সকলেরই চেনা কলকাতার ‘আলিমুদ্দিন স্ট্রিট’, কিন্তু যার নামে রাস্তা সেই সৈয়দ আলিমুদ্দিন আজও অজানা
কলকাতায় একাধিক এমন রাস্তা রয়েছে যেটা নস্টালজিয়া থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক কিছু ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে। এমনই একটি রাস্তা হল ৩২ নং আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কলকাতা। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ বাসীর কাছে এই নামটা বেশ পরিচিত। কিন্তু ঠিক কি কারণে এতো পরিচিত এই রাস্তা সেটা হয়তো সকলের জানা নেই! আজ সেই গল্পই বলবো আপনাদের।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের যেমন অনেক যোদ্ধাই আমাদের মনের মণিকোঠায় চিরস্থায়ী তেমন অনেকেই এমন আছেন যাদের কথা কেউই সেরকম মনে রাখেনি। তেমনি একজন বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী হলেন স্যার সৈয়দ আলিমুদ্দিন ওরফে মাস্টার সাহেব। তাঁর নামেই শহরের বুকে রয়েছে একটি বিখ্যাত রাস্তা। হ্যাঁ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কথাই বলা হচ্ছে। যেই রাস্তার খবর প্রায়ই আসে। কারণ এখান থেকেই দীর্ঘ ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করেছে সিপিআইএম। কিন্তু স্যার সৈয়দ অলিমুদ্দিনের কথা কেউই মনে রাখেনি।
স্যার সৈয়দ আহমেদ ওরফে মাস্টার সাহেব শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামই করেননি, প্রত্যক্ষ ভাবে চরমপন্থি সশস্ত্র বিপ্লবে নিজেকে সামিল করেছেন। বিপ্লবী হেমচন্দ্রের মত চরমপন্থি স্বাধীনতা সংগ্রামীর সতীর্থ ছিলেন স্যার সৈয়দ। প্রথম থেকেই বিপ্লবী মনোভাবাপন্ন এই নেতা কলেজ পাশ করেই স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে যোগ দেন। বঙ্গভঙ্গের সময় হেমচন্দ্র মুক্তিসঙ্ঘ নামে একটি চরমপন্থী দল গঠন করে। সেখানেই নাম লেখান মাস্টার সাহেব।
একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং শিক্ষক হওয়ায় ব্রিটিশরা তাকে বিপ্লবী বলে সন্দেহই করতো না। আর এর পুরোদমে ফায়দা তুলতেন সৈয়দ আলিমুদ্দিন। মুক্তিসংঘের বিপ্লবিদের প্রতিনিয়ত সাহায্য করে যেতেন। স্যার সৈয়দের জন্ম ১৮৮৪ সালে ঢাকায়। সেখান থেকে তিনি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন ও পরে কলেজে ভর্তি হন। বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের সাথে তিনি কিছুদিন একসাথে পড়েছেন এবং পরে হেমচন্দ্র অন্য জায়গায় পড়তে চলে যান।
টাকার অভাবে এফ এ পরীক্ষা দিতে পারেন নি তবু ব্যক্তিগত উদ্যোগে পড়া চালিয়ে যান। একটি চাকরিতে যোগ দেন। আর সেখান থেকেই তিনি মাস্টার সাহেব। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই মহান বিস্মৃতপ্রায় যোদ্ধা সত্যিই কুর্ণিশের দাবিদার। তাই পরবর্তীকালে স্যার সৈয়দ আলিমুদ্দিনের নামেই নামকরণ হয় কলকাতার এই রাস্তার। নাম হয় ‘আলিমুদ্দিন স্ট্রিট’।