Rabindranath Tagore : রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো থেকেছিলেন? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কবিগুরুর স্মৃতির বাড়ির মালিক দুই বাঙালি

বাড়িটিতে কি সত্যিই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকেছিলেন? প্রায় ১১০ বছর আগের কথা। এখানেই নোবেলজয়ী ‘গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। ওই বাড়িতে বসেই কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস-সহ একাধিক খ্যাতনামাকে চিঠিও লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। এই বাড়ি থেকেই তিনি পড়াতে যেতেন হার্ভার্ডে। এখান থেকেই যেতেন আইওয়া-শিকাগোতেও। রবীন্দ্র-স্মৃতিবিজরিত এই বাড়ির মালিক এখন কাজল মুখোপাধ্যায় এবং মৌসুমী দত্ত রায় নামক দুই বাঙালি। সূত্রের খবর, এই দুই বঙ্গসত্নান সম্প্রতি আর্বানা-শ্যাম্পেনে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ওই বাড়িটি কিনেছেন। নিজামউদ্দিনের উপন্যাস অবলম্বনে সৃজিত মুখোপাধ্যায়য়ের ওয়েবসিরিজের রেস্তোরাঁয় রবীন্দ্র কখনো খেতে না গেলেও এই বাড়িতে কিন্তু সত্যিই থেকেছিলেন কবিগুরু( Rabindranath Tagore )।
ইংল্যান্ডের পুরোনো বাড়ির আদলে তৈরি এই দোতলা বাড়ির রঙ সাদা। কাজল-মৌসুমী এই প্রসঙ্গে জানান, বাড়ির ভিতরটাও দারুণ সুন্দর। তাদের বর্ণায় এই বাড়িএ সাথে, ‘একটা পুরনো পুরনো ব্যাপার মিশে। নীচে তিনটি আর উপরে তিনটি করে ঘর রয়েছে। রবীন্দ্র-সময়কার অনেক জিনিসপত্রও আছে এখানে। রয়েছে তার ব্যবহার করা বাথটবও।’ মৌসুমীর কথায়, ‘আফগানিস্তানের ঘটনার পর সে দিন জার্মান চ্যান্সেলরকে দেখলাম, চিত্ত যেথা ভয়শূন্য- আবৃত্তি করছেন। মনে হল, দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ এখনও কত প্রাসঙ্গিক এই পশ্চিমে! গোটা বিশ্বে। অথচ বাঙালি তার মূল্যায়ন করতে পারেনি এখনও।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি, পুর্ব-পশ্চিমের সেই যোগসূত্রও এখন ছিন্ন। রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে পুরনো সেই যোগসূত্র ফের জুড়তে চাই আমরা। তাই বাড়িটা নিয়েছি।’
১৯০৬ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের আর্বানায় ‘অ্যাগ্রিলাকালচার ইকনোমিক্স’ নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তখন রবীন্দ্রনাথও সেখানে গিয়েছিলেন কয়েক দিনের জন্য। এরপর ১৯১২ সালে তিনি আবার আর্বানায় যান। থাকেন টানা ছয় মাস; ১৯১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯১২ সালের ২৭ অক্টোবর নিউইয়র্কে নামেন কবি। সেখান থেকে ট্রেনে যান শিকাগো। তারপর ঘোড়ার গাড়িতে পৌঁছান আর্বানা। ৭ নভেম্বর, ১৯১২। রবীন্দ্রনাথ তার দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে একটি চিঠিতে লিখছেন, ‘ভাই জ্যোতিদাদা, আমরা আমেরিকায় এসে পৌঁছেছি। সে কারণে তোমার চিঠি আসতে দেরি হয়েছে। আমরা একটা বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। বৌমা সেই বাড়ির কর্ত্রী। তাকেই নিজেই রান্না করতে হচ্ছে।’ চিঠির উপরে ঠিকানা লেখা – ‘৫০৮ হাই স্ট্রিট, আর্বানা, ইলিনয়, ইউএসএ’। এই বাড়িতেই টানা ছ’মাস ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এখন বাড়িটি দুই বাঙালির। ১৯০৩ সালে তৈরি আর্বানার বাড়িটি কিছু দিন আগে পর্যন্ত ছিল এক মার্কিন ভদ্রলোকের। নাম স্ট্যান শার্লো। বয়স সত্তরের উপরে। বহু চেষ্টার পর কাজল-মৌসুমী তাকে রাজি করাতে পেরেছেন ওই বাড়ি বিক্রি করতে।
সিলেক্টেড লের্টাস অব রবীন্দ্রনাথ টেগোর
নিউ ইয়র্ক থেকে কাজল বলছিলেন, ‘বৃদ্ধ প্রথমে রাজি ছিলেন না। তিনি রবীন্দ্রনাথের গুণমুগ্ধ হলেও বাড়িটির ঐতিহ্যের ব্যাপারে খুব যে যত্নশীল ছিলেন, তেমন নয়। আমরা অনেক দিন ধরেই অনুরোধ করছিলাম। শেষে শার্লোর ছেলে তার বাবাকে রাজি করান। বোঝান, বাঙালিদের কাছে এ বাড়ি থাকলে ইতিহাসে তিনিও থেকে যাবেন। অবশেষে আমরা বাড়িটা হাতে পাই।’ কত দামে কিনলেন কবিগুরুর বাড়ি? কাজলের জবাব, ‘দামটা বিষয় নয়। এই বাড়ি দুর্মূল্য।’ আর্বানার এই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের বসবাসের নানা স্মৃতির উল্লেখ পাওয়া যায় তার চিঠিপত্র থেকে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ‘সিলেক্টেড লের্টাস অব রবীন্দ্রনাথ টেগোর’-এ এই বাড়ি এবং আর্বানার একাধিক বার উল্লেখ রয়েছে। যদিও কৃষ্ণা দত্ত এবং অ্যান্ড্রু রবিনসন সম্পাদিত সে বইয়ের মুদ্রিত সংস্করণ এখন আর পাওয়া যায় না। কাজল-মৌসুমীর কাছে একটা সংস্করণ রয়েছে।
আর্বানাতে একটা টেগোর ফেস্টিভ্যাল হয় প্রতি বছর
মৌসুমী বললেন, ‘আর্বানাতে একটা টেগোর ফেস্টিভ্যাল হয় প্রতি বছর। চ্যানিংমারে ফাউন্ডেশন আর ইউনিটারিয়ান ইউনিভার্সাল চার্চ তার উদ্যোক্তা। আমরা প্রতি বছর যেতাম। তার আগেই ওই বই থেকে বাড়িটা সম্পর্কে জেনেছিলাম। গেলেই বাড়িটা দেখতাম হাঁ করে। এই বাড়ির সঙ্গে এত ইতিহাস জড়িয়ে! নোবেলজয়ী গীতাঞ্জলি এখানে বসে অনূদিত হয়েছে। একটা শিহরণ জাগত। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা পরিসংখ্যানবিদ অনিল বেরা আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ওঁকে বলি বাড়িটা কিনে নিতে। তবে শেষমেশ ওঁর উদ্যোগেই বাড়িটা আমরা পেয়েছি।’