিয়ত মোহনের জীবনে নেমে আসে সংঘর্ষের ছায়া। গ্রামের স্কুলে পড়াশুনা শেষের পর চলে যায় সে রাওয়ালপিন্ডিতে। সেখান থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করলেও কোনো চাকরি জোটেনা। ভাগ্যের পরিহাস তাকে ধাওয়া করে চলে সারাক্ষণ। দিন গড়িয়ে চলে।
অবশেষে ১৯২২ সালে খালি পায়ে হেঁটেই মোহন পাড়ি দেয় সিমলায়। লোকমুখে সে শুনেছিলো সিমলায় নাকি অনেক বিদেশী পর্যটক আসে। ফলত একটা কাজের আশায় সেখানেই চলে যায় সে। কিছুদিন ট্রেন থেকে পর্যটকদের ব্যাগ হোটেল নিয়ে যাওয়ার কাজ করতো। সেই সূত্রে সে পৌঁছয় সিমলার সিসিল হোটেলে। যেখান থেকেই মোহনের জীবনের চাকা ঘুরে যায়।
সিসিলি হোটেলে ৪০টাকার চাকরি পেলো সে। কাজ ছিল ভোর ৪টের সময় উঠে হোটেলে আগত অতিথি দের ঘরে গরম জল পৌঁছে দিতে হবে। ভোর তিনটে থেকেই কাজে লেগে পড়তো সে। একসময় সিসিলি হোটেলের ব্রিটিশ ম্যানেজার দীর্ঘ ৬ মাসের জন্য ব্রিটেনে যান। তখন থেকে মোহন হোটেলের সব কাজ সামলাতে থাকে। তার কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও তত্ত্বাবধানে হোটেলের আয় হয়ে ওঠে দ্বিগুণ। ক্রমেই সিসিলি হোটেলের নাম ছড়িয়ে পড়ে সিমলায়। ব্রিটেন থেকে ফিরে এসে হোটেলের এরূপ উন্নতি দেখে খুশি হয়ে মোহনের মাইনে তিনি আরও ১০টাকা বাড়িয়ে দেন। তার সঙ্গে তিনি বানিয়ে দেন একটি কোয়াটার যেখানে মোহন থাকবে। প্রায় কয়েক বছর পর মোহনকে ২৫০০০ টাকায় সিসিলি হোটেল বিক্রি করে ব্রিটিশ ম্যানেজার পাকাপাকি ভাবে ভারত ছেড়ে ব্রিটেন চলে যান।
কোনোভাবে টাকা জোগাড় করে, কাজ করে, কখনো নিজের স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে মোহন সব টাকা শোধ করে দেয়। অবশেষে ১৯৩৪ সালের ১৪ই আগস্ট ভারতের হোটেলের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। সিসিলি হোটেলের মালিকানা বদলে যায়, নতুন মালিক হয়ে যান মোহন। তিনি হোটেলের নাম বদলে নতুন নাম রাখেন “দ্য ওবেরয় সিসিলি”। হ্যাঁ ঠিকই অনুমান! এতক্ষন ধরে কথা হচ্ছিল ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম হোটেল গ্রুপ ওবেরয়ের প্রতিষ্ঠাতা মোহন সিং ওবেরয়কে নিয়েই। শুধু ভারতেই নয় নেপাল, মিশর, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া সর্বত্রই তার হোটেল। হোটেলের নেট ভ্যালু ৭২০০ কোটি টাকা। যার বছরের টার্ন ওভার ১৫০০ কোটি টাকা। শুধু মাত্র মোহন সিং ওবেরয়ই জানতেন ৪০টাকাকে কি করে ৭২০০ কোটি টাকায় পরিণত করা যায়।
আরও পড়ুন…..Bengali cuisine restaurant: জেনে নিন কলকাতার বুকে বাঙালি খাবারের সেরা ঠিকানা
জীবদ্দশায় একাধিক পুরস্কার পান মোহন সিং ওবেরয়। যথাক্রমে ১৯৪৩ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকার দ্বারা রায়বাহাদুর উপাধি , আমেরিকান সোসাইটি অফ ট্রাভেল এজেন্টসের দ্বারা ‘হল অফ ফ্রেম’-এ নাম ,১৯৭৮ সালে ‘ম্যান অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ পুরষ্কার তাছাড়াও ২০০০ সালে মিলেনিয়াম অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। ২০০১ সালে মৃত্যুর ঠিক এক বছর আগে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হন মোহন সিং ওবেরয়। অবশেষে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় বড় হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা মোহন সিং ওবেরয়ের ২০০২ সালের ৩রা মে জীবনাবসান ঘটে। নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণ হলে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় তার উজ্জীবিত উদাহরণ হলেন মোহন সিং ওবেরয়।