Birbhum: মমতার ক্ষতিপূরণের আশ্বাসেও হচ্ছে না কাজ, বীরভূমের কয়লা প্রকল্পের বিরুদ্ধে এককাট্টা আদিবাসীরা
রাখী পোদ্দার, কলকাতা: ভারতের অন্যতম বড়ো কয়লার খনি (coal mine) রয়েছে বীরভূম (birbhum) জেলার দেউচা অঞ্চলে। বীরভূমের মহম্মদ বাজারের দেউচা পাঁচামিতে মাটির নিচে বিপুল পরিমাণ কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। আর তা থেকে ধারণা করা যায় শুধুমাত্র জেলা কিংবা রাজ্য নয়, সেখানকার কয়লা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হবে এক লক্ষেরও বেশি মানুষের। আর সেই উদ্দেশ্যই বাস্তবায়নের জন্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “সিঙ্গুরের মতো জেদাজেদি হবে না।সিঙ্গুরে যেভাবে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছিল, আমরা সেভাবে করব না। আমরা প্রথমে নিজেদের জমি দিয়ে শুরু করব। রাজ্য সরকার পুনর্বাসনের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, জমি দিলে দেওয়া হবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও বাড়ি।” এরপরও যদি কারও কোনও প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে তা শোনা হবে। প্রকল্প রূপায়িত হলে বিদ্যুতের দাম কমে যাবে। রাজ্যের মানুষের সুবিধা হবে। ইতিমধ্যেই জমিদাতাদের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার ত্রাণ এবং পুনর্বাসন প্যাকেজও তৈরি করে ফেলেছে সরকার। এই ঘোষণার পরেও কিন্তু দেউচা নিয়ে সংশয় কাটেনি সেখানকার আদিবাসীদের( advivasi) মনে।
বৃহস্পতিবার( thursday) সেই ছবিটাই যেন প্রকট হয়ে উঠল খনিসংলগ্ন এলাকায়। সূত্রের খবর, এদিন আদিবাসী নেতা মাঝি হারামের ডাকে জমায়েত হয় প্রায় আট থেকে দশটি গ্ৰামের গ্ৰামবাসী। সরকার যে প্রকল্প ঘোষণা করেছে তাতে বিশেষ ভরসা করে উঠতে পারছে না তাঁরা। গ্ৰামবাসীদের অভিযোগ সরকার কোনো রকম কোনো আলোচনা না করেই এই প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেন। এই প্রকল্প শুরু হলে দেউচার ‘ভূমিপুত্র’-দের বিপদের মুখে পড়তে হবে বলে অভিযোগ তাদের। দেউচার এক আদিবাসীর কথায়, “সরকার আমাদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করেনি। তার আগেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। আমরা জমি দিতে রাজি নয়। কয়লাপ্রকল্প( coal project) আমরা চাই না। আমরা আমাদের জমি চাই। এখন বাড়িঘর চলে গেলে আমরা কোথায় যাব!”
আরও পড়ুন- টলিউডের সুন্দরী হয়েও প্রেমভাগ্য খারাপ! প্রেমের যুগে আজও সিঙ্গেল এই ৭ অভিনেত্রী
এছাড়াও তাদের অভিযোগ যে প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে তা তাদের বিশেষ পছন্দ হয়নি। টিউবয়েলের জন্য ৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া অত্যন্ত কম। স্টেটল্যান্ডে বাড়ি রয়েছে যাঁদের, তাঁদের আশঙ্কা আরও বেশি। কিছুদিন আগেই, দেউচা পাচামি নিয়ে সিউড়ির রবীন্দ্রসদনে স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রশাসনিক কর্তারা। সেই বৈঠকে এই প্রকল্প সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই, সেই প্রকল্প গ্ৰামবাসীদের বোঝাতে বিশাল বাইক মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস( tmc)।
আরও পড়ুন- এক নজরে দেখে নিন, ডিসেম্বরে ব্যাঙ্কের ছুটির তালিকা
এদিন বৃহস্পতিবার জমায়েতের ঘটনায় বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন। সিঙ্গুরে তখন তিনি বলেছিলেন, জমি ছাড়া যাবে না। সেখানে আজ যখন দেউচা পাচামি প্রকল্পের কথা উঠছে তখন আদিবাসীদের বোঝাতে ব্যর্থ সরকার। সেদিক থেকে প্রশাসনের আরও বেশি ভাবনাচিন্তা করা উচিত।” দেউচা পাচামি প্রকল্পে ঘোষিত সরকারি প্যাকেজে বলা হয়েছে, যাঁদের বাড়ি সহ জমি রয়েছে, তাঁরা পাবেন ১০ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সুবিধা দিতে আরও ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া বাড়ি বা জমি হারানো পরিবার পিছু একজনকে জুনিয়র পুলিশ কনস্টেবল পদমর্যাদার চাকরি দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে এই ত্রাণ পুনর্বাসন প্যাকেজের মোট আর্থিক মূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এত কিছু ঘোষণার পরও আদৌও এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে এদিন এলাকার আদিবাসী মানুষদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায়।